নিজেই করলেন নিজের অপারেশন
প্রকাশিত : ২১:০৬, ২৪ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২১:১১, ২৪ জুলাই ২০১৮
কাটাছেঁড়ার ভয়ে অনেকেই অপারেশন থিয়েটারের বেডে শুতে চান না। কিন্তু বিশ্বকে তাক লাগানো দুই সার্জন নিজের অপারেশন নিজেই করেছেন।
সার্জন ইভান ও নেইল: ১৯২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ৬০ বছর বয়সী আমেরিকার সার্জন ইভান ও’নেইল কেইন তার অ্যাপেনডিক্স অপসারণের জন্য অপারেশন থিযয়েটারের বেডে শুয়েছিলেন।
কোনোরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজের অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ইভান হাসপাতালের প্রধান সার্জন হওয়ায় তাকে কেউ বাধা দেননি। ইভান একটি বালিশ নিয়ে পিঠের পেছনে রেখে এমনভাবে বসলেন যাতে তিনি তার পেট দেখতে পান।
এরপর তিনি তার পেটে কোকেন আর এড্রেনালিন প্রয়োগ করলেন। দ্রুততার সঙ্গে তিনি তার পেটের ওপরের টিস্যু কেটে ফেললেন। পেটের ভেতরে তিনি ফুলে যাওয়া অ্যাপেনডিক্স দেখতে পেলেন এবং নিজেই সেটা অপসারণ করলেন। অপারেশন শেষ হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।
এর মাঝে বিপত্তি বাঁধল যখন তার অন্ত্র বের হওয়ার উপক্রম হল। ইভান ধীরস্থিরভাবে পেটের বাইরে বের হয়ে আসা অন্ত্রকে হাত দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে আবার যথাস্থানে নিয়ে আসেন। অপারেশনের ১৪ দিনের মাথায় ইভান সুস্থ হয়ে কাজে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছিলেন, এ কাজের উদ্দেশ্য ছিল, অপারেশন থিয়েটারে একজন রোগী কেমন অনুভব করে সেটা জানা।
এছাড়া অপারেশনের সময় শরীরের কোনো বিশেষ অংশ সাময়িকভাবে অবশ (লোকাল এনেস্থেসিয়া) করে দেয়ার উপযোগিতা কতটুকু তা যাচাই করা। নিজের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইভান আরও একবার নিজেই নিজের হার্নিয়া অপারেশনে নামেন। তখন তার বয়স ৭১ বছর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবারের অপারেশন সফল হননি। ইভান পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে পারেননি। তিনি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে অপারেশনের তিন মাস পর মৃত্যুবরণ করেন।
লিওনিদ রগোজভ: সার্জন লিওনিদ রগোজভ। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ষষ্ঠ অ্যান্টার্কটিক অভিযানের ১২ জনের দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ওই অভিযানে তারা সেখানে নভোলেজারেভস্কায়া গবেষণা ঘাঁটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন।
এসময় সার্জন লিওনিদ অ্যাপেনডিসাইটিসের যন্ত্রণায় নিজের মৃত্যুর আশঙ্কা করেন। তার জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু ওই দলে তিনিই ছিলেন একমাত্র চিকিৎসক। ২৭ বছর বয়সী লিওনিদ তখন নিজেই নিজের অপারেশন করতে বাধ্য হন।
অপারেশনের কাজে সহযোগিতার জন্য দু’জনকে বাছাই করেন। তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, লাইট সরবরাহ ও আয়না স্থাপনে সহায়তা করেন, যাতে লিওনিদ তাতে নিজেকে দেখে কাজ করতে পারেন।
তিনি ভালোভাবেই পেট কেটে প্রয়োজনীয় কাজ করতে সমর্থ হন। কিন্তু হঠাৎ তার জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়। প্রচুর রক্তপাতের কারণে লিওনিদ দুর্বল হয়ে পড়েন। তিনি তখন নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করেন।
পরে তিনি অ্যাপেনডিক্সের সন্ধান পান। লিওনিদ দেখেন, একদিন পরই সেটি ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পরে তিনি অ্যাপেনডিক্স অপসারণ করেন। দুই ঘণ্টার এ অপারেশনে তার কাছে ছিল জীবন-মৃত্যুর লড়াই। তার সাহসিকতার এ ঘটনা তখন বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
টিআর/










