ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

লাউয়াছড়া বনে অগ্নিকান্ডে তদন্ত কমিটি গঠন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৯:১১, ২৫ এপ্রিল ২০২১

মৌলভীবাজারে লাউয়াছড়া বনে অগ্নীকান্ডের সময় বনের প্রাণীগুলো দিকবেদিক ছুটাছুটি করে। ক্ষতি হয় জীববৈচিত্রের। বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখছে বন বিভাগ। ইতিমধ্যেই এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত হয়েছে দুই সদস্য তদন্ত কমিটি। আর দায়িত্বভার পেয়ে সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে কমিটি। 

মৌলভীবাজার বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, লাউয়াছড়া বনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৌলভীবাজার জীব বৈচিত্র ও বন্য প্রাণী সংরক্ষন কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সারোয়ার ও মৌলভীবাজার বন মামলার পরিচালক ফরেষ্টার জুলহাসএর সমন্বয়ে দুই সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৩দিনের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বন বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, তদন্তভার পেয়ে সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে এ তদন্তটিম। ইতিমধ্যে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কথা বলেছেন ওই এলাকায় যে শ্রমিকরা ওই দিন কাজ করছিলো তাদের সাথে, বন বিভাগের লাউছড়া ও বাঘমারা ক্যাম্পের স্টাফদের সাথে, ঘটনার পর পর উপস্থিত থাকা সাংবিাদিকদের সাথে। 

তদন্ত টিমের এক সদস্য ফরেষ্টার জুলহাস জানান, তাদের তদন্ত চলেছে শেষ করতে সময় লাগবে। তবে প্রাথমিক ভাবে শ্রমিকদের দ্বারা আগুন লাগার কোন আলামত পায়নি তারা। পরিপূর্ণ তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত সঠিক ভাবে বলা যাবেনা।

এদিকে বনে যখন আগুন লাগে তখন অনেক বন্যপ্রাণী সেখানে ছুটাছুটি করে এমন প্রশ্নে বন বিভাগ জানায়, এটি লাউয়াছড়ার বডার। ওখানে তেমন গাছগাছালি নেই। বন্যপ্রাণীর উপস্থিতিও ওখানে তেমন একটা দেখা যায়না। তবে ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় এক সংবাদকর্মী নিজ চোখে বন্যপ্রাণীদের ছুটে যেতে দেখেছেন। তিনি ছবিও তুলেছেন। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক সঞ্জয় দেবরায় জানান, তিনি ঘনটাস্থলে অবস্থানকালে হঠাৎ তার চোখে পড়ে অনেকগুলো প্রাণী দৌড়াচ্ছে। সাথে সাথে তিনি ক্যামেরা বের করে ছবি তুলেন। তিনি জানান, অধিকাংশই বাচ্চা। তাদের সাথে বড় প্রাণীটি ক্যামেরা বের করতে করতে চলে যায়। ছবিতে দেখা যায় একদল বন্য শুকরের বাচ্চা। অগ্নিকান্ডের পাশের খোলা জায়গা দিয়ে পাকা রাস্তা পার হয়ে অন্যপাশে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য মীর্জা মেহেদী সারোয়ার জানান, তারা এ বিষয়টিও তদন্তে আনবেন।

এ দিকে কি কারনে বনে আগুন বন বিভাগ এখনও এর হদিস পায়নি। তবে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমীসহ অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। 
কেউ বলছেন হতে পারে সিগারেট থেকে, কেউ বলছেন বন পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও দ্রুত পরিস্কার করার জন্যও করতে পারেন। কিন্তু বন বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে কোন শ্রমিক আগুন লাগায়নি বলে প্রমান মিলেছে। তাছাড়া সিগারেটের আগুন লাগলে একই পাহাড়ের পৃথক স্থানে আগুন ধরার কথা নয়। এদিকে আগুনের সুত্রপাত পাহাড়ের পেছন দিক থেকে যে দিকে পাকা সড়ক তার বিপরীতে। বন বিভাগ জানায়, এটি বনের শেষ প্রান্থ। যেখানে আগুন লেগেছে তার বিপরীতে বন বিভাগের জমি নিয়ে জনৈক ব্যক্তির সাথে ঝামেলা হয়। 

অন্যদিকে ওই জমি দীর্ঘদিন খালি পড়েছিলো। অনেকদিন সেখানে তেমন কোন গাছপালা নেই। বেশিরভাগই তৃণ জাতীয়। সম্প্রতি ওই জায়গায় গাছ লাগানো পরিকল্পনা নেয় বন বিভাগ। আর ওই জায়গায় বৃক্ষরোপন হলে জায়গাটি সার্বক্ষনিক বন বিভাগের নজরে চলে যাবে। তাই ওই জায়গার প্রতি দৃষ্টি পড়া ভুমি দখল চক্র এখানে আগুন দিতে পারে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা সালাউদ্দিন আহমদ জানান, ওই এলাকায় কাজ করা শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো বেড়িয়ে আসেতে পারে বন বিভাগের কাজের সাথে সম্পৃক্ত কারো নাম। একই কথা জানান ট্যুরগাইড আহাদও। 

এদিকে সাংবাদিকদের হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখাযায়, বনে যখন আগুন জ্বলে তখন শ্রমিকরা বসে আছে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি এক শ্রমিককে কে আগুন লাগিয়েছে ? জানতে চাইলে ওই শ্রমিক জানায়, আগুন লাগিয়েছে ওই জমির মালিক যার নাম মহসীন। 

এদিকে সকালে সরজমিনে দেখাযায়, বেশ কিছু উদ্ভিদ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেখানে বসবাস করতো বিভিন্ন প্রকারের প্রজাপতিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। রয়েছে অনেক সাপও। পুড়েছে বেশ কিছু বেত ও বাঁশও। লাউয়াছড়া বনটি নানান জীববৈচিত্রে ভরপুর । এর পরিমান ১২৫০ হেক্টর।  ১৯৯৬ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন বিভাগের হিসেব মতে, উদ্ভিদ আর জীববৈচিত্রে ভরপুর এই বনে ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচর, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও অসংখ্য কীট-পতঙ্গ রয়েছে। এই বনে বিরল প্রজাতির উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া হনুমান, মায়া হরিণ ও বন্য শুকর দেখতে পাওয়া যায়। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি