ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

১৮-র আগে স্মার্টফোন নয় 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫০, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আসক্তি কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সোনালী সময়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। অসময়ে তারা এই প্রযুক্তির প্রেমে পড়ে ডেকে নিয়ে আসছে সর্বনাশ। স্মার্টফোন আসক্তি বা গেম এর আসক্তিতে পড়ে অনেকের জীবন প্রদিপ নিভে গেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এই প্রযুক্তির ফাঁদে পড়ে শেষ করে দিচ্ছে তাদের শিক্ষা জীবন। তাই বয়স ১৮ এর আগে কারও হাতে স্মার্টফোন দেওয়া ঠিক নয়। নিচে স্মার্ট ফোন ব্যবহার বিধি সম্পর্কে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-     

১. দেড় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর সামনে কোনো ডিভাইস আনবেন না। টিভি, স্মার্টফোন, ট্যাব, ইউটিউব চালিয়ে সন্তানকে খেতে অভ্যস্ত করবেন না।

২. দেড় থেকে দুবছর বয়সে শুধু শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম। এসময় আপনি অবশ্যই সাথে থাকবেন।

৩. দু থেকে পাঁচ বছর এবং টিনএজ বয়সীদের জন্যে দিনে মাত্র এক ঘণ্টা। তাও রাত ১১টার আগে। ১১ টার পর শিশু যাতে কোনোভাবেই স্ক্রিনের সামনে না থাকে, তা নিশ্চিত করুন। সন্তানের রোল মডেল হতে নিজেও বিরত হোন এসব থেকে।

৪. ১৮ বছর হওয়ার আগে সন্তানকে স্মার্টফোন কিনে দেবেন না। ঘরে শিশু থাকলে স্মার্টটিভিকেও শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন।

৫. স্কুলে ফোন নিষিদ্ধের পক্ষে গড়ে তুলুন সামাজিক সচেতনতা, যাতে আপনার সন্তান স্কুল পরিবেশেও থাকতে পারে ভার্চুয়াল ভাইরাসমুক্ত!

৬. আসক্ত হওয়ার মতো কোনো অবসর যেন তার না থাকে। সন্তানকে ঘরের কাজে সম্পৃক্ত করুন। খেলাধূলা, বইপড়া ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন।

৭. ইলেকট্রনিক সব ডিভাইস সে কী কাজে ব্যবহার করছে, তার দিকে নজর রাখুন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা প্যাড- যেটাই হোক, অপারেটিং সিস্টেমে এমন কোনো ফিচার অ্যাড করা যায় কি না, যা আপনার সন্তানের নিরাপদ ব্যবহারকে নিশ্চিত করবে, তা জানার চেষ্টা করুন।   

৮. সম্ভব হলে শিশুবান্ধব ব্রাউজিংয়ের ফিচারগুলো চালু করুন। অর্থাৎ ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আপনার শিশু যাতে ক্ষতিকর বা বয়স অনুপযোগী কোনো সাইটে ঢুকে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করুন। আইএসপি-র সহযোগিতাও নিতে পারেন। প্রয়োজনে রাতের বেলা সরিয়ে ফেলুন ওয়াইফাই রাউটার।

৯. সন্তান সারাক্ষণই রুমের দরজা বন্ধ করে রাখছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। একা থাকতে বা একা ভাবতে দেবেন না তাকে। ভাইবোনের সাথে শেয়ার করতে শেখান।

১০. নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুসারে তাকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন।

১১. পরিবারের সবাই মিলে নিয়মিত মেডিটেশন ও ইয়োগা চর্চা করুন, সেবা কাজে অংশ নিন। সন্তান ভার্চুয়াল ভাইরাস প্রতিহতের সামর্থ্য অর্জন করবে।

১২. বকাঝকা নয়, সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করুন। আপনিই হোন তার প্রথম ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু।

১৩. সন্তানকে সময় দিন। আপনি যদি সারাক্ষণ ফোন-টিভি নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে এই ক্রমাগত অবহেলা সন্তানের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ভবিষ্যতে তার মানসিক অসুস্থতা ঘটাতে পারে। তাই পরিবারের জন্যে বরাদ্দ সময়ে টিভি-কম্পিউটার-স্মার্টফোনসহ সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।

১৪. সন্তান, মা-বাবা, ভাইবোন, ও আত্মীয়দের সাথে বাস্তব যোগাযোগ ও একাত্মতা বাড়ান।

১৫. যেসব সঙ্গ আসক্তির কানাগলিতে ঠেলে দেয়, তাদের পরিত্যাগ করুন। সপরিবারে ফাউন্ডেশনের সাদাকায়ন, আলোকায়ন ও আলোকিত পরিবার কার্যক্রমে অংশ নিন। প্রতি বৃহস্পতিবার পারিবারিক মেডিটেশন করুন।

১৬. কথা নয়, সন্তান অনুসরণ করে আপনার আচরণ। আপনি ভার্চুয়াল ভাইরাসে আসক্ত হলে সন্তানকে এ থেকে বিরত রাখা কঠিন। তাই আগে আপনি নিজে ফেসবুকসহ সবরকম স্যোশাল মিডিয়া বর্জন করুন, সন্তানও তখন বর্জনে উৎসাহিত হবে।

বর্তমানে স্মার্টফোনের কারণে ঘটছে নানা ধরণের দুর্ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেফটি কাউন্সিলের হিসাবমতে, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে মেসেজ দেখতে বা দিতে গিয়ে দেশটিতে বছরে ১৬ লাখ এক্সিডেন্ট ঘটে! প্রতিদিন অন্তত ১১ জন কিশোর-কিশোরী এর কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে! মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর যে ঝুঁকি তার ছয়গুণ বেশি ঝুঁকি যখন মোবাইল ফোনে কেউ টেক্সট দেখতে দেখতে গাড়ি চালায়! যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চারটি সড়ক দুর্ঘটনার একটিই ঘটে গাড়িচালকের মোবাইলে মেসেজ আদানপ্রদানের কারণে। (USA Today, 2018)

আর সেন্টার ফর ইন্টারনেট এডিকশনের ড. কিম্বারলি ইয়াং বলেন, স্মার্টফোন যে আসক্তিকর, এটাই তার প্রমাণ! কারণ যেসব টেক্সট দেখতে গিয়ে নিজেদের জীবনকে এভাবে বিপন্ন করছে মানুষ, তা এত তুচ্ছাতিতুচ্ছ সব বিষয় নিয়ে যে, দুদশ মিনিট পরে মেসেজটা দেখলে এমন কোনো ক্ষতি হতো না তার! কিন্তু না, এক্ষুণিই দেখা চাই! মেসেজ বা নোটিফিকেশনের আওয়াজ পেলেই হলো, সাথে সাথেই হাতে তুলে নিচ্ছে ফোন! এমনকি অধিকাংশ সময় তো কিছু না এলেও শুধু শুধুই সে তার মোবাইল ফোন চেক করে বা স্ক্রল করে!

এসি

  


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি