নুসরাত হত্যা
সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে চার্জশিট দাখিল
প্রকাশিত : ১৬:৩১, ২৯ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৪৯, ২৯ মে ২০১৯

আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আজ বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে এ চার্জশিটটি দাখিল করা হয়।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একমাস ২১ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ সংস্থাটি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলম এই চার্জশিট জমা দেন।
চার্জশিটে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীনসহ ১৬ জন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার চার্জশিট দাখিলের কথা জানিয়েছিলেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ৭২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় জেলে থাকলেও তার নির্দেশনায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
বাকি আসামিরা হলেন- সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমীন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
পিবিআইপ্রধান জানান, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মিশনে সরাসরি অংশ নেন পাঁচজন।
এছাড়া এ হত্যার ঘটনায় বিভিন্নভাবে যারা জড়িত, তাদের আসামি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। অভিযোগপত্রেও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চার্জশিটে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আসামি করা হচ্ছে নুসরাতকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে। তার নাম থাকছে আসামির তালিকার ১ নম্বরে।
এ ছাড়া ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নেয়া এবং তা বাস্তবায়নে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে উল্লেখ থাকছে অভিযোগপত্রে।
এতে বলা হয়েছে, তদন্তে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা এবং হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৪(১) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
বনজ কুমার মজুমদার জানান, ২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন।
রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল নুসরাত ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রাফি ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান। তিনি বলেন, রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আর দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে মামলার তদন্তভার থানা পুলিশ থেকে দেয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
আই/এসএ/
আরও পড়ুন