“বাড়ি ফিরে পরিবারকে কি জবাব দেবো?”
প্রকাশিত : ১৫:১১, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৫:১২, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

“অনশনে আসার সময় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে এসেছিলাম বাবা, (তার সন্তান) এবার হয়তো তোমার আশা পূরণ করতে পারবো। আমার উচ্চ শিক্ষা বৃথা যাবে না। স্কুলটি এমপিওভূক্ত হলেই আমাদের আর অভাব থাকবে না। তবে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভূক্তির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না আসায়, এখন আমার কপালে চিন্তার ভাঁজ। বাড়ি ফিরে পরিবারের কাছে কি জবাব দিব আমি? তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয় দাবি আদায় করবো, নয় মরবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফিরবো না”
গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভূক্তির ব্যাপারে শুরু হওয়া আন্দোলনে অংশ নিয়ে আজ শুক্রবার একুশে টেলিভিশন অনলাইনের কাছে নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন স্কুল শিক্ষক শহিদুল্লাহ কায়সার। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ননএমপিওভূক্ত শিক্ষকরা রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভূক্তির দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যান।
এসময় তিনি বলেন, “লোকে রাস্তায় দেখলে বড় করে সালাম দেয়, স্যার বলে সম্মান করে। এসব শুনে মনটা গর্বে ভরে যায়। কিন্তু বাসায় ফিরে যখন অভিভাবক হিসেবে নিজের ব্যর্থতার হিসেব মেলাতে যায়, তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। কারণ গত ১৭টি বছর ধরে আমি কলুর বলদের মতোই পরিশ্রম করে গেছি। বিনিময়ে এতটুকুও কোন পারিশ্রমিক পাইনি। সরকারের কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক তো পাই-ই নি, বরং কোন বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হয়নি।”
এদিকে টানা ছয়দিন ধরে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শহিদুল্লাহ কায়সার। জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় অনশন চালিয়ে যাওয়া তার জন্য দূরূহ হয়ে ওঠেছে। তবুও দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে শহিদুল্লাহ কায়সার। তার ভাষ্য, মরে যাবো, তবু স্বীকৃতি না নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনশনে আসার সময় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে এসেছিলেন, এমপিওভূক্তির স্বীকৃতি পেলে আর কোন অভাব আমাদের থাকবে না।
তবে ছয়দিন পার হয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন আশ্বাস বা ঘোষণা না আসায় একেবারেই মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন শহিদুল্লাহ কায়সার। তার প্রশ্ন, “কী মুখ দেখাবেন বাড়ি ফিরে সন্তানের কাছে, কী মুখ দেখাবেন তার পরিবারের কাছে। এ চিন্তায় তিনি এখন ভাবছেন শেষ পর্যন্ত কিছুই যদি না হয়, তবে যা হবে তা হলো-পৃথিবীতে কায়সার নামক আর কোন অর্থাভাবী শিক্ষক বেঁচে থাকবে না।”
কায়সার বলেন, “২০০১ সাল থেকে আমি ময়মনসিংহের ভালুকায় চামিযাদী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। প্রতিবছরই বুকে স্বপ্ন বুনি, এবার হয়তো আমার প্রতিষ্ঠান এমপিও হবে। কিন্তু এভাবে ১৭টি বছর পেরিয়ে গেল, আজও তা এমপিওভূক্ত হয়নি। আমার ছেলের বয়স ১১ বছর। বর্তমানে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে সে। আমি অনার্স মাস্টার্স করে আজ ১৭টি বছর ধরে বেকার শ্রম দিচ্ছি। আমার ছেলেও কি তবে এমন অনিশ্চিত অর্থকষ্টের জীবন পার করবেন? সেও চাকরি পাবে না? পেলেও কি আমার মতো বেতন পাবে না? তবে কি সেও তার জীবনে পরিবারের কাছে এমন ছোট হয়ে অপমানকর জীবন পার করবে? যদি তাই হয়, তবে কি লাভ, শিক্ষিত হয়ে? তারচেয়ে কি ছেলেকে অন্য কোন কাজে যোগ দিতে বলবো?এমন হাজারও প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কায়সারের মতো আরও অনেক ননএমপিওভূক্ত শিক্ষকের মনে আজ এই প্রশ্ন।
জানা গেছে, টানা অনশনে এ পর্যন্ত ১১৫ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮(ক) নম্বর বেডে পাবনার বুধাহাটা মহিলা কলেজের শিক্ষক শফিকুল, ৮(খ) নম্বর বেডে রংপুরের খামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাভলু মন্ডল, কুড়ি গ্রামের শিক্ষক নান্টু শেখ, ১১ নম্বর বেডে খুলনার কামার খোলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুরঞ্জিত মন্ডল ভর্তি আছেন। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আবারও অনশনে যোগ দিয়েছেন।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, আমাদের এ অনশন ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা না আসবে। আমরা অপেক্ষায় আছি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন এবং আমাদের যৌক্তিক দাবি পূরণে তিনি সদয় হবেন।
আরকে//
আরও পড়ুন