ঢাকা, শনিবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসিকে খোলা চিঠি

জাতীয় সংসদে প্রবাসী প্রতিনিধি সময়ের দাবি

কাজী এনায়েত উল্লাহ

প্রকাশিত : ১৭:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১৮, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই, এই প্রথমবারের মতো প্রবাসীরাও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের একটা দাবি, যা প্রবাস থেকে আমরা সব সময় করতাম, তা কার্যকর হতে চলেছে। বর্তমান সরকারকে এই উদ্যোগের জন‍্য আন্তরিক ধন‍্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স যেমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে এর গুরুত্বও অপরিসীম। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স কত বড় অবদান রাখছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশের বাইরে থেকে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার স্বীকৃতিও ঐতিহাসিক একটা ব্যাপার। সেই সঙ্গে ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ‍্যপ্রাচ‍্য, আমেরিকা, এশিয়াসহ বিভিন্ন মহাদেশ থেকে অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং বলছেন, আয়েবার (অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন) মহাসচিব হিসেবে আপনি আমাদের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করুন, আমরা যেমন এবার ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি, তেমনি আমাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিও আমরা বাংলাদেশে পাঠাতে চাই। এটা কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা যেন আমরা দেখতে পারি। এখন পর্যন্ত প্রবাস থেকে প্রতিনিধিত্ব করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের সামনে আসেনি। জাতীয় সংসদে প্রবাসী প্রতিনিধি আমাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী কোটা পদ্ধতিতে নির্ধারিত হতে পারে অথবা প্রবাস থেকে দেশে গিয়ে যাঁর যাঁর অঞ্চলে নির্বাচনে দলীয় বা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার ব‍্যবস্থাও থাকতে পারে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকেই সেটা পেতে চান। নানাভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রমে অনেক প্রবাসী সম্পৃক্ত এবং অন্যদিকে যে দেশে তাঁরা বসবাস করছেন, সেখানেও তাঁদের একটা বড় ধরনের মেইনস্ট্রিম ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রবাসীদের অনেকেই স্থানীয় লবিং গ্রুপের মাধ‍্যমে নিজেদের স্বার্থ, সেই সঙ্গে দেশের স্বার্থে অনেক কিছু করতে পারছেন। অবশ‍্যই দেশের অর্থনীতিতে দূর থেকে বড় ধরনের সহযোগিতা করে চলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেককেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। কাজকর্মের সুবিধার্থে, ব্যবসার সুবিধার্থে, যেসব দেশে তাঁরা বসবাস করছেন সেখানে বিভিন্ন স্থানীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সহজীকরণ এবং মুক্ত যাতায়াত নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তার জন‍্যই সময়ের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন।

বর্তমান প্রসঙ্গে একটু ভেবে দেখার সময় এসেছে। অনেকেই এখন বাংলাদেশে যাচ্ছেন বা যাওয়ার পরিকল্পনা আছে এবং বিভিন্ন দল থেকে বা স্বতন্ত্রভাবেই তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন। কেউ কেউ বলছেন, আমরা যদি প্রবাস থেকে ভোট দিতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্য থেকে কেন প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারব না? এ ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব কেন বাধা হবে? এ জন্যই আমি প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেবের কাছে আবেদন রাখতে চাই, আপনারা একটু ভেবে দেখুন, হয়তো একটা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের মধ্য থেকে যাঁরা প্রার্থী হতে চান, তাঁদের জন্য কোটাভিত্তিক পাঁচ থেকে দশটা আসন বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এতে করে তাঁরা নিজ নিজ অঞ্চলে প্রার্থী হয়ে সেখানে তাঁরা নির্বাচন করতে পারেন এবং যদি তাঁরা মনোনীত হন, মানুষ তাঁদের ভোট দেন, তাঁদের প্রতি আস্থা রাখেন, তখন তাঁরা সংসদে গিয়ে কথা বলতে পারবেন তাঁদের অঞ্চলের জন্য এবং প্রবাসীদের জন্য।

প্রবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় অতীতে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেটা কোনো দিনই তেমনভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে প্রবাসীরা এ ব্যাপারে কিছুটা ক্ষুব্ধ। এখন যেহেতু একটা সুযোগ এসেছে, এমনকি নতুন প্রশাসন প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে, তাই আমাদের আবেদন থাকবে, আমাদেরও নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়া হোক। এ ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব যেন কোনো বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। কেননা এই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার বড় কারণ হচ্ছে প্রবাসে নিজের উন্নয়ন ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে যাঁরা বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চান, তাঁদের সেই সুযোগটা পাওয়া উচিত, এটাই হচ্ছে আজ প্রবাসীদের চাওয়া। আমরা শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধা নই, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুধু অর্থ জোগান দিচ্ছি না, প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় সংসদে আমাদের প্রতিনিধি দরকার।

আজ আমরা জোরালোভাবে বলতে চাই, নির্বাচন সন্নিকটে। সময় খুবই কম। তাই আপনারা একটু ভেবে দেখুন আমাদের এই উদ্যোগে আপনারা কতটুকু সহযোগিতা করতে পারেন। প্রবাসীরা অত্যন্ত আগ্রহচিত্বে আপনাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। অতএব, আগামী নির্বাচনের আগেই এমন একটি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, যাতে প্রবাসীরা ভোট দেয়ার এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান, সেটাই আজ আমাদের কাম্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বৈত নাগরিকরা তাঁদের জাতীয় নির্বাচনে অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারেন, আমরাও সেটা পর্যবেক্ষণ করতে পারি।

লেখক: মহাসচিব, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ আসোসিয়েশন, প‍্যারিস, ফ্রান্স। স্বতন্ত্র প্রার্থী, ঢাকা-১৭।

এএইচ


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি