ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘সূরা লাহাব’-এর ফজিলত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০১, ৪ মে ২০২০ | আপডেট: ১৭:০৯, ৬ মে ২০২০

মাহে রমজানে আমরা বেশি বেশি কোরআন পাঠ করব। চেষ্টা করব অর্থ বুঝে তবেই পাঠ করার। সব সময় কোরআনের সঙ্গে থাকব। কারণ এ মাসেই আল্লাহ মহা পবিত্র আল কোরআন নাজিল করেছেন। এই কোরআন মানবজাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি বা পথপ্রদর্শক। 

আজ আমরা পবিত্র কোরআন শরীফের ১১১ নম্বর সূরা ‘সূরা লাহাব’ পাঠ করব। সেই সঙ্গে জেনেনিব এর ফজিলত সম্পর্কে। 

১১১. সূরা লাহাব
পারা ৩০, আয়াত ৫, রুকু ১ (মাক্কী)

বাংলা উচ্চারণ 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিউ ওয়াতাব্ব। মা আগনা আ’নহুমালুহু ওয়ামা কাসাব। সাইয়াসলা নারান যাতালাহাব। ওয়ামরা আতুহু হাম্মা লাতাল হাতাব। ফি যিদিহা হাবলুম্মিম মাসাদ।

মর্মবাণী
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।
ধ্বংস হবে আবু লাহাবের দুই হাত। ধ্বংস হবে সে নিজেও। তার ধনসম্পত্তি ও উপার্জন কোন কাজে আসবে? সময় হলেই সে লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে। সাথে থাকবে কুচক্রী স্ত্রী। গলায় থাকবে শক্ত পাকানো রশি।

শানে নুযুল 
সহীহ বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (সঃ) বাতহা নামক স্থানে গিয়ে একটি পাহাড়ের উপর আরোহন করলেন এবং উচ্চস্বরে, ‘ইয়া সাবা’হা’হ ইয়া সাবা’হা’ ( অর্থাৎ হে ভোরের বিপদ, হে ভোরের বিপদ) বলে ডাক দিতে শুরু করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যে সমস্ত কুরাইশ নেতা সমাবেত হলো। তখন রাসূল (সঃ) বললেন, ‘যদি আমি তোমাদেরকে বলি যে, সকালে অথবা সন্ধ্যাবেলায় শত্রুরা তোমাদের উপর আক্রমণ চালাবে তবে কি তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করবে?’

তখন সমস্বরে বলে উঠলো, ‘হাঁ হাঁ অবশ্যই বিশ্বাস করবো।’ তখন তিনি তাদেরকে বললেন, ‘শোনো, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তির আগমনের সংবাদ  দিচ্ছি।’ তখন আবু লাহাব একথা শুনে বললো, ‘তোমার সর্বনাশ হোক, এ কথা বলার জন্যই কি তুমি আমাদেরকে সমবেত করেছো?’

তখন আল্লাহ তায়ালা এ সূরাটি নাযিল করেন।

পটভুমি
কুরআনে মাত্র এ একটি জায়গাতেই ইসলামের শত্রুদের কারো নাম নিয়ে তার নিন্দা করা হয়েছে। অথচ মক্কায় এবং হিজরাতের পরে মদীনায়ও এমন অনেক লোক ছিল যারা ইসলাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শত্রুতার ক্ষেত্রে আবু লাহাবের চাইতে কোন অংশে কম ছিল না। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এ ব্যক্তিটির এমনকি বিশেষত্ব ছিল যে কারণে তার নাম নিয়ে নিন্দা করা হয়েছে? একথা বুঝার জন্য সমকালীন আরবের সামাজিক অবস্থা অনুধাবন এবং সেখানে আবু লাহাবের ভূমিকা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

প্রাচীন যুগে যেহেতু সারা আরব দেশের সব জাযগায় অশান্তি, বিশৃংখলা, লুটতরাজ ও রাজনৈতিক অরাজকতা বিরাজ করছিল এবং শত শত বছর থেকে এমন অবস্থা চলছিল যার ফলে কোন ব্যক্তির জন্য তার নিজের বংশ ও রক্তসম্পর্কের আত্মীয়- পরিজনের সহায়তা ছাড়া নিজের ধন প্রাণ ও ইজ্জত- আবরুর হেফাজত করা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিল না। এ জন্য আরবীয় সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার ছিল অত্যন্ত গুরুত্বের অধিকারী। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাকে মহাপাপ মনে করা হতো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে এলেন তখন আরবের ঐ প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রভাবে কুরাইশ গোত্রের অন্যান্য পরিবার ও তাদের সরদাররা তাঁর কঠোর বিরোধিতা করলেও বনী হাশেম ও বনী মুত্তালিব (হাশেমের ভাই মুত্তালিবের সন্তানরা) কেবল তাঁর বিরোধিতা থেকে বিরত থাকেনি বরং প্রকাশ্যে তাঁকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। অথচ তাদের অধিকাংশই তাঁর নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনেনি। কুরাইশের অন্যান্য পরিবারের লোকেরাও রসূলুল্লাহর (সা:) রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনদের এ সমর্থন - সহযোগিতাকে আরবের নৈতিক ঐতিহ্যের যথার্থ অনুসারী মনে করতো। তাই তারা কখনো বনী হাশেম ও বনী মুত্তালিবকে এই বলে ধিক্কার দেয়নি যে, তোমরা একটি ভিন্ন ধর্মের আহবায়কের প্রতি সমর্থন দিয়ে নিজেদের পৈতৃক ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছো। তারা একথা জানতো এবং স্বীকারও করতো যে, নিজেদের পরিবারের একজন সদ্যস্যকে তারা কোনক্রমেই শক্রর হাতে তুলে দিতে পারে না। কুরাইশ তথা সমগ্র আরবের অধিবাসীরাই নিজেদের আত্মীয়ের সাথে সহযোগিতা করাকে একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করতো।

জাহেলী যুগেও আরবের লোকেরা এ নৈতিক আদর্শকে অত্যন্ত মর্যাদার চোখে দেখতো। অথচ শুধু মাত্র একজন লোক ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতায় অন্ধ হয়ে এ আদর্শ ও মূলনীতি লংঘন করে। সে ছিল আবু লাহাব ইবনে আবদুল মুত্তালিব। যিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা। রসূলের (সা:) পিতা এবং এ আবু লাহাব ছিল একই পিতার সন্তান। আরবে চাচাকে বাপের মতই মনে করা হতো। বিশেষ করে যখন ভাতিজার বাবার ইন্তিকাল হয়ে গিয়েছিল তখন আরবীয় সমাজের রীতি অনুযায়ী চাচার কাছে আশা করা হয়েছিল, সে ভাতিজাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসবে। কিন্তু এ ব্যক্তি ইসলাম বৈরিতা ও কুফরী প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে গিয়ে এ সমস্ত আরবীয় ঐতিহ্যকে পদদলিত করেছিল।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি