ঢাকা, সোমবার   ৩০ জুন ২০২৫

নিরীক্ষা তুমি কার? একটি পেশাগত আত্ম বিশ্লেষণ

জাহাঙ্গীর হোসেন

প্রকাশিত : ১৮:০১, ২৯ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সাম্প্রতিক সময়ে পত্র পত্রিকায় নিরীক্ষা ও নিরীক্ষকের দায়িত্ব ও পেশাগত মর্যাদা নিয়ে বহু আলোচনা হচ্ছে। কারও বিপক্ষে নয় বরং একটি পেশার প্রদত্ত আইনগত স্বীকৃতির বাস্তবায়ন ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ নিরীক্ষা কার্যক্রমের জায়গা থেকে। এটা সত্য নিরীক্ষা কার্যের শুরু থেকে সিএ (CA) পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে মর্যাদার সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। তখন নিরীক্ষা আওতা ছোট ছিল এবং আর কোন প্রতিযোগী  না থাকায় সকল আইনে সিএ’দের একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে নিরীক্ষা আওতা বৃদ্ধি পায় এবং সিএমএ (CMA) এর আবির্ভাব হলেও চিরাচরিত নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। কালক্রমে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে বিভিন্ন দেশে এফআরসি ( FRC) এর মত স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আবির্ভাব ঘটে। তবুও নিয়ম বদলায়নি।

কানাডায় ২০১৪ সালে সিপিএ (CPA) গঠনের মাধ্যমে তিনটি পেশা  CA, CMA, CGA একত্রিত করা হয়। বর্তমানে CPA সদস্যরা বিধিবদ্ধ নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন, যদিও আগে CMA পেশাজীবীরাও পৃথকভাবে নিরীক্ষা কর্যক্রম করতেন। এটি উন্নত দেশে CMA পেশার মর্যাদার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আবার বলা হয় নিরীক্ষক হতে হলে পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে হয়; এই বক্তব্য সত্য এবং অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তাহলে নিরীক্ষা কার্যে অন্তর্ভুক্তিতে পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি কেন? তাও আবার অবিধিবদ্ধ নিরীক্ষা। IFAC এর সদস্যতে আপত্তি নাই, সিলেবাস এ আপত্তি নাই, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এ আপত্তি নাই। যৌথ সামিট অংশগ্রহণে বাধা নাই। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মান ও নিয়ম যেখানে কোন সমস্যা দেখছে না, সেখানে নিরীক্ষা বাজার প্রতিযোগীতায় সমস্যা কেন? 

ICAB এবং ICMAB এর মধ্যে পারস্পরিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে একে অপরের সদস্যদের জন্য  CMA ↔ CA হবার সুযোগ রাখা হয়েছে (৬-৭ টি বিষয় পাশ সাপেক্ষে) । এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং সহযোগীতামূলক পেশাগত সম্পর্কের উদাহরণ।

অনেক CMA পেশাজীবী দুইটি সনদই অর্জন করেছেন। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পরোক্ষভাবে পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন ভিত্তিতে কোনো না কোনো CA ফার্মের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের এই নিষ্ঠা, শ্রম ও অর্জিত দক্ষতা বাস্তব ক্ষেত্রে সম্পদ হলেও কেবলমাত্র আইনগত ভিত্তির অভাবে এই দক্ষতার কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রমাণ নাই।
আমরা বিশ্বাস করি-মেধা কখনও দাবিয়ে রাখা যায়না। যথা সময়ে তা নিজ আলোয় বিকশিত হবেই।

আজকের এই নিরীক্ষা কাঠামোর পূর্নগঠন আন্দোলন তারই বহিঃপ্রকাশ, একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে এটি শুধু যোগ্যতার মূল্যায়ন আন্দোলন নয়; বরং এটি দক্ষতার প্রতিযোগীতায় নামার আন্দোলন। 

আমি ২৭ বছরের কর্মজীবনে তিনটি স্বনামধন্য গ্রুপ অফ কোম্পানীতে কাজ করেছি। দেখেছি-পেশা যাই হোক, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব আলাদা, অভিজ্ঞতা আলাদা, কিন্তু সম্মান পাওয়ার আকাঙ্খা সবার এক। আমার একটাই উপলব্ধি- কর্পোরেট জগতে যদি দুই পেশার প্রতিযোগীতা থাকতে পারে, তাহলে নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও পেশাগত প্রতিযোগীতা থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু নিরীক্ষা যদি কেবল “আমার একক অধিকার” এই ধারণা নিয়ে আমরা চলি, তাহলে নিরীক্ষা পেশাগত মান উন্নয়নের পথ আমরা নিজেরাই বন্ধ করছি। তাহলে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোথায়।

আগামী দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা মূলক মানসম্পন্ন আর্থিক প্রতিবেদনই হোক একমাত্র প্রত্যাশা। নিরীক্ষার আইনগত কাঠামো আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ হোক এবং যোগ্যরা যেন যোগ্যতার ভিত্তিতে নিরীক্ষা করতে পারেন। সবার জন্য পেশাগত মর্যাদা, সমতা এবং সহযোগীতা-সেটাই হোক আমাদের ভবিষ্যতের পথ।

 

লেখক: জাহাঙ্গীর হোসেন -এফসিএমএ
এসভিপি (হিসাব ও অর্থ), গ্রুপ রিদিশা 


এমবি//
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি