ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৫

‘আমি নীলা ইসরাফিল এক মা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন কারণে আলোচিত নীলা ইসরাফিল। পরে ছাত্রদের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এনসিপির সঙ্গে জড়িত হন, যদিও এখন তিনি দলটিতে নেই। সেই নীলা ইসরাফিল তার দুটি শিশুর জীবনের জন্য গোটা বিশ্বের কাছে বুকফাটানো আবেদন জানিয়েছেন।

বুধবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই আর্তনাদ জানান সাবেক এনসিপি নেত্রী।

তার পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

“আমি নীলা ইসরাফিল এক মা। আজ আমার দুইটি শিশুর জীবনের জন্য গোটা বিশ্বের কাছে বুকফাটানো আবেদন জানাচ্ছি।

হাসান আরিফের সম্পত্তি বাচ্চাদের নামে ট্রাস্ট করা হয়েছে। কিন্তু সেই নামটিই আজ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারে বেঁচে থাকা সদস্যরা আমার কাছে আমার বাচ্চাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। তারা বলছে তারা লালন-পালন করতে পারবে না কিন্তু সমস্যা কেবল অক্ষমতা নয় এখানে আছে লোভ, ভয় এবং পরিকল্পিত ক্ষতির ছায়া।

বাচ্চাদের পিতা মোয়াজ আরিফ একজন মাদকাসক্ত। তার বর্তমান স্ত্রীও মাদকাসক্ত। তারা বাচ্চাদের নিরাপত্তা করতে অক্ষম বরং তাদের কাছে রাখা হলে বাচ্চাদের জীবন বিপন্ন হবে। মোয়াজ তার বাবার টাকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে নিজের উপার্জন নেই। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বাচ্চাদের নিজের কাছে রেখে ধীরে ধীরে অবহেলার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

আপনারা যারা মনে করছেন একজন বাবা কিভাবে সন্তানদেরকে ড্রাগস দেয়??? বা ক্ষতি করতে চায়? 
আমি এখানে দৃঢ়ভাবে বলছি ২০২০ সালে মোয়াজ আমার গর্ভে থাকা একটি কন্যা শিশুকে লাথি মেরে হত্যা করেছে। কারণ, বাচ্চাটি মেয়ে ছিল এই অগ্ৰহণীয় সহিংসতার যন্ত্রণাটা আমি আজও ভুলি না।

২০২১ সালে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতেই আমার আরেকটি শিশু জন্মগ্রহণ করে কারাগারের কোলে, নিষ্ঠুর পরিবেশে। সে এখন চার বছর বয়সী। তখনও তাদের ধারণা ছিল যে হামলা ও নির্যাতনের পরে শিশুটি বেঁচে থাকবে না তাই বনানীর কবরস্থানে আগে থেকেই কবরস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তারা পরিকল্পনা করেছিল- যদি কারাগার থেকে খবর আসে “শিশুটি মারা গেছে”, তবে কবর দেয়া হবে। আল্লাহর কৃপায় আমার বাচ্চারা বেঁচে আছে কিন্তু আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় পেতে হয় যে কখন তাদের উপর আরেকটি আঘাত পড়বে।

এখানে দুইটি জীবনের কথা চলছে প্রতিদিন সকালে যখন আমি চোখ খুলে দেখি, আমার হৃদয় ভেঙে পড়ে। আমি জানি না আমার বাচ্চারা কতদিন বাঁচবে, কারণ তাদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ অবহেলিত। এটা কোনো পারিবারিক বিষয় নয় এটা মানবতার একটি বড় লহির কণ্ঠস্বর।

আমি এখন বিশ্ববাসী, মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ, যারা মানবতার পক্ষে আছে আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাই অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আমার দুই শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও তাত্ক্ষণিক সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত পরিচালনা করুন ২০২০ এবং ২০২১ উভয় ঘটনার সম্পর্কিত দায়িত্বপ্রাপ্তদের আইনত জবাবদিহি নিশ্চিত করুন।

মোয়াজ আরিফ এবং তার বর্তমান স্ত্রীর মাদকাসক্তির বাস্তবতা এবং অন্যান্য সব প্রমাণ খতিয়ে দেখে শিশুসহ কোনো ধরণের যোগাযোগ ও অভিভাবকত্ব থেকে তাদের সরিয়ে নিন।

যদি শিশুরা নির্যাতিত বা অবহেলিত হয়ে থাকে, তাদের জন্য মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করুন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক ও মিডিয়াজগত আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছি এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মনোযোগের দাবিদার।

আমি ভয় পাচ্ছি না আমি ক্লান্ত, আহত এবং বারবার কণ্ঠ হারানোর সংযম ধরছি। আমার একমাত্র চাহিদা আমার বাচ্চারা বেঁচে থাকবে। যদি তোমরা মানুষের মতো কিছু বাকি থাকে, যদি তোমরা সন্তানের মুখে শান্ত নিশ্বাস দেখতে চাও তাহলে এখনই এগিয়ে এসো।

আমি নীলা ইসরাফিল আরও বলছি দুইটি শিশুর জীবন এখনই রক্ষা করতে হবে। তাদের জন্য দয়া করে দ্রুত হস্তক্ষেপ করুন।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি