ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

গৃহহীনরা ফুটপাতেই থাক, সাংবাদিকরা মামলা খাক! 

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ১২:৪০, ১৪ জুলাই ২০২১

২০১৮ সালের মে মাস। এডিবির বার্ষিক সভায় নিউজ কভার করতে (ম্যানিলা) ফিলিপিন্সে যাই। সেখানে সম্ভবত ১৩ দিন ছিলাম। যাত্রাপথে সিংগাপুরের চেংগি এয়ারপোর্টে আড়াই ঘণ্টার ট্রানজিট। বলা হয় যে, এটি বিশ্বের বিলাসবহুল, অত্যাধুনিক এয়ারপোর্টগুলোর অন্যতম। 

কোনও এক ফাঁকে সফরসঙ্গী সজীব হোম রায় ঘুমিয়ে পড়েছে চেয়ারে হেলান দিয়ে। আমি সামান্য দূরে একটা দোকানে ঢুঁ মারলাম। ফিরে এসে দেখি হ্যান্ড ব্যাগটা নেই। মুহূর্তেই মাথায় বাজ পড়ল। কারণ আমার পাসপোর্ট, ডলার, আইডি কার্ড সবই যে ঐ ব্যাগে। 

কিছুক্ষণ পর একজন ক্লিনার এসে ব্যাগটা আমাকে দেখিয়ে বলল- ইজ ইট ইয়োর? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক জবাব দিলাম। ব্যগটা দিয়ে লোকটা চলে যেতে চাইল। সম্ভবত বাথরুমে ঢোকার সময় সে আমাকে দেখেছিল।

আমি তাকে ডেকে কিছু বকশিস দিতে চাইলে জিভে কামড় দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকাতে বললেন। মুচকি হেসে চলে গেলেন। আর বললেন, সি ইউ এগেইন। তখন বুঝলাম, এটাই ভয়। হোক না সেটা পার্থিব কিংবা অপার্থিব।

আজ দেশের মানুষের মনে সেই ভয়টাই নেই। ফলে মৃত্যুকে পরোয়া করে না। জীবনকে ভাবে কচু পাতার পানি। হ্যাঁ জীবন ক্ষণিকের বটে। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত জীবনকে তো আমরণ স্মরণীয়ও করা যায়। যেমনটি করেছেন মনীষীরা। 

কাউকে সীমাহীন ভালবাসবেন তো উল্টো ফল পাবেন। আবার নিজের কলিজা কেটে খাইয়ে কাউকে আপন করার চেষ্টা করবেন তো, তার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন। তেমনি সরকারি কর্মচারীদের বাড়ী, গাড়ী, ব্যাংক লোন, বিদেশ সফর, চিকিৎসা- এমন কোনও সুবিধা নেই যেটা এ সরকার দেয়নি। তারপরও তাদের চুরি বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে।

গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে কতটা দুর্নীতি হয়েছে, সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। তবে দায়ীদের শাস্তি কতটুকু হবে সেটা হয়তো অনুমান করা কঠিন। আবার সহজও। শাস্তি যাই হোক, লোকসান বা ক্ষতিটা কিন্তু সাধারণ মানুষেরই। যাদের টাকায় এসব ঘর বানানো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে রোগীদের খাবারে অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করায় সেখানকার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আবার মামলার এজাহারে অনিয়মের কথা স্বীকার করা হয়েছে। তাহলে কেন এই মামলা? কেনই বা গ্রেফতার? মামলা হলেই কি গ্রেফতার করতে হবে? তার আগে এজাহারটা কি পড়া যায় না? কি আছে তাতে। সত্যতা কতটুকু। হ্যাঁ, পুলিশ হয়তো বলবে- এটা কোর্টের দায়িত্ব। তাদের না। হয়তো তাই। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন সেটার সমাধান হয় না?

অথচ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস করার আগে মন্ত্রীরা বলেছিলেন, এটা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রতি সপ্তাহে কেউ না কেউ এটার শিকার হচ্ছেন। কোনওকিছু ঘটলেই আইসিটি আইনে মামলা খাচ্ছেন সাংবাদিকরা। আবার বলা হচ্ছে- সরকার নাকি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই দুইশ'র উপরে মারা যাচ্ছেন করোনায়। কিন্তু এতে কারো ভয়ই নেই। একটা গ্রুপ তো এখনও বিশ্বাস করে, এটা বড়লোকদের রোগ। আরে ভাই, রোগ যদি ধনী-গরীব চিনতো, তাহলে কিডনী বিকল হয়ে কেউ মরত না। কারণ যার কিডনী বদলানোর সামর্থ নেই, তার তো এ রোগ হবার কথা নয়। 

কিন্তু বাস্তবে কি তাই? আজও ধানমন্ডি যেতে রাস্তায় জ্যাম পেলাম। বিনা কারণে মানুষের ঘোরাফেরা বন্ধ হয়নি মোটেই। তবে হ্যাঁ, কিছু মানুষ জীবিকার তাগিদে বের হতে বাধ্য হচ্ছে- এটা ঠিক। আবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেকাইম্মাদের আড্ডা এখনও চলছে। মৃত্যু বাড়ুক বা কমুক, প্রশ্ন সেটা নয়। আসল প্রশ্ন হলো- এ জাতি কি হুশ ফিরে পাবে আদৌ। নিজের অবস্থানটা কি বুঝবে মৃত্যুর আগে?

এনএস//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি