ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘নিরাপত্তা শঙ্কার কারণেই রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে রাখা যাচ্ছে না’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২২, ২০ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন,বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোতের সঙ্গে সশস্ত্র আরসা সদস্যরাও ঢুকে পড়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলো উগ্রবাদের চারণভূমি হয়ে উঠতে পারে। এটাই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় শঙ্কার বিষয়। এই শঙ্কার কারণেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে রাখতে পারছে না।

তিনি বলেছেন, এই দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করা সম্ভব। সেটা করছেও বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিলে তা দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে। ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটে শুক্রবার এক নিবন্ধে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

জয় লিখেছেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিশ্ব নেতারাও এর প্রশংসা করেছেন। নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

মিয়ানমারের সেনবাহিনীর নিপীড়নের মুখে দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাখাইনের ঘরবাড়ি ছেড়ে গত আগস্ট থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগের বছরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ দিয়েছে তারা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনকে জাতিসংঘ `জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য দলিল` হিসেবে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে শরণার্থী শিবিরগুলোকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে, সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সেবার মান উন্নত করা হয়েছে। নতুন আশ্রয়কেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করছে। রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশের এসব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্বনেতারা।

সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের মধ্যেই সীমিত রাখা ও তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। এর মানে এই নয় যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি আছে। বরং বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়েই এই নীতি নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হত্যার অভিযোগে দেশটির সামরিক বাহিনী অন্যায় ও নিষ্ঠুর এ দমন অভিযান শুরু করে। আইএস ও আল কায়দার সঙ্গে আরসার যোগসূত্র আছে বলে অভিযোগ থাকলেও তারা তা অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে বলে দাবি করে থাকে।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোতের সঙ্গে সশস্ত্র আরসা সদস্যরাও ঢুকে পড়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরগুলো উগ্রবাদের চারণভূমি হয়ে উঠতে পারে। এটাই বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কার বিষয়।

জয় তার নিবন্ধে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বিশ্লেষক রিচার্ড হরসের লেখার উদ্ধৃতি দেন। হরসে লিখেছেন, যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি হতাশাজনক পরিস্থিতি উগ্রবাদীদের নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য সহায়ক। এর মাধ্যমে তারা তাদের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে চায়। হরসে আরও লিখেছিলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন নতুন সদস্য খুঁজে পেতে আরসা সদস্যদের তেমন কোনো কষ্টই করতে হবে না।

হরসের এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করে জয় লিখেছেন, এ কারণেই রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে সারাদেশে চলাচল করতে দিতে পারে না বাংলাদেশ। মিয়ানমার সীমান্তে কিংবা বাংলাদেশের ভেতরেই সন্ত্রাসী হামলার জন্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে না, সেই নিশ্চয়তা তো কেউ দিতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা লিখেছেন, এর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলে তা দেশের গোটা জনসংখ্যার হার বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। জনসংখ্যা  এক শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। এই সংখ্যাকে খুব বড় মনে না হলেও একই ধরনের জনসংখ্যার স্রোত অনেক দেশেই অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কাঠামোর সবচেয়ে নিচের স্তরে বসবাস করছেন, যেটা বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা জালের ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

নিবন্ধে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, বাংলাদেশ তার দ্রুত সমৃদ্ধির জন্য গর্বিত। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপি ৭ শতাংশ হলেও আমরা ধনী দেশ নই। এই দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করা সম্ভব। সেটা করছেও বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিলে তা দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তা বাধাগ্রস্ত হবে।

জয়ের নিবন্ধে বলা হয়, রোহিঙ্গা ছাড়া আর কেউই বাংলাদেশে অভিবাসী হিসেবে আসতে চায় না। ফলে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসনের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা বাংলাদেশের নেই। বাবা কিংবা মায়ের যেকোনো একজন বাংলাদেশি হলে কিংবা বাংলাদেশি কাউকে বিয়ে করলেই শুধু এখানে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদেশিদের কেউ বাংলাদেশে জন্ম নিলেও নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে, অভিবাসী কিংবা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনো আইনি সুযোগ নেই।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো দুটি সাংঘর্ষিক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার মত কঠিন কাজ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবে এবং তাদের প্রত্যাবাসনের সময়ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করবে। তবে এদেশের নাগরিকদের অবশ্যই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

সূত্র : দ্য ডিপ্লোমেট।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি