ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

হলি আর্টিজান হামলার ৩ বছর: দ্রুত বিচারের প্রত্যাশা

প্রকাশিত : ১১:১৫, ১ জুলাই ২০১৯

১ জুলাই। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার বিভীষিকাময় একটি দিন ও রাত। তিন বছর আগে রাজধানী কাঁপানো জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ৩ বছর পূর্ণ হলো আজ সোমবার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই এই হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন নিহত হন। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে গত বছর আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলেও তদন্তকারীদের সন্দেহ ছিল, এই ঘটনার সঙ্গে আরো জঙ্গির সম্পৃক্ততা পাওয়া যেতে পারে।

হামলার দিন অস্ত্রধারী জঙ্গিরা রাতভর রেস্টুরেন্টে আগত সব অতিথি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখে। রাতভর চরম উদ্বেগ ও নাটকীয়তায় পার হওয়ার পর সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সেনা কমান্ডোদের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর মাধ্যমে জিম্মি ঘটনার অবসান হয়। সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। আলোচিত এই ঘটনায় গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

তবে চার্জশিট দাখিলের এক বছর পার হলেও আর কোনো জঙ্গির হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত থাকার তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হলি আর্টিজান হামলার পর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শী নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে দুই বছরের অভিযানে সংগঠনটির নেতৃত্ব পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখন নব্য জেএমবির যেমন শক্তিশালী কাঠামো নেই, তেমনি নেই একক নেতৃত্বও।

দীর্ঘ দুই বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ২৩ জুলাই আদালতে আলোচিত এই মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে বর্তমানে এই মামলার বিচারকাজ চলছে। চার্জশিটে হামলায় ২১ জঙ্গির জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। জড়িত ২১ জনের মধ্যে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া ৫ জন মারা যায় সেনাকমান্ডো অভিযানে। তারা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ।

এছাড়া, হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে জড়িতদের মধ্যে আরও আটজন মারা যায়। তারা হলো- তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, নূরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকোলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক।

এছাড়া, চার্জশিটে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তারা হলো- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদীসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ। এদের মধ্যে রিপন ও খালিদ পলাতক ছিল।

চার্জশিটে মোট ২১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। ৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করাও হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ জুন ৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী দিন ধার্য করা আছে আগামী ২ জুলাই।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, তুলনামূলক দ্রুততার সঙ্গে এই মামলার বিচার কাজ চলছে। দেড় শতাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা শেষ করে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাবে এবং আসামিদের অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশার কথা শোনালেন এ আইনজীবী।

জানা যায়, এ মামলায় এখন পর্যন্ত সাক্ষী দিয়েছেন, রিজন কুমার দাস (এসআই),  সমীর বাড়ৈ, গাড়িচালক আব্দুর রাজ্জাক রানা, নূরে আলম, আরিফ মো. শাওন, মুন্না দেওয়ান, আশরাফ উজ জামান, লাজরুস সরেন, তরুণ গোমেজ, মো. হোসেন, লেনিন মোল্লা, সঞ্জয় বড়ুয়া, সামিরা আহমেদ, আব্দুল হাকিম, আকাশ খান, সাদাত মেহেদী, আরিফ হোসেন, শারমিনা পারভীন, শামসুজ্জামান, মোল্লা মো. আনুয়ারুল আমিন, রেমকিম, নূরজাহান, দাউদ, ইফতেখার হাছান, শরিফুল ইসলাম, সালাউদ্দিন মিয়া, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আমান, মতিউর রহমান, আনোয়ারুল আজিম, মমতাজ পারভীন, রিনা সুলতানা, জালাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, লতিফুল বারী, সাইফুল ইসলাম, সোহরাব আলী, বিল্লাহ হোসেন দুলাল, ওয়াহিদুজ্জামান (পুলিশ পরিদর্শক), ফারুক হোসেন (এসআই), সোহাগ খন্দকার (এএসআই), প্রদীপ চন্দ্র দাস (কনস্টেবল), রফিকুল ইসলাম (পরিদর্শক), কবির হোসেন (এসআই), মিজানুর রহমান (এসআই), দিদার হোসেন, দীন ইসলাম রাকিব, ইয়াছিন গাজী (পরিদর্শক), লুৎফর রহমান (এএসআই), পলাশ মিয়া (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট পুলিশ), মো.খোরশেদ আলম (কনস্টেবল), মাহফুজুর রহমান (কনস্টেবল), সাহেদ মিয়া (এডিসি), আবু তাহের মো. আব্দুল্লাহ (এডিশনাল এস পি), অনজন সরকার (কনস্টেবল), বাদশা (কনস্টেবল), মো. আ. আহাদ (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার), জসিম উদ্দিন (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার), মো. ওবায়দুল হক (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার), মাহাবুব আলম (এসআই) ও বিল্লাল ভুইয়া (এএসআই)।

এদিকে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে রিপনকে এবং ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থেকে খালেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

একাধিক সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর ২০১৬ সালে ৯টি অভিযানে ৫৫ জন এবং ২০১৭ সালে ১৮টি অভিযানে ৩৮ জন জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। সিলেটে অভিযান চলাকালে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। এরপর জঙ্গিদের এমন সক্রিয় হামলা দেখা যায়নি। গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে এবং ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের ওপর ককটেল বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনার পর আইএসের পক্ষে কথিত দায় স্বীকার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘এই দুটি যে জঙ্গি হামলা তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, তাহলেও বোঝা যাবে যে জঙ্গিরা দুর্বল হয়েছে। ব্যবহৃত বোমা বা ধরন ছিল অনেকটাই সাধারণ।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। আগের দিন হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের এএসপি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহম্মেদ নিহত হন।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই মামলায় প্রথমে গ্রেফতার দেখালেও চার্জশিটে অব্যাহতি দেওয়া হয় ঘটনার রাতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে জঙ্গিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা হাসনাত রেজা করিমকে। ঘটনার ৩৪ দিনের মাথায় হাসনাত করিমকে প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট তাকে সরাসরি গুলশান মামলায় গ্রেফতার দেখায় তদন্ত কর্মকর্তা। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে হাসনাতের কোনও সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি