ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক বাজেট যেমন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৬, ৩ মে ২০১৮ | আপডেট: ২১:০৪, ৩ মে ২০১৮

বাংলাদেশে ২০০৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় ছিল প্রায় ছয় হাজার ছয়শ` কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় আটাশ হাজার আটশত কোটি টাকা। যদিও সর্বশেষ বাংলাদেশের বাজেটে সামরিক খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সামরিক খাতে ১২৩ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

সুইডেন-ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিপ্রির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা সংস্থাটির তথ্য মতে, মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে সামরিক খাতে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ। যদিও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ও সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। আরেক বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সামরিক খাতে ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১৮ গুণ বেশি। গত দশ বছরে ভারতের সামরিক ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। এমন তথ্য দিয়েছিল গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০১৭।

ভারত আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর। চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারতের বৈরিতাও স্পষ্ট। যদিও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সামরিক বাজেটের তুলনা হয়তো সমতা-ভিত্তিক তুলনা হবে না, কিন্তু সামরিক বাজেট কোন দেশের কী হারে বাড়ছে সেটি সিপ্রির প্রতিবেদনে পাওয়া যায়।

তবে মিয়ানমারের সামরিক ব্যয় সম্পর্কে পুরোপুরি পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না এ প্রতিবেদনে।

২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক ব্যয় সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। ২০১২ সালে থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটিও `অনিশ্চিত` বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক খাতে বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে।

গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারপার্সন মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জমান মনে করেন, সামরিক বাজেট বৃদ্ধি বেশ বড় আকারের। কিন্তু এ বৃদ্ধিকে তিনি অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না।

তিনি বলেন, গত দশ বছরে সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন সেনানিবাস স্থাপনসহ আরো কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

মুনিরুজ্জমান বলেন, ‘সামরিক বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় বেতন-ভাতা এবং স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। বেতন-ভাতা এবং স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচের পর সীমিত অংশ দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করা হয় ‘

নতুন সাবমেরিন এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র ক্রয়ের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা থাকবে বলে মনে করেন মেজর জেনারেল (অব.) আ.ন.ম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আবহাওয়া অধিদফতরের জন্যও সে বাজেট থেকে টাকা খরচ করা হয়।

যেহেতু দেশের অর্থনীতির বিচারে প্রতি বছরই খরচ বাড়ে, সেজন্য দশ বছরে ১২৩ শতাংশ সামরিক বাজেট বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না।

গত বছর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংসদে যে বাজেট পেশ করেছিলেন, সেখানে দেখা গেছে অন্তত দশটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে বিভিন্ন সেনানিবাসে হাসপাতাল আধুনিকায়ন কিংবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রকল্পও রয়েছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাজেট বাংলাদেশের চেয়ে কম। তাহলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আকার এবং সরঞ্জাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হয় কিভাবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাজেটের পরিষ্কার চিত্র প্রকাশ করা হয় না। চীনের কাছ থেকে তারা প্রচুর অস্ত্র পায়। এসব অস্ত্র কী তারা বিনামূল্যে পায়, নাকি ক্রয় করে - সে সংক্রান্ত কোন পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায় না।’

বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই সামরিক খাতে ব্যয় বাড়লেও রাশিয়াতে সেটি কমেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় রাশিয়ায় সামরিক খাতে ব্যয় কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

পৃথিবীতে সামরিক খাতে বেশি খরচ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন এবং তৃতীয় অবস্থানে সৌদি আরব। কিন্তু খরচের দিক থেকে আমেরিকা, চীন এবং সৌদি আরবের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আর/টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি