ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অর্ধেকের বেশি কর্মজীবীই কাজ করেন ৮ ঘণ্টার বেশি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২১, ২২ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৯:০৯, ২২ জুলাই ২০১৭

শ্রম আইন অনুযায়ী একজন কর্মজীবী মানুষ দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করবেন। এই কর্মঘণ্টা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে জীবিকার তাগিদে তিন কোটির বেশি মানুষকে দৈনিক গড়ে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৫-১৬ প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

বিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, পরিবহন শ্রমিক, বিপণিবিতানের কর্মীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেন। যাদের বেশির ভাগই সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। রেস্তোরাঁকর্মীদের প্রতি পাঁচজনে চারজনকেই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। আর পরিবহন শ্রমিক ও বিপণিবিতানের কর্মীদের ৭০ শতাংশের বেশিই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। কোনো নিয়োগপত্র বা কাজের চুক্তি না থাকায় মালিকপক্ষ ইচ্ছেমতো বাড়তি কাজ করাতে বাধ্য করেন।

তবে আট ঘন্টার বেশি কাজ করার প্রবণতা সবচেয়ে কম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষকদের মধ্যে। শিক্ষকদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন এবং সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন।

বিবিএসের জরিপে দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কিংবা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করাকে অতিরিক্ত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক খাতের চাকরিতে দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে ওভারটাইম দিতে হয়। অনানুষ্ঠানিক খাতের ওভারটাইমের বালাই নেই।

শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে ৬ কোটি ২১ লাখ নারী-পুরুষ আছেন। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এবং যারা কাজ করতে প্রস্তুত আছেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৯৫ লাখ নারী-পুরুষ কোনো না কোনো কাজে সম্পৃক্ত আছেন। অন্তত সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তারা।

তবে এই বিশাল অংকের কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার জন দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, সেবা খাতের কর্মীদেরই বেশি কাজ করতে হয়। ১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার সেবা খাতের কর্মী আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

মোট ২১ ধরনের কর্মজীবীদের শ্রমঘণ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিএসের জরিপে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কৃষি, উৎপাদন, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন পরিষেবা, নির্মাণ, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, আবাসন ও খাবার ব্যবসা, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ এবং শিল্প-বিনোদন।

৭৮ শতাংশ রেস্তোরাঁকর্মী আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

ছোট-বড় সব ধরণের রেস্তোরাঁর বয়-বেয়ারা, বাবুর্চিদের অবিরাম কাজ করতে হয়। রেস্তোরাঁকর্মীরা প্রতি সপ্তাহে ৬২ ঘণ্টা বেশি কাজ করেন। সাপ্তাহিক ছুটি না থাকলে তাঁদের দৈনিক গড়ে প্রায় ৯ ঘণ্টার কাজ করতে হয়। ৭৮ শতাংশ রেস্তোরাঁকর্মীকে দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়।

এরপর বাস-ট্রাক, টেম্পো, অটোরিকশাসহ পরিবহন শ্রমিকেরা সপ্তাহে গড়ে ৫৮ ঘণ্টা কাজ করেন। ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টরদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। অন্যদিকে দোকানের মালিক-কর্মীদেরও ৭৩ শতাংশই আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

৩৫ শতাংশ সরকারি কর্মচারী আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন

৩৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আট ঘণ্টার বেশি অফিস করেন। তবে কত শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আট ঘণ্টার কম অফিস করেন, তা বিবিএসের জরিপে বলা হয়নি। প্রতি চারজন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র একজনকে আট ঘণ্টার বেশি অফিস করতে হয়। শিক্ষা খাতেই আট ঘণ্টার কম অফিস করার প্রবণতা সবচেয়ে কম; মাত্র ২৫ শতাংশ।

কম শিক্ষিতদের বেশি খাটতে হয়

বেশি শিক্ষিতরা ভালো চাকরি পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। যারা পড়াশোনার সুযোগ পাননি কিংবা স্বল্পশিক্ষিত, কাজ পেলেও তাদের বেশি খাটতে হয়। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষা সুযোগ পাননি এমন কর্মজীবীদের মধ্যে ৯৪ হাজারের বেশি দৈনিক গড়ে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি