ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪

করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ খবর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৫, ২৪ জুলাই ২০২০

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা আশার বার্তা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি করোনার টিকা উদ্ভাবনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়নি বা বাজারে ছাড়েনি। তবে কোনো টিকা সফল প্রমাণিত হওয়ার পর উৎপাদনকারী দেশের অনুমোদন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃতি পেলে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই ঘোষণা শোনার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মানুষ।

বিশ্বজুড়ে ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ১৭৬টি সম্ভাব্য টিকা তৈরির প্রচেষ্টাকে নথিভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ খসড়া তালিকা অনুযায়ী মানবদেহে ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠানের ৩৪টি সম্ভাব্য টিকা। বাকিগুলো প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি সম্ভাব্য একাধিক টিকা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এর মধ্যে তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে চারটি।

চূড়ান্ত ধাপে থাকা চারটি টিকার মধ্যে ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সম্ভাব্য টিকার অগ্রগতি সবচেয়ে ভালো। চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা অন্য তিনটি সম্ভাব্য টিকার মধ্যে দুটি তৈরি করছে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড ও সিনোফার্মা এবং একটি যুক্তরাষ্ট্রের মডের্না বায়োটেকনোলজি কোম্পানি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোভ্যাক, মডের্না, সিনোফার্মা- এই চারটি কোম্পানিই ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিশ্বে নামকরা প্রতিষ্ঠান। 

মানবদেহে পরীক্ষায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার 'এজেডডি ১২২২' নামে টিকা আশানুরূপ সফল হয়েছে। এই টিকাটির নাম ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনকোভ-১৯’। এ সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এ ২০ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউরোপে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী এক হাজার ৭৭ ব্যক্তির শরীরে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রথম ডোজ গ্রহণ করার এক মাস পর তাদের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কভ-২-এর বিরুদ্ধে চার গুণ বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের শরীরে ৯১ ভাগ এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীদের প্রায় শতভাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে। চূড়ান্ত ধাপে আমেরিকা ও এশিয়ায় এর পরীক্ষা হচ্ছে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে টিকাটি বাজারে আসবে। 

মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভ্যাকসিনটির গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট জানিয়েছেন, চলতি বছরেই টিকাটি বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা। তবে বেশি সময়ও লাগতে পারে।

সিনোভ্যাকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে সফলতার পর ব্রাজিলে ৯ হাজার ও ইন্দোনেশিয়ায় এক হাজার ৬০২ জন স্বেচ্ছাসেবকের দেহে চূড়ান্ত ধাপে তাদের টিকার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। টিকা উদ্ভাবন করা সিনোভ্যাকের বিজ্ঞানীদের দাবি, শরীরে করোনা প্রতিরোধে তাদের টিকা ৯৯ শতাংশ সফল। তাদের সম্ভাব্য আরও দুটি টিকা দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় রয়েছে। 

প্রতিষ্ঠানটির সিইও ইন ওয়েতুং বলেছেন, 'যে কোনো দেশে ট্রায়ালের জন্য আমরা প্রস্তুত।' চূড়ান্ত ধাপে বাংলাদেশেও সিনোভ্যাকের টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য ২০ জুলাই চুক্তি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সবকিছু প্রত্যাশামতো এগোলে আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ টিকাটি বাজারে আসবে।

মডের্নার উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকার প্রথম ধাপের সফলতা চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল মেডিসিন-এ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোধে আশানুরূপ কার্যকর এই টিকা। এটি এখন ট্রায়ালের তৃতীয় অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২৭ জুলাই থেকে বিভিন্ন দেশে ৩৯ হাজার মানুষের শরীরে চূড়ান্ত ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা। মডের্নার টিকার নাম ‘এলএনপি-এমআরএনএ’ এবং ক্লিনিক্যাল নাম ‘এমআরএনএ-১২২২’। তাদের আরও দুটি সম্ভাব্য টিকা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। টিকা বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা ঘোষণা না করলেও দ্রুতই সব কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মডের্নার সিইও স্টেফান ব্যানসেল।

উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস ও সিনোফার্মার যৌথ উদ্যোগে তৈরি সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় ধাপের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ২০০ ব্যক্তির ওপর এটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিনটি বাজারে ছাড়ার আশা রয়েছে সিনোফার্মার। 

এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় সফল হয়ে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত হয়েছে বায়োএনটেক ও ফাইজারের যৌথ প্রচেষ্টার 'থ্রি এলএনপি-এমআরএন' নামের টিকাটি।

মঙ্গলবার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের টিকাকে 'শতভাগ ব্যবহার উপযোগী' বলে দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বলেছেন, আগস্ট থেকে টিকাটির ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন শুরু হবে এবং বছরের শেষ নাগাদ পাঁচটি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ২০ কোটি ডোজ তৈরি করা হবে। তবে রাশিয়ার এ বক্তব্যের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত দেড় কোটি ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছে ছয় লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় টিকার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এ বছর না হলেও আগামী বছরের মাঝামাঝি টিকা হাতে পাওয়া যাবে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে অসুস্থ হওয়া থেকে মানুষের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এটি। 

আগের অন্য সব মহামারির চেয়ে করোনার টিকা তৈরির অগ্রগতি খুবই আশাব্যঞ্জক। টিকা আবিস্কার হলে মাথাপিছু চার হাজার ডলারের বেশি আয় করা দেশগুলোকে তা কিনে নিতে হবে। তবে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বিনামূল্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে প্রথমেই তা পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।

এএইচ/এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি