ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিবিসির বিশ্লেষণ

মিশরে মসজিদে হামলা: সুফিবাদ-ই কাল হলো ওদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩১, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

মিশরে মসজিদে হামলা চালিয়ে ২৩৫ জন মুসল্লীকে হত্যার ঘটনায় কে বা কারা দায়ী তা এখনো স্পষ্ট না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইএসের মতবাদে বিশ্বাসী গোষ্ঠীই এ হামলা চালিয়েছে। সুফিবাদের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর মতের বিরোধীতাই কাল হয়েছে হতভাগ্য ওইসব মুসল্লীর। মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি মনে করে সুফিবাদীরা প্রকৃত মুসলমান নয়, তারা ‘ভ্রান্ত-কাফের’।

সিনাই প্রদেশের ওই মসজিদে হামলার পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সুফিবাদের মতের অমিলকেই দায়ী করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,  এই হামলা এমন একটি চালানো হয়েছে, যেখানে কেবল সুফিবাদিরাই একত্রিত হয়ে থাকে। এতে মনে হচ্ছে সুফিবাদকে ধ্বংস করতে চায় এমন গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।একইসঙ্গে সিসির বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি বড় ধরণের হামলা চালাতে পারে, ওই ঘটনা এমন পূর্বাভাষ দিচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আসুন জেনে নেই-সুফিবাদ কি ? জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদেরই বা পার্থক্য কোথায়?

সুফিবাদ আরবি শব্দ। একে সওয়াফ বলা হয়। এর অর্থ আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা । অক্সফোর্ড্ ডিকশনারির মতে সুফিবাদ হলো স্রষ্টার কাছে পৌছানোর এক আধ্যাত্মিক মাধ্যম। ইসলামি আধ্যাত্মিক ও আত্মদর্শনের মাধ্যমে স্রষ্ট্রার নৈকট্য লাভের চেষ্টাই হচ্ছে সুফিবাদ। সুফিবাদে বিশ্বাসী বেশির ভাগ মানুষ সুন্নি ধর্মাবলম্বী। সারা বিশ্বে দেড় কোটি সূফিবাদী জনগোষ্ঠী আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানসহ সারা বিশ্বে গুরত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে সুফিবাদীরা। এটা আইএসের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করে জঙ্গি গোষ্ঠীরা। এছাড়া আরবদের ইতিহাসে সুফিবাদীদের শাসন করারও ইতিহাস রয়েছে।

হাফিংটন পোস্টের এক গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষক সামি মোবায়েদ বলেন, সুফিবাদ হল আত্মাকে ভালবাসা । ভালবাসার মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা। তবে জঙ্গিবাদীদের মতের সঙ্গে এর ব্যপক পার্থক্য রয়েছে। সুফিবাদ দর্শনের সঙ্গে আইএস এবং এর সহযোগী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মতাদর্শে ব্যাপক ফাঁরাক রয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এদের `ধর্মদ্রোহী` বা `কাফের` বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

শুধু তাই নয়, সুফিবাদে বিশ্বাসীদের গ্রহণযোগ্যতাও ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার তরুণ সুফিবাদের দিকে ঝুঁকছে। নিরস্ত্র এ শক্তিকে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তাই যে করেই হোক সুফিবাদীদের দমাতে তারা বদ্ধ পরিকর। এ দিকে হামলার পেছনে আরেকটি কারণ খোঁজে পেয়েছে বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, ২০১৩ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মুরসিকে গৃহবন্দী করে ক্ষমতা দখল করে ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকেই দেশটিতে ইসলামপন্থীরা ব্যাকফুটে চলে যায়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইসলামি গোষ্ঠীগুলো। দেশটিতে বর্তমানে ইসলামপন্থীরা কোন সুবিধা করতে পারছে না বলে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর দ্বারস্ত হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছে। এ হামলা সিসির বিরুদ্ধে বড় ধরণের হামলার পূর্ব লক্ষণ মনে করছেন অনেকেই।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের এক সুফি সাধুর মাজারে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ৮০ জনের বেশি সুফি মুসলমানকে হত্যা করে। ওই মাজারে সুফিবাদী সাধুর কবর ঘিরে প্রার্থনারত ছিলেন সুফিরা। এটা `মুশরিকদের` কাজ বলে ব্যাখ্যা করে জঙ্গিরা। সুফি অনুসারীদের লক্ষ্য করে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি