ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

জমজমাট নবাবগঞ্জের বাঙ্গির বাজার

ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ থেকে

প্রকাশিত : ১১:৩৬, ২৫ মার্চ ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

পূর্ব আকাশে তখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। গ্রামের কৃষকেরা ব্যস্ত জমি থেকে বাঙ্গি তুলতে। সূর্যের তাপ বাড়ার আগেই ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তুলে বিক্রির জন্য নিতে হবে হাটে। নতুবা বাঙ্গিগুলো বিক্রি করার জন্য কোন ক্রেতা পাওয়া যাবেনা। এমনই দৃশ্য ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর কূলঘেঁষে গড়ে উঠা ভাঙাভিটা গ্রামে।

বাঙ্গির ম-ম ঘ্রাণ ছড়িয়ে থাকে এই গ্রাম জুড়ে। গাঁয়ের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে গেলে বাঙ্গির ঘ্রাণ নাকে আসে। গ্রামটি এখন বাঙ্গির গ্রাম হিসাবে পরিচিত। 

সরেজমিনে গিয়ে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সকালের হাট ধরতে কৃষকদের তোড়জোড়। ক্ষেত থেকে বাঙ্গি উঠিয়ে ভ্যান ও ডালিতে রাখছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে এখানে মানুষের বসতি শুরু হয়। কৃষির ওপর ভিত্তি করেই একসময় জীবন-জীবিকা শুরু হয় এখানকার মানুষজনের। একসময় ভাঙাভিটা এলাকায় রসুন, মিষ্টিকুমড়া, মটরশুটি ও কালোজিরা চাষ হলেও বাঙ্গি চাষের পর থেকে পাল্টে যায় জীবনচিত্র।

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেকর মুক্তি মেলে বাঙ্গি চাষের মাধ্যমে। দ্রুত বদলাতে থাকে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান। সারাদেশে বিভিন্ন জাতের বাঙ্গির দেখা মিললেও ভাঙাভিটার বাঙ্গির সুনাম অনেক আগে থেকেই। তাই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভাঙাভিটা এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ করা হয় মওসুমি ফল বাঙ্গির। 

ভাঙাভিটায় দৃষ্টি যত দূর যায়, চোখে পড়ে শত শত বিঘা বাঙ্গির ক্ষেত। বাতাসের সঙ্গে নাকে ভেসে আসে বাঙ্গির ঘ্রাণ। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ভাঙাভিটার বাঙ্গি। যে কারণে সারাদেশের মানুষের কাছে ভাঙাভিটার বাঙ্গির চাহিদাও ব্যাপক। মূলত ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বাঙ্গি চাষ হয়।

দেখা যায়, প্রতিটি ঝুড়িতে ১৪-১৮টি মাঝারি থেকে বড় বাঙ্গী দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ঝুঁড়ি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাক ডাকা ভোরের আগেই বাজারে এসে হাজির হয় ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ইছামতি নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে ক্রেতাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। 

ঢাকার কাওরানবাজার, আব্দুল্লাহপুর, শামবাজার, কোরানীগঞ্জ, দোহার, মানিকগঞ্জ, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জসহ অনেক জায়গায় থেকে তারা বাঙ্গি কেনার জন্য নৌকা নিয়ে আসছে। অনেক পাইকার গাড়ি নিয়ে এসে রাস্তা থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে বাঙ্গি কেনাবেচা হয় ভোর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত আবার বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুবেলাতেই বাঙ্গির বাজার ক্রেতা বিক্রেতা দিয়ে ভরপুর থাকে।

বাঙ্গি চাষী রবীন্দ্র মণ্ডল জানান, এই মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুরো রোজার মাসে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারলে আমরা ভালো লাভবান হবো। সরকারিভাবে আমাদের প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন ঋণ দিলে করলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।

চাষী নিতাই মণ্ডল বলেন, দুইদিন আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে অনেক বাঙ্গি নষ্ট হয়ে গেছে। আর দূরদূরান্তে থেকে পাইকাররা না আসতে পারায় প্রতি ঝুড়ি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আজ বাঙ্গির চাহিদা বেশি থাকায় ঝুড়ি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। 

বাঙ্গির ক্রেতা জসিমউদ্দিন জানান, আমি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখান থেকে বাঙ্গি কিনে বিভিন্ন জায়গায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে থাকি। রমজান মাসে বাঙ্গির চাহিদা থাকার কারণে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করবো। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকলে আমাদের সুবিধা হতো। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে পারতাম।

কৈলাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা হূমায়ূন কবির বলেন, ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গি দেশের মানুষের বিপুল চাহিদা পূরণ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানকার কৃষকরা সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে আরও বাঙি উৎপাদনে উৎসাহিত হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই বছর বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে। ভাঙ্গাভিটার মাটি বাঙ্গি চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রায় ২১৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি