ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

২২ হাজার পরিবারকে বিদ্যানন্দ ও এসএএএফ’র সহায়তা 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২৮, ৬ মে ২০২০

Ekushey Television Ltd.

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মোট ২২ হাজার পরিবারকে সাহায্য প্রদানের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেছে সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন (এসএএএফ)। প্রাথমিকভাবে ‘এক টাকার আহার’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিশোর কুমার দাশ অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবীর সহযোগিতায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।   

কোভিড-১৯ মহামারিতে বিদ্যানন্দই প্রথম অসহায় জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত সংস্থাটি মোট ২০০,০০০ পরিবারকে খাবার প্রদান করেছে এবং প্রতিদিন ১৫,০০০ মানুষের খাদ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। যথাযথ খাবার এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি এখন অব্দি সংস্থাটি মোট ৫,০০০ পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এবং ২০,০০০ মাস্ক বিতরণ করেছে। প্রতিদিন চট্টগ্রামে মোট ৯,০০০ পরিশোধক বিতরণ করছে বিদ্যানন্দ।

শিক্ষা, খাদ্য, খুশি- ছোটবেলায় যে জিনিসগুলো পাননি সেগুলোই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উপহার দিতে চাইতেন কিশোর কুমার দাশ। পথশিশুদের জীবন থেকে ক্ষুধা এবং অনিশ্চয়তাকে দূর করতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ২২শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে স্বেচ্ছাসেবী দাতা সংস্থা হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিক্ষাগত সাহায্যের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বিদ্যানন্দকে নিয়ে পথচলা শুরু করেন কিশোর কুমার দাশ। ক্রমান্বয়ে সংস্থাটি পথশিশু এবং বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের খাবারের ব্যবস্থা করা শুরু করে।

তবে তখনো পথচলা অনেকটাই বাকি! যেহেতু বেশিরভাগ সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার কার্যক্রম ঢাকা কেন্দ্রিক, তাই বিদ্যানন্দকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেন কিশোর কুমার দাশ। ২০১৪ সালে বিদ্যানন্দ প্রথম চট্টগ্রামে কাজ শুরু করে। বর্তমানে সংস্থাটির মোট ১২টি শাখার মধ্যে ১১টিই ঢাকার বাইরে; যার মধ্যে ৭টি শাখার অবস্থান উত্তর বাংলা এবং পার্বত্য অঞ্চলে। 

২০১৬ সালে বিদ্যানন্দ একেবারেই নতুন এক ধরণের খাদ্য কার্যক্রম ‘এক টাকায় আহার’এর মাধ্যমে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে খাদ্য সরবরাহ শুরু করে। এছাড়াও বিদ্যানন্দের অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ‘রমজানে দুঃস্থ মানুষের পাশে’, ‘কোভিড ১৯ মোকাবেলা আপনার যাকাত’, ‘শীতবস্ত্র বিতরণ’, ‘শরণার্থীদের পাশে বিদ্যানন্দ’, ‘এক গ্লাস দুধ’, ‘এক টাকায় চিকিৎসা’, ‘ঈদবস্ত্র ও উপহার বিতরণ’ ইত্যাদি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা রক্তদান কর্মসূচী- হাজারো স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে বিদ্যানন্দ সেখানে পৌঁছে যায় সবার আগে। তেমনই একটি উদাহরণ হল ‘চলো, রুখে দিই কোভিড ১৯’। ইতিমধ্যেই এই কার্যক্রমে নিযুক্ত আছেন সীমান্ত এলাকায় ৫৫টি বিজিবি ইউনিট, দক্ষিনাঞ্চলে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড দিয়ে এবং সমতলে ২৯টি সেনানিবাস। 

এছাড়া বর্তমানে বিদ্যানন্দের এই প্রকল্পের জন্য কাজ করে চলেছেন সংস্থাটির মোট ৯০টি স্বেচ্ছাসেবী দল। আর এই স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ২৪-২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিইও পর্যন্ত রয়েছেন। নিজেদের উৎসাহ এবং আত্মতৃপ্তির জন্যই বিদ্যানন্দের সাথে সহযোগিতা করেন তারা। 

বিদ্যানন্দ কেন এমন কার্যক্রম পরিচালনা করছে? সংস্থাটির লক্ষ্য কী? তেমন বড় কিছুই নয়! বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ চেয়েছিলেন তার কার্যক্রমের মাধ্যমে এমন একটি উদাহরণ তৈরি করতে যাতে করে বাকিরাও সমাজের ভালোর জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। নিজের মধ্যে তৈরি হওয়া আত্মোপলব্ধি এবং আত্মতৃপ্তি সবার ভেতরে ছড়িয়ে দিতে চান বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা। আর কিশোর কুমার দাশ, কে তিনি?

“সাধারন মানুষ, এটা আমার বিনয় না। চ্যারিটিতে বেশীরভাগ মানুষ সাধারণ, মিডিয়া তাদেরকে সুপার হিউম্যান হিসেবে প্রচার করে। এতে পুরো প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজে। লোভ ক্ষোভ সবই আমার আছে। আমি চ্যারিটিকে কিছুটা প্রসেসে এবং পেশাদারিত্বে করতে চেয়েছি। এটা আমাদের আয়ের উৎস নয়, তবুও নেশা। আবেগ নির্ভর এই কাজটি কতদিন চলবে জানি না, তবে শুদ্ধতা নিশ্চিত করে করতে চাই।“ নিজেকে নিয়ে বলেন কিশোর কুমার দাশ। 

সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের আর্থিক এই সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২২,০০০টি পরিবারের কাছে ইতিমধ্যে বিদ্যানন্দের মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেবে। বিদ্যানন্দের মাধ্যমে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী, বিজিবি এবং স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহায়তায় এই সংকটকালীন সময়ে প্রতি পরিবারের কাছে মোট ৩ বেলার এই সহযোগিতা পৌঁছে দেবে এসএএএফ। সহযোগিতার এই অর্থের শতকরা ৯০ শতাংশ বিতরণ করা হবে ঢাকার বাইরে, যেখানে থাকবে চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, সুজি ইত্যাদি। 

সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি আনিস আহমেদ বলেন, “বর্তমানে দ্বিধাগ্রস্ত, অসহায় এবং আমাদের সবার কাছ থেকে সর্বদিক দিয়ে সহযোগিতাপ্রার্থী দেশের বড় একটি অংশকে সহায়তা প্রদানের এই কার্যক্রমে বিদ্যানন্দের সাথে একত্রিত হয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য অসম্ভব আবেগপূর্ণ একটি ঘটনা।“

তবে বিদ্যানন্দের সাথে সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের এই পথচলা আজকের নয়। ২০১৯ সালে বিদ্যানন্দের সাথে যুক্ত হয়ে একে একে রাজবাড়ী, রুমা, বান্দরবান এবং রামুতে অবস্থিত চারটি অনাথালয়ে শিশুদের খাদ্যসংস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেয় এসএএএফ। বর্তমানেও বিভিন্ন প্রকল্পে একজোট হয়ে কাজ করছে এই দুটি সংস্থা। 

অন্যান্য প্রকল্পের মতোই কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত প্রকল্পেও বিদ্যানন্দ সফলতা অর্জন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর এবারের লড়াইয়ে সংস্থাটির পাশে রয়েছে সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন। 

“অর্থকষ্টে যখন হোঁচট খাওয়ার দশা, তখনই এগিয়ে আসেন সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে, সারাদেশে পৌঁছানোর মতো বড় অনুদান আমাদের তখনো কাছে আসে নি। সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের  বদৌলতে আমরা ২২,০০০ অভুক্ত পরিবারের মাঝে খাবার পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। 
আশা করি এই রমজানেও তারা ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিবেন আরো অনেক পরিবারের কাছে।– কিশোর কুমার, বিদ্যানন্দ।

কোভিড-১৯এর এই সংকটকে সহনীয় করে তুলতে মানুষের জন্য বিদ্যানন্দের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন। । বিদ্যানন্দের সাথে এভাবেই নানাবিধ কার্যক্রমে গভীরভাবে জড়িত থেকে পরবর্তী আরো অনেক সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পে নিজেদের সর্বোচ্চ অবদান রাখতে চায় সুহানা এন্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন।

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি