ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

রোহিঙ্গা সংকটের জন্য পাঁচ বিশ্বমোড়ল দায়ী: জাতিসংঘ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১১:৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যলঘু মুসলমানদের ওপর ওই দেশের সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে তারা। আর এই রোহিঙ্গা নিধন বন্ধ না হওয়ার জন্য বিশ্বের পাঁচ মোড়লকে দায়ি করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যায়ীদ রা’দ আল হুসেইন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রকে এর জন্য উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ বলে তিনি দাবি করেছেন। সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৩৭তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বসংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এমন বক্তব্য দেন।

ওদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও অব্যাহত নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে। দেশটির ওপর বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক বাহিনীর (তাতমাদো) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরো জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ইইউ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ফেডেরিকা মঘেরিনির প্রতি আহ্বান জানায়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারই জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতরের প্রধান। গত বছর আগস্ট মাসে রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গা নিধন শুরুর পর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে তিনি একে ‘আক্ষরিক অর্থেই জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এরপর নভেম্বর মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে তিনি মিয়ানমারে গণহত্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতরের প্রধানের এমন বক্তব্য ও শঙ্কা সত্ত্বেও পাঁচ পরাশক্তির মতপার্থক্যের কারণে নিরাপত্তা পরিষদ এ সংকট সমাধানে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এমনকি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ মিয়ানমার পরিস্থিতির খোঁজ নিতে যে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অং সান সুচির সরকার তাও প্রত্যাখ্যান করে দেশটিতে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সুচির সরকার মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার (বিশেষ দূত) ইয়াংহি লিকেও দেশটিতে ঢুকতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যায়ীদ রা’দ আল হুসেইনের বক্তব্যে পাঁচ বিশ্বমোড়লের সমালোচনা ছিল স্পষ্ট।

যায়ীদ রা’দ বলেছেন, নিরপরাধ মানুষের যন্ত্রণা প্রশমনে যখন ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, তখন ‘ভেটো’ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই পাঁচ স্থায়ী সদস্য (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) তা আটকে দেয়। বিশ্বে অব্যাহত যন্ত্রণার দায় ওই পাঁচ দেশের। নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কাছে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

এর আগে গতকালই একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার সময় রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। অতীতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বেশ কবার মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বঞ্চিত-অবহেলিত গোষ্ঠী। মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে, যা জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মানবাধিকার বিলাসিতা নয়। বিশ্বে সবার অধিকার সমান। কোনো অজুহাতেই কোনো রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।

মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার যায়ীদ রা’দ আল হুসেইন বলেন, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭০তম বার্ষিকীর এই বছরে যখন তিনি সবার অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন, তখন বিশ্বে নিপীড়ন আবারও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। দুর্গ রাষ্ট্র (সিকিউরিটি স্টেট) আবারও ফিরে এসেছে। মৌলিক স্বাধীনতা থেকে পিছু হটেছে বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল।

যায়ীদ রা’দ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন, বুরুন্ডি, ইয়েমেনের তাইজ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কাসাইস ও ইতুরি, পূর্বাঞ্চলীয় ঘউটা ও দখলকৃত সিরিয়ার অন্যান্য এলাকা ভয়ংকরতম বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর কারণ ক্রমবর্ধমান আতঙ্ক প্রতিরোধে শুরুতে ও সম্মিলিতভাবে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়া।

তথ্যসূত্র: সিবিএস নিউজ।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি