ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

হাসি কান্না আর স্বজন হারানোর দূর্ঈদ!

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ১৬:০৭, ২২ জুলাই ২০২১

এক বছরের বেশি সময় ধরে স্বামী-স্ত্রীর খাবার থালা আর পেয়ালা পৃথক করে ফেলা হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবারা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ঘুমোতে পারছেন না করোনার আতঙ্কে। আমি আমার প্রাণপ্রিয় সন্তানের গালে আলতো ঠোঁটে আদর করি না অনেক দিন। অফিস কিংবা হাট থেকে ফিরে প্রিয়তমা স্ত্রীর মান ভাঙাতেও ঠোঁটের কোণে চুমু আঁকে না বেচারা স্বামী। এমনই সব অভূতপূর্ব ঘটনার স্বাক্ষী আজ মানব জাতি। এরই মধ্যে ত্যাগের মহিমা ঘরে ঘরে। তবে সেটা এখন স্বজন হারানোর ত্যাগ আর বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস না পাওয়ার শঙ্কা!

আমার খুব মনে পড়ে, সময়টা ১৯৯৯ সালের নভেম্বর। বাবার অন্তিম যাত্রার মাত্র ক’দিন পরই ছিল ঈদুল ফিতর। সেবার আমাদের পরিবারে কোনও ঈদ ছিল না। ছিল না আমাদের কারও রঙ-বেরঙের জামা। মায়ের মনে রঙ ছিল একটাই। বেদনার নীল রঙ। ছিল ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা এক শঙ্কা আর ভীতি। প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের দয়া কিংবা সহানুভূতি পারেনি শোক ভোলাতে। যেটা পারে না কারও ক্ষেত্রেই। 

আবার গত বছরের মে মাসে আমার জীবনে ছিল আরেক নিরানন্দের ঈদুল ফিতর। আমি তখন সপরিবারে করোনাক্রান্ত। এবারও রোজার ঈদ কেটেছে জীবন শঙ্কার মধ্য দিয়েই। এক বছরের বেশি সময় পর প্রায় একই রকম কোরবানীর ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। যা মুসলিম বিশ্বের জন্য বিরাট এক ত্যাগের মহিমা। 

কিন্তু অসংখ্য মানুষ আজ প্রিয়জনের লাশ নিয়ে দৌড়াচ্ছে কোনও এক কবরস্থানের দিকে। আর মানবকুল দৌড়াচ্ছে অজানা এক আতঙ্কে। চোখ মুখ খুলে প্রিয়জনের সাথে কথা বলারও জো নেই। শহর থেকে গ্রামে ছুটে গিয়ে অবুঝ সন্তানের গালে চুমু আঁকতেও কাজ করছে নানা শঙ্কা। মনে হচ্ছে, এই বুঝি আদরের নামে বিষের নিঃশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছি স্বজনেরই হৃৎপিণ্ডে!

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছে ২০০ জন। গত প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে করোনায়। আজও ভোরে হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে ফিরেছে আমারই কোনও স্বজন। দেশের কোনও হাসপাতালে শয্যা খালি নেই, নেই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট। প্রিয়জনের লাশ আজ এতই ভারী যে, সেটা টানারও কোনও শক্তি নেই। শোক, শঙ্কা আর আতঙ্ক যেন সর্বত্রই। বহু-সংখ্যক মানুষ কাতরাচ্ছে করোনার নীল বিষে!

অথচ মানুষ জাতি কত বিচিত্র। নিয়ম যেন আরও বিচিত্র। আমার আপনার বাড়িতে জবাই হচ্ছে লাখ টাকার গরু। আর পাশের বাড়িতে চলছে স্বজন হারানোর মাতম। চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। একদিকে পোতা হচ্ছে গরু ছাগলের নাড়িভুড়ি, অন্যদিকে পোতা হচ্ছে লাশ। এটাই পৃথিবী! এটাই নাকি নিয়ম! 

অথচ ইসলাম বলে, অন্যের কষ্টের সাথী হও নিজের কষ্ট কমে যাবে। নিজের আনন্দ ভাগাভাগি কর অন্যের সাথে। বহুগুণ বেড়ে যাবে সে আনন্দ। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন, শুধু আপনাকে বাঁচায় যে, মুসলিম নয় সে। সে তো ভণ্ড। ইসলাম বলে, বাঁচো সবাই সকলের তরে। মানুষের ধর্মই তো অন্যের কল্যাণ করা। যার মধ্যেই রয়েছে মূলত বিধাতার সন্তুষ্টি। 

গতকাল দেখেছি মাংসের দোকানে প্রচণ্ড ভিড়। যা ছিল অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। হয়তো এই করোনাকালে মধ্যবিত্তরাই নেমে গেছেন নিম্নবিত্তের কাতারে। ফলে সক্ষমতা হারিয়েছেন কোরবানী দেয়ার। তাই সন্তানের জন্য স্বজনের দারস্থ না হয়ে মাংস কিনেছেন বাজার থেকে। 

সুতরাং, আসুন এবার তাদের পাশে দাঁড়াই। দুঃখী মানুষের কষ্ট ভাগাভাগি করে ঈদুল আজহার ত্যাগে উদ্ভাসিত করি মানবজনম। এই হোক এবারের ঈদের ব্রত। বলতে কষ্ট হলেও বলি ঈদ মোবারক।

এনএস//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি