ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালে আজকের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মুর্শিদাবাদ খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালে অক্টোবর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন। রাঢ় বাংলার লোকনাট্য ‘আলকাপের’ সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে অংশ নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। তিনি ছিলেন ‘আলকাপ’ দলের ‘ওস্তাদ’ (গুরু)। নাচ-গানের প্রশিক্ষক। নিজে আলকাপের আসরে বসে হ্যাসাগে (পোট্রোম্যাক্স)-র আলোয় দর্শকের সামনে বাঁশের বাঁশি বাজাতেন। নিজের দল নিয়ে ঘুরেছেন সারা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি বিহার-ঝাড়খন্ডেও।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখক সত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। মুর্শিদাবাদের পাশের জেলা বীরভূম। যেখানে লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। একই জলহাওয়া তাদের দুজনকেই প্রাণোন্মাদনা দিয়েছিল। তাই তারাশঙ্কর বলতেন, ‘আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে।’

তার ‘ইন্তি, পিসি ও ঘাটবাবু’, ‘ভালোবাসা ও ডাউনট্রেন’ (দেশ-এ প্রকাশিত প্রথম গল্প), ‘তরঙ্গিনীর চোখ’, ‘জল সাপ ভালোবাসা’, ‘হিজলবিলের রাখালেরা’, ‘রণভূমি’, ‘উড়োপাখির ছায়া’, ‘রক্তের প্রত্যাশা’, ‘মৃত্যুর ঘোড়া’, ‘গোঘ্ন’, ‘রানীরঘাটের বৃত্তান্ত’, ইত্যাদি অসংখ্য ছোটগল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার প্রথম মুদ্রিত উপন্যাস - ‘নীলঘরের নটী’। পর পর প্রকাশিত হয় ‘পিঞ্জর সোহাগিনী’, ‘কিংবদন্তির নায়ক’, ‘হিজলকন্যা’, ‘আশমানতারা’, ‘উত্তর জাহ্নবী’, ‘তৃণভূমি’, ‘প্রেমের প্রথম পাঠ’, ‘বন্যা’, ‘নিশিমৃগয়া’, ‘কামনার সুখদুঃখ’, ‘নিশিলতা’, ‘এক বোন পারুল’, ‘কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি’, ‘নৃশংস’, ‘রোডসাহেব’, ‘জানগুরু’ ইত্যাদি। তার গল্প ও একাধিক গ্রন্থ ভারতের সমস্ত স্বীকৃত ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এমনকি ইংরেজি তো বটেই, বিশ্বের বহু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান ছিল প্রবল। সংবাদপত্রে চাকরি করলেও কোনও মালিকানাগোষ্ঠীর কাছে মাথা নিচু করেন নি। ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাস ছাপা হয় ধারাবাহিকভাবে ‘চতুরঙ্গ’ নামে একটি লিট্‌ল ম্যাগাজিনে। নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে প্রায় একা উন্নত গ্রীবায় ছোট ফ্ল্যাটে জীবনকে কাটিয়ে গেছেন। মাথা উঁচু করে থাকার দর্পী মনোভাবের জন্য তাকে অনেক মনোকষ্ট পেতে হলেও তিনি দমে যান নি। তার পাঠকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল মধুর। তার ব্যবহারে ও আচরণে ছিল পরিশীলিত ভদ্রতা ও আন্তরিকতা।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার এবং ভুয়ালকা পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত। তার ‘অমর্ত্য প্রেমকথা’ বইয়ের জন্য তিনি পেয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত নরসিংহদাস স্মৃতিপুরস্কার। এছাড়া ১৯৭৯ সালে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার, সুশীলা দেবী বিড়লা স্মৃতি পুরস্কার, দিল্লির OUF সংস্থার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুরস্কার, শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি