ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ আগস্ট ২০২৫

দণ্ডিতদের সংশোধনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

পরিবারে থেকে সাজা ভোগ ১২ কয়েদির

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

আদালতের দেয়া সাজা ভোগ করছেন, তবে তা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকে। রাজশাহীতে এমন সুযোগ পেয়েছেন ১২ কয়েদি। অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে সমাজসেবা অধিদফতরের আয়োজনে রাজশাহীর আদালত অভিনব এ ব্যবস্থা চালু করেছেন। উদ্দেশ্য ছোটখাটো অপরাধীকে সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেয়া। এটিকে বলা হচ্ছে ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থা। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মহল্লার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়েছিলেন নওহাটা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রত্যয় কুমার সাহা। তিনি নওহাটা পৌর এলাকার মন্দিরপাড়ার বাসিন্দা মৃত প্রভাত কুমার সাহার ছেলে। অভাবের সংসারে মা ইতি সাহা ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই বেসামাল ছিলেন। এরই মধ্যে ছেলে প্রত্যয়ের মাদকাসক্তির খবরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। মাদকের টাকা জোগাতে শেষ পর্যন্ত এ ব্যবসায়ও লেগে যায় প্রত্যয়। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যায়।

আদালতের প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে গোদাগাড়ী থেকে বাসে রাজশাহীতে ফেরার সময় চাপাল পুলিশ চেকপোস্টে ৪৫টি ইয়াবাসহ ধরা পড়ে প্রত্যয়। এ মামলায় ছয় মাস কারাগারে কাটে তার। মামলার বিচার শেষে ৩০ আগস্ট রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তবে আদালত তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থার আওতায় পরিবারের হাতে তুলে দেন।

প্রত্যয় এখন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন, তবে তাকে নির্ধারিত সময়ে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতে হচ্ছে। এভাবে প্রত্যয় সাহাকে দিয়েই রাজশাহীর আদালত ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থা চালু করেন। পরে এই প্রবেশন ব্যবস্থায় আরও ১১ অপরাধীকে পরিবারে পাঠিয়েছেন আদালত।

এদিকে স্কুলছাত্র প্রত্যয় সাহাকে পরিবারের হাতে দেয়ার বিষয়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কয়েদি প্রত্যয় কুমার সাহাকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠালে সমাজে মাদক সেবনের হার কমে যাবে বলে মনে করেন না আদালত। বরং তাকে সংশোধনের সুযোগ দিলে এটি হতে পারে একটি মহৎ দৃষ্টান্ত। প্রত্যয়কে দেখে অন্যরাও মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা পাবে।

আদালত আরও বলেন, পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় প্রত্যয় সাহা তার বাবার অবর্তমানে পরিবারের জন্য কিছু দায়িত্বপালন করতে পারবে। পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে পারবে। তাকে কারাভ্যন্তরে রাখলে একটি গরিব পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)-এর টেবিল ৯(ক) ধারায় প্রত্যয়কে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে ভবিষ্যতে সে মাদক কেনাবেচা, হেফাজতে রাখা, সেবন বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে অংশ নেবে না মর্মে মুচলেকায় তাকে ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থায় দেয়া হয়েছে। আদালত বলছে, প্রত্যয় প্রবেশনে থেকে যদি আবার একই কর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে তাকে পরিপূর্ণ সাজা ভোগ করতে হবে।

মা ইতি সাহা জানান, প্রবেশনে আসার পর মাঝেমধ্যেই প্রবেশন অফিস থেকে তার খোঁজ নেয়া হয়। সে-ও গিয়ে দেখা করে আসে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে প্রত্যয়ের জীবন। মাদকের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসছে সে। ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট তার সাজা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রত্যয় সাহা ছাড়াও প্রবেশন সুবিধায় সাজা পেয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকছেন আরও ১১ জন। তারা হলেন- নওহাটার চৌবাড়িয়া মহল্লার জামিরুল ইসলাম, মো. বাবু, সামাদ আলী ও তার ভাই হামেদ আলী, তানোরের পাঁচন্দরের বানিয়াল গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও হাসান আলী, চারঘাটের জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের সিয়াম আলী ওরফে সেন্টু, তানোরের তেলোপাড়ার নওশাদ আলী, চন্দনকোঠা গ্রামের ইউলিয়াম বেশরা, হাতিশাইল পারিশো গ্রামের আলতামাস আলী ও গোদাগাড়ীর মাটিকাটার জসিম উদ্দিন।

প্রবেশন অফিস বলছে, প্রবেশনকালীন তারা শৃঙ্খলমুক্ত জীবনযাপন করছেন। প্রতিবেশীরাও তাদের চরিত্রে নেতিবাচক কিছু লক্ষ করেননি। এছাড়া মুচলেকার শর্ত মেনে তারা সংশোধন হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন।

আইনজীবীরা বলছেন, দণ্ডবিধি ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫ ধারায় রাজশাহীর বিভিন্ন আদালত প্রবেশন সুযোগ পাওয়াদের লঘুদণ্ড দিয়েছিলেন। তারা জানিয়েছেন, ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা ছিল অনাকাক্সিক্ষত। এজন্য তারা অনুতপ্ত। আগামী দিনে এমন অপরাধে না জড়ানোরও অঙ্গীকার করেছেন তারা।

রাজশাহীর প্রবেশন অফিসার নূর আলী হাসান জানান, প্রবেশন প্রক্রিয়ায় অপরাধীর শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাবদ্ধ না করে সমাজের থাকার সুযোগ দেয়া হয়। প্রথম ও লঘু অপরাধে জড়িত শিশু-কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে শর্তসাপেক্ষে এক থেকে তিন বছরের জন্য প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন আদালত।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি