ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পোশাক খাত

কর্মপরিবেশ এখনও নারীবান্ধব নয় : একশনএইড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪০, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশের বিষয়টি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ মজুরি, নিরাপত্তা, ছুটি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মক্ষেত্রে আচরণ ও ক্ষতিপূরণের মতো বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার প্রেসক্লাবে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত “নারীবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সম্মেলন”-এ এমন কথা বলেন গবেষক, শ্রমিক নেতা, উন্নয়নকর্মী ও সাধারণ শ্রমিকরা।

তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্তির প্রাক্কালে “সবার হোক অঙ্গীকার নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ার” স্লোগান নিয়ে এই আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ। উদ্দেশ্য নারীবান্ধব ও নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে উদ্বুদ্ধ করা।

আলোচকরা বলেন, প্রধান রফতানি খাত আর বিশাল সস্তা শ্রমবাজারের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সারাবিশ্বে খুবই পরিচিত। কিন্তু তাজরিন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার ক্ষেত্রে বিশ্বে নজির হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিহত শতশত মানুষ, আহত শ্রমিক ও নিঃস্ব পরিবারের হাহাকার পেশাগত নিরাপত্তার বিষয়টি বার বার সামনে নিয়ে আসছে। যদিও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র শ্রমিকদের আইনগত অধিকার।

অনুষ্ঠানে কথা বলেন, তাজরিন দুর্ঘটনার শিকার আহত শ্রমিক সবিতা রানী। তিনি বলেন, “২৪ নভেম্বর তাজরিনের তৃতীয় তলায় কাজ করছিলাম। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফায়ার এলার্ম বাজা সত্ত্বেও কাজ চলছিল। আগুন লাগার পর নিচে এসে দেখি গেটে তালা দেওয়া। আগুন থেকে বাঁচতে ওপরে উঠতে অনেকের পায়ের নিচে পরলাম। মনে হচ্ছিল মারা যাচ্ছি। একটা ছেলের শার্ট ধরে কোনভাবে প্রাণে বেঁচেছি।”

তিনি আরও বলেন, “এখন আমি মৃত জীবন যাপন করছি। শুয়ে শুয়ে দিন কাটে আমার। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠিকভাবে হাটতে পারি না। তিনটা মেয়েসহ আট জনের সংসার নিয়ে অনিশ্চিৎ ভবিষ্যৎ। আমি চলতে পারি না। কোন কাজ করতে পারি না। আমার দায়িত্ব কে নেবে? আমার তিন মেয়েকে পড়াতে পারছি না।”
মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, “দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, দেশে আইন ও নিয়ম থাকলেও মালিকরা মানেন না। আবার যে সমস্ত মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বিচার হচ্ছে না। ফলে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।  শ্রমিকদের নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। ”
 
আলোচকরা বলেন, গুণগতমানের দিক থেকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও কারখানার অভ্যন্তরে ও কারখানায় যাতায়াতের পথে নারী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। কর্মক্ষেত্রে এখনও নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “তাজরিন বা রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হলো এখনও শ্রমিকরা, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা, নিরাপদে কাজ করতে পারেন না। হয়রানির শিকার হন। অভিযোগ করে সমাধান না পাওয়ায় এখন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক নারী শ্রমিক।”
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও একশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবরী বলেন, “নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা গেলে পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এ কারণে নারী শ্রমিকদের সব রকম বৈষম্য থেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট ও রক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেখানে মালিক-শ্রমিকসহ  সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ”


আলোচকরা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কনভেনশনের আলোকে নারী শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যে আইনগুলো প্রণীত হয়েছে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেইসঙ্গে বর্তমান সময়ের আলোকে নারী শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যুগোপযোগী ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি