ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ জুন ২০২৫

ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র নিয়ে ফের বিতর্ক, কিন্তু কেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৫, ২৫ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র নিয়ে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সম্প্রতি সময়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো এই দুই মূলনীতি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে এসব শব্দ থাকা উচিত নয়। অন্যদিকে, বাম দলগুলো এই দাবিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত’ হিসেবে অভিহিত করে বলছে, ৭২ সালের সংবিধানই হলো রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি।

বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ষষ্ঠ দিনের সংলাপে এসব বিষয় উঠে আসে। আলোচনার মধ্যাহ্নে রাজনৈতিক নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ সংযুক্ত করা উচিত। সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে ‘সাম্য ও মানবিক মর্যাদা’ ব্যবহার করা হোক।” 

শুধু সিপিবি বা এক-দুইটি দল ছাড়া অধিকাংশ দল এই দাবি সমর্থন করে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি-ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত দেয়। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘৭২-এর সংবিধানের কবর রচনা হয়েছে ৫ আগস্টেই। এই সংবিধান বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’

তবে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) সরাসরি অবস্থান না নিলেও ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে ‘ধর্মীয় বিষয়ে পক্ষপাতহীনতা’র প্রস্তাব দিয়েছে।

বিপরীতে সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি বামপন্থি দল সংবিধানের চার মূলনীতি অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে জোর দাবি তুলেছে।

সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আপস চলে না। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের আত্মা। প্রয়োজনে জনগণের ওপর ছেড়ে দিন, কিন্তু জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার সঙ্গে এই চার মূলনীতি জড়িত। অতএব, আলোচনার প্রয়োজন থাকলেও এগুলো মুছে ফেলা উচিত নয়।’

এদিকে বিএনপি ও এনসিপি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত মত দেয়নি। তবে আলোচনা প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে বলেই জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ এলডিপি’র মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। তার মতে, “কমিশনের আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জুলাইতেও সমাধান মিলবে না।”

ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, সংবিধানের এই দুই মূলনীতি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতপার্থক্য প্রকট হচ্ছে। সরকার কিংবা কমিশনের সামনে এখন বড় চ্যালেজ—প্রস্তাবিত সংশোধনের মাধ্যমে এই সংস্কারের পক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে নিয়ে আসা। 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি