ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মিষ্টি কুমড়ার বিচি খেলে কি উপকার পাবেন

প্রকাশিত : ১৯:১০, ২৯ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৪:০১, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ লিখতে বসে ভাবছিলাম এমন কোন বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের অজান্তেই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পরে যাচ্ছে অথচ সামান্য সচেতনতায় অনেক বেশি সফল খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্ট করে আমরা সুস্থ ও রোগহীন জীবন কাটাতে পারি।

আমাদের ডায়েট বা খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত খাবারে, দৈহিক চাহিদা মেটাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সব পুষ্টি উপাদান এর সমন্বয় করা। খাবারের কম্বিনেশন অর্থাৎ কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবার খেলে পুষ্টি সরবরাহ সঠিক হবে এবং কিভাবে খেলে তা আমাদের দেহের চাহিদা মিটিয়ে সঠিক পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখবে, সেই দিকে যদি আমরা আলোকপাত করি, তাহলে বহুলাংশেই অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তাই প্রকৃতির সব ধরনের খাবার গ্রহণ অত্যাবশ্যক। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে খাদ্য হিসাবে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার সবগুলোই কোন না কোন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের খাবারে মুলতঃ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস এর উপস্থিতি নিশ্চিত হলে এবং পুষ্টি উপাদান সমূহের সঠিক শোষন এবং বিপাক হলেই ব্যালেন্স ডায়েট বা সুষম খাদ্যও নিশ্চিত হয়। তাছাড়াও সুস্থতা রক্ষায় পর্যাপ্ত তরল বা পানির গ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।


তবে এক্ষেত্রে একটি জরুরি বিষয় হলো, একই ধরনের খাবারের `পুষ্টি` বার বার গ্রহণ না করে বিভিন্ন উৎসের খাবার থেকে পুষ্টির সরবরাহ হলে, তাতে ব্যালেন্স ডায়েট বা সুষম খাদ্যতালিকা অনেক বেশি উন্নতমানের হয়। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবার কে পুষ্টি সরবরাহে একধাপ এগিয়ে নিতে স্বাভাবিক খাবার ( মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার, শাকসবজি ও ফলমুল) এর পাশাপাশি বিভিন্ন সহজলভ্য অথচ অতিমাত্রায় পুষ্টিকর খাবারও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিভিন্ন রকমের বাদাম ও বিচি জাতীয় খাবার। যা প্রতিদিন খুব অল্প পরিমানে গ্রহণ করেও আমরা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পারি।


এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিষ্টি কুমড়ার বিচি, যা আমরা প্রায়শই সবজির আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেই। এখন আসি এই মিষ্টি কুমড়ার বিচি কেন এত উপকারী।

• এটি এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।

• কিছু কিছু ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে এর ভুমিকা অপরিসীম।

• প্রোস্টেড এবং ব্লাডারের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

• এতে (১০০গ্রামে) প্রোটিন আছে ২৯.৮৪ গ্রাম, যা আমরা এক পিস (১০০গ্রাম) মুরগীর মাংসে পেয়ে থাকি। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট মানের এবং যথেষ্ট পরিমানের প্রোটিন পেতে কম খরচে এটি একটি সহজলভ্য খাবার।

• এতে (১০০ গ্রামে) প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম (৭৮৮মি.গ্রা.) আছে যা উচ্চরক্তচাপ এর রুগীদের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী এবং অন্যান্য ট্রেস এলিমেন্ট ( দেহে খুব অল্প পরিমানে প্রয়োজন হয় কিন্তু অত্যাবশ্যক) অর্থাৎ কিছু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সহ বিশেষ করে প্রচুর ম্যাগনেসিয়ামও (৫৫০ মি.গ্রা.) আছে যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষায় ভুমিকা রাখে।

• হার্ট এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও এর ভুমিকা অপরিসীম। কারণ এতে (১০০ গ্রামে) গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড পলি আনস্যাচুরেটেড (১৯.৮৫ গ্রাম) এবং মনো আনস্যাচুরেটেড (১৫.৭৩ গ্রাম) ফ্যাটি এসিড আছে যা হার্ট এবং মস্তিষ্কের সুস্থতায় অত্যাবশ্যক। তাছাড়া ও ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য কিছু পুষ্টি উপাদানের শোষনেও ভুমিকা রাখে।

• এটি ডায়াবেটিস এ সুগার লেভেল কে ও নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।

• এটি প্রচুর পরিমান ফাইবার সমৃদ্ধ যা কিনা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক একটি খাবার।
সুতরাং আমরা যদি এই গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টি কুমড়ার বিচির খাবারটি ফেলে না দিয়ে, আমাদের প্রায় প্রতিদিনের খাবারে অল্প পরিমান (১২/১৫ পিস বীচি) সংযুক্ত করি, তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের অনেক শারীরিক অসুস্থতার সম্ভাবনা কমে যায়। সাথে সাথে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান এর শোষণ ও নিশ্চিত হয়।

এখন আসি কিভাবে এই মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাবেন? সাধারণত পাকা মিষ্টি কুমড়ার বিচিই খাওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট। মিষ্টি কুমড়ার বিচি সংগ্রহ করে ভালভাবে ধুয়ে শুকনো করে তাওয়া বা ফ্রাই প্যানে টেলে মচমচে করে ভেজে (অবশ্যই তেল ছাড়া) কাচের বোয়ামে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিদিন শুধুমাত্র ভাজা বিচি চিবিয়ে, মিক্সড ফলের সাথে অথবা সালাদে যোগ করে খাওয়া যায়।

অনেক ক্ষেত্রে ব্লেন্ডারে গুড়ো করে বিভিন্ন ভর্তায় মিশিয়ে, স্যুপে মিশিয়ে অথবা সরাসরি ভর্তা বানিয়ে, সবজি রান্নায় ও মিশিয়ে খাওয়া যায় এবং শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের খিচুড়ি বা অন্য তরল খাবারে মিশিয়ে বাড়তি পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

লেখকঃ সোনিয়া শরমিন খান
নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান
সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিমিটেড


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি