ঢাকা, সোমবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৫

‘পা দিয়ে চেপে ধরে মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৫, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও ‘পরিকল্পনাকারী’ উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিনহার বুকের বাম পাঁজরে জুতা পরা পা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন তিনি। 

রোববার (২৩ নভেম্বর) পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ওই হত্যা মামলার রায়ে এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

মোট ৩৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান। রায়ে একমত পোষণ করেছেন একই বেঞ্চের বিচারপতি মো. সগীর হোসেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ আলোচ্য হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী ও ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সে ভিকটিম মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের বুকের বাম পাঁজরে জুতা পরা পা দিয়ে জোরে আঘাত করে তার বুকের দুটি হাড় ভাঙাসহ ভিকটিমের গলার বাম পাশে জুতা পরা পা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে, যা প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যসহ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন (প্রদর্শনী-১০) দ্বারা প্রমাণিত।’

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য দণ্ডপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট আসামিদের অপরাধ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও শক্তিশালী পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য পর্যালোচনান্তে প্রমাণিত হয়েছে যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি লিয়াকত আলী পূর্ব পরিকল্পনা মতে, ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নিরস্ত্র ভিকটিম মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার (লিয়াকত আলীর) হাতে থাকা সরকারি পিস্তল দিয়ে ভিকটিমের শরীরের ঊধ্বাংশের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পরপর চারটি গুলি করেছে এবং ওই গুলির আঘাতে ভিকটিমের মৃত্যু হয়েছে মর্মে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে (প্রদর্শনী-১০) উল্লেখ করা হয়েছে।’

‘সেহেতু আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে বিচারিক আদালত সঠিকভাবে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।’

‘এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, মো. নুরুল আমিন, মো. আয়াজ ওরফে আয়াছ ও মো. নেজামুদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও সাধারণ অভিপ্রায়ের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারিক আদালত তাদের অপরাধের ধরন বিচার বিশ্লেষণ করে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বর্ণিত মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন—যা সঠিক ও যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি।’ 

সে কারণে রায়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও অবকাশ নেই বলে উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত। গত ২ জুন হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও ট্রায়াল কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দণ্ডিতদের আপিল শুনানি শেষে এই রায় দেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার দায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি