ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫

জনগণের বন্ধু পুলিশ: সকলের জন্য এক দৃষ্টান্ত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তারই প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর থানার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যান এক পরীক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র ২০ মিনিট আগে জানতে পারেন যে তিনি ভুল পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছেন। আর তাতেই কাঁন্নায় ভেঙ্গে পরে ঐ পরীক্ষার্থী।

বিষয়টির প্রথমে খেয়াল করেন ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা নাজনীন। ছাত্রীটির প্রবেশপত্র দেখে মেয়েটির সঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম জানান তিনি। আর এরপরেই মেয়েটিকে নিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে চলে আসেন। শরণাপন্ন হন বিদ্যালয়ের বাইরে যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তার।

ঘটনা শুনে পুলিশের ওই উপ সহকারী পরিদর্শক মো.শরিফুল ইসলাম নিজেই তার মোটর সাইকেলে করে ঐ শিক্ষার্থীকে পৌঁছে দেন সঠিক পরীক্ষা কেন্দ্রে। শুধু কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। নিশ্চিত করেছেন ঐ শিক্ষার্থীর সঠিক পরীক্ষা কক্ষও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “‘প্রথমে নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুলের (সঠিক পরীক্ষা কেন্দ্র) লাইব্রেরিতে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে সমস্যার কথা বলি। পরে অন্য শিক্ষকের মাধ্যমে মেয়েটিকে পরীক্ষার রুমে নিয়ে যাই। এরপর আমি চলে আসি”।

আপনার দায়িত্ব ছিল আগের পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে যানজট নিরসনে কাজ করা। ঐ শিক্ষার্থীকে আপনি নিজে নাও নিয়ে যেতে পারতেন। তবুও গেলেন। কেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে ২০০০ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করা এই কর্মকর্তা বলেন, “‘হ্যাঁ, আমি না করলেও পারতাম। কিন্তু চিন্তা করলাম এটা মানবিক বিষয়। মেয়েটি হয়তো পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই ওকে নিয়ে ছুটে যাই। পরীক্ষার হলে ওকে বসিয়ে দিয়ে স্বস্তি পেলাম। খুব ভালো লাগছে”।

শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক আর পুলিশের এই অনবদ্য ভূমিকার পেছনে আছেন আরেক চরিত্র। স্মার্টফোন হাতে থাকা মেহেদী হাসান শাওন তাৎক্ষণিকভাবে বনে যান ‘সাংবাদিক’। পুলিশের এই অনন্য ভূমিকার বিস্তারিত তথ্য নেন তিনি। নিজ মুঠোফোনে ছাত্রীটিকে মোটরসাইকেলে করে পুলিশ কর্মকর্তার সঠিক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ছবিও তোলেন।

কেন ছবি তুললেন আর তথ্য নিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘শতকুঁড়ি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতি শাওন বলেন, “পুলিশ বাহিনীর নানান কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু প্রেক্ষাপট যেমনই হোক তাদের মধ্যেও ভাল, সৎ সদস্যও তো আছেন। আমি ছবিটা তোলার সময় চিন্তা করেছি যদি এটা দেখে অন্যরাও, সে পুলিশ হোক বা না হোক, তারাও যেন ভালো কাজে উৎসাহিত হয়”।

আর সেই ছবিই ভাইরাল হয় ইন্টারনেটে। আর এরপর থেকেই পুলিশ বাহিনীর প্রশংসায় একের পর এক মন্তব্য আসতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ফেসবুকের অন্যতম বৃহৎ সক্রিয় গ্রুপ ‘ডু সামথিং এক্সেপশনাল’ এ বিষয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় ফেসবুকে। গ্রুপের অন্যতম অ্যাডমিন জেবিন ইসলাম ঐ পোস্টটি করেন।

সেই পোস্টে জেবিন লেখেন, “নিঃসন্দেহে এটি একটি এক্সেপশনাল কাজ। যারা পুলিশের মধ্যে ভালো গুণ খুঁজে পান না…তাদের জন্য এই মানবসেবা অনুপ্রেরণা হোক। পুলিশের এমন সেবাকে স্যালুট জানাই। ফেসবুক যে ভালো কাজে ব্যবহৃত হয় সেটিও এমন খবরের উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত”।

প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা মন্তব্য করেন, “নিঃসন্দেহে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল। ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ”।

এসএইচএস/টিকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি