ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা

‘ওপেন নির্দেশনা দিয়েছি, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর জব্দ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে চারটি ফোনালাপ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৫৩তম সাক্ষী উপস্থাপনের সময় বাজিয়ে শোনানো হয়েছে, যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার এই চারটি ফোনালাপের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও তার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপ রয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়েছি। এখন লিথাল ওয়েপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’   জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে তার এই নির্দেশনা ছিল।

এদিন ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা।

আদালতে তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘তদন্তকালে আমি বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর হতে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ, ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিডিআর, সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয় বিধি মোতাবেক বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর এনটিএমসির সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রশিক্ষক সাদি মোহাম্মদ রিফাতের উপস্থাপন মতে বিধি মোতাবেক জব্দ করি।’

‘সংগৃহীত অডিও ক্লিপগুলোর পর্যালোচনাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফজলে নূর তাপসের একটি ফোনালাপ, যা একটি ডিভিডিতে ধারণপূর্বক তাদের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বর সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক শাখা, সিআইডি ঢাকায় প্রেরণ করি। এই ফোনালাপের শুরুতে কলকারীসহ অপর একজন ব্যক্তির কথোপকথন শোনা যায়। শেখ হাসিনার ফোনালাপ শেষে অন্য এক পুরুষের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ’

তানভীর জোহা বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের পরিদর্শক রুকনুজ্জামান গত ১৬ জানুয়ারি ওই ফোনালাপ পরীক্ষান্তে নিশ্চিত করেন যে অডিও ক্লিপে ফোনালাপকারী একজন শেখ হাসিনা ও অপরজন ফজলে নূর তাপস। ওই মতামত আমি তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের কাছে হস্তান্তর করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির সঙ্গে ফোনালাপের অডিও সম্পর্কে তানভীর জোহা বলেন, ‘অডিওসমূহ পর্যালোচনাকালে আমি শেখ হাসিনা ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এস এম মাকসুদ কামালের ফোনালাপ শনাক্তপূর্বক একটি সিডি ডিস্কে সংরক্ষণ করে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি। তাদের দুজনের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বরসহ উহার একটি কপি পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাব সিআইডি ঢাকায় প্রেরণ করি। এসআই শাহেদ জুবায়ের লরেন্স পরীক্ষান্তে রিপোর্টসহ মতামত প্রদান করেন। মতামতে তিনি উল্লেখ করেন যে উক্ত ফোনালাপটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এস এম মাকসুদ কামালের। উক্ত মতামত আমি তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি। ’

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপের অডিও সম্পর্কে তানভীর জোহা বলেন, ‘উক্ত অডিওসমূহ পর্যালোচনা অব্যাহত থাকাকালীন সময় হাসানুল হক ইনু এবং শেখ হাসিনার ৩টি ফোনালাপ শনাক্তপূর্বক একটি ডিভিডি ডিস্কে সংরক্ষণ করে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি। এসআই শাহেদ জুবায়ের লরেন্স পরীক্ষান্তে উক্ত ফোনালাপগুলো শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর কণ্ঠস্বর মর্মে মতামত প্রদান করেন।’

তানভীর জোহা আরো বলেন, ‘ওই ফোনালাপসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা লেখাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছেন এবং ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় পূর্বক হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করাসহ আন্দোলনকারীদের রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলেছেন। তারা উক্ত ফোনালাপে ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের দমন করতে বলেছেন। উক্ত ৫টি অডিও কথোপকথন সংবলিত ৩ সিডি অদ্য ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলাম।’

পরে তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপপরিচালক মো. আলমগীর। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি