ঢাকা, রবিবার   ০৪ মে ২০২৫

শেখ পরিবারের বন্দনা বন্ধ করা উচিত: উপদেষ্টা মাহফুজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৮, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৪:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে সম্প্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এবার ছবি সরানো প্রসঙ্গে মুখ খুললেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, সরকারি অফিস থেকে শেখ মুজিবুর রমহান ও শেখ হাসিনার ছবি সরানোর কারণে কেউ যদি আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা আওয়ামী লীগকে স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইংরেজিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা পরিহার করা। তার বাবা (শেখ মুজিব)কে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য ইংরেজি থেকে বাংলায় হুবহু অনুবাদ করে তুলে ধরা হলো-

“পতিত শেখরা!

শেখ মুজিব ও তার কন্যা (আরেক শেখ) তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ-ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য, শেখ মুজিব একসময় পূর্ব বাংলার গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন, যে জনপ্রিয়তা হাসিনার ছিল না। জনগণ পাকিস্তানি নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার (শেখ মুজিব) নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিলেন, কিন্তু একাত্তরের পর তিনি নিজেই একজন জালিম হয়ে ওঠেন। মুজিববাদের প্রতি তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাত্তরের পর পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। নিজের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে ১৯৭৫-এ তার মৃত্যুতে মানুষ শোক-অনুতাপ প্রকাশ করেনি।

শেখ মুজিব তার একাত্তরপূর্ব ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন, যদি শেখের একাত্তর পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ ও নিশ্চিতভাবেই বাহাত্তরের সংবিধান, যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল- এসবের জন্য তার দল ও পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের কথাও তাদের (আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের) স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাদের আরও উচিত, মুজিববাদী রাজনীতি ও শেখ পরিবারের বন্দনা বন্ধ করা।

কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখ মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার একাত্তর পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতুল্য করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে তাদের দুজনের ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নামিয়ে ফেলেছেন।

কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণঅভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তার বিচার ও সাজা হওয়া উচিত।

স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাদের (একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করা মুক্তিযোদ্ধাদের) এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশের উচিত, শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা থেকে বেরিয়ে আসা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে না করা। ৪৭ ও ৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে থাকুক অম্লান!”

প্রসঙ্গত,  গত সোমবার (১১ নভেম্বর) বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি জানিয়েছিলেন মাহফুজ আলম। এর আগের দিন তিনি উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেন। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি