ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

রোজিনার আরও অবনতি, স্বজনদের উদ্বেগ   

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:২৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২২:৩৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

ময়মনসিংহের ধুবাউড়া থানার বুশগাও গ্রামের রসূল মিয়ার ছয় মেয়ে এক ছেলের মধ্যে রোজিনা দ্বিতীয়। দরিদ্র রসূল মিয়ার পরিবারে সারা বছর অভাব লেগে থাকে,পরিবারের নয় সদস্যের ভরণপোষণের খরচ যোগাতে অক্ষম তিনি।

পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার কথা ভেবে তার মেয়ে রোজিনা আক্তার(১৮)কে দশ বছর আগে ঢাকায় সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে দেয় তার পরিবার। তার পরিশ্রমের টাকায় চলে পুরো পরিবার।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রোজিনা গত শুক্রুবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিসি বাসের চাপায় পা হারিয়ে রোজিনা এখন অস্তগামী সূর্যের নাম।

রোজিনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটর এর (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গণি মোল্লাহ জানান,‘বাসচাপায় আহত রোজিনাকে বাঁচাতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, বাকিটা আল্লাহ্‌র হাতে। তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাস চাপায় পা এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওর জীবনটাই এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ডান পা কেটে ফেললেও সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’ 

সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘রোজিনার চিকিৎসকরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সার্বক্ষণিক পাশে থেকে আমরাও প্রয়োজনীয় সব সহায়তা করে যাচ্ছি। প্রথমবার অস্ত্রোপচারে রোজিনার ডান পায়ের উরু থেকে কেটে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ডান পায়ে পচন ধরায় রোববার আবারও অস্ত্রোপচার করে বাকি অংশটুকু ফেলে দিতে হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ওর অবস্থা বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। শরীর থেকে জ্বর কমছে না। এটাকে বলা হয় সেপ্টিসিমিয়া, এটা খুবই ভয়ের কারণ।’  

‘জীবনের কাছে তার মিনতি বাঁচতে চাই। শরীরে অসহ্য ব্যাথা তার সহ্য হচ্ছে না। দুঃখ করে বলছে,‘আমি কি পাপ করেছি যার কারণে আমি পা হারালাম।’  

তার এমন প্রশ্নের উত্তর হয়ত কারো জানা নেই তবে সে ফিরে আসবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে তার স্বজনদের মধ্যে। ওয়ার্ডে অপেক্ষমাণ রোজিনার চার চাচা সুরুজ আলী, লাল মিয়া, আলামিন, নয়ন মিয়া আর ফুফু শেফালীসহ অসংখ্য স্বজনেরা নীরবে নিবৃতে কেঁদেই চলছেন। একই সাথে রোজিনার আত্মচিৎকার আর হৃদয় নিংড়ানো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না তার পরিবারের সদস্যরা। 

হাসপাতালে শুয়ে থাকা রোজিনা পা মেলতে না পেরে বলছে,‘ফুফু আমি পা মেলতে পারি না কেন? আমি সোজা হতে পারছি না কেন? ওরা আমাকে কি ওষুধ দিয়েছে আমার নেশা এখনও কাটে না কেন? আমি নড়তে পারি না কেন? আমি কি পাপ করেছি।

ক্ষুধার যন্ত্রণায় সে বলছে, ‘আমি ভাত খাব,আমাকে ভাত খেতে দাও’   

তার এত সব প্রশ্নের উত্তর হয়ত কারো জানা নেই? মেয়ের সামনে চোখের জল আড়াল করলেও বুকফাটা আর্তনাদে তার বাবা এই প্রতিবেদককে বলেন,‘আপনারা একটু ডাক্তার কে বলেন না একটু ভালো করে দেখতে, আমার রোজিনা মা বেঁচে ফিরবে তো? 

তিনি আরও জানান,‘মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তার মা (রাবেয়া খাতুন) পাগলপ্রায়। মেয়ের জন্য অঝরে কাঁদছে।’    

দুর্ঘটনা নিয়ে রোজিনা বলেন,‘দুইবার আমার পায়ের উপর দিয়ে চাকা গেছে। আমি শুধু বলছিলাম, আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান। এরপর আর কিছু  বলতে পারব না। অনেক মানুষকে বলছি আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে । অনেক মানুষকে বলছি। সার্জেন্টও ছিল। কিন্তু ধরে নাই।’

পরে অবশ্য কয়েকজন মিলে রোজিনাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১টার দিকে তার ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করে পা কেটে ফেলা হয়।

রোজিনার বাবা রসূল মিয়া বলেন,‘আমার সাত ছেলে মেয়ের মধ্যে রোজিনা দ্বিতীয়। মেয়ে অক্ষম পিতার রুটি রুজির চালাত। প্রতি মাসে আট নয় হাজার টাকা সে পাঠাতো। রোজিনার টাকা দিয়ে তাকিয়ে থাকে পরিবারের বাকি লোকজন। তার টাকায় তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা আর তার ভাইবোনদের ভরণপোষণ চলে। আজ সে মেয়ে মৃত্যু পথযাত্রী। তার যন্ত্রণা আর সইতে পারি না। স্যার মেডাম আমার মেয়েকে ছোটবেলা থেকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করে আসছে। এখনো তারা প্রতিদিন দেখতে আসে। চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছে।’

রোজিনার চাচা সুরুজ মিয়া কেঁদে কেঁদে বলেন,‘আমাদের এই মেয়ের কারণে একটা পরিবার চলে, তার এই অবস্থা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি। সে বেঁচে থাকুক এটাই আমরা চাই।’  

রোজিনার চিকিৎসায় ওই হাসপাতালে যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণি মোল্লা।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বান্ধুবিদের সাথে দেখা করে বাসায় ফেরার পথে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি ফুটওভার ব্রিজের কাছে রোজিনা রাস্তা পার হওয়ার সময় বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। যাত্রীরা এবং পুলিশ মিলে বাসটিকে আটক করে। রোজিনা নিকেতনের ১২ নম্বর সড়কে গাজী টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইসতিয়াক রেজার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। 

এসি

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি