ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

নির্মল বিনোদনের খোঁজে নীলফামারী

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ১৭:২৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:০৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শত ব্যস্ততার মাঝে, হাজারও কাজের ফাঁকে মানুষ চায় একটু প্রশান্তি, বিনোদন। মনে ছুটে যায় দূর-দূরান্তে। চোখ মেলে প্রকৃতিকে একটু দেখতে, চোখ জুড়াতে।

অবসরে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা। এদেশে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আদর্শ একটি স্থান হচ্ছে নীলফামারী। এ জেলার পর্যটন এলাকাগুলো সারা বছরই দর্শণার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।

নীলফামাররীতে যে কয়েকটি পর্যটন এলাকা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থান চিনি মসজিদ, নীল সাগর, কুন্দ পুকুর মাজার, যাদুঘর , হরিশ্চন্দ্রের পাঠ, ভিমের মায়ের চুলা, নীল কুঠি , ধর্মপালের রাজবাড়ী প্রভৃতি।         

নীলসাগর  

নীল সাগর কোনো সাগর নয়; একটি দিঘির নাম। ১৯৮২ সালে এর নামকরণ করা হয় নীল সাগর। মৎস্য শিকারীদের জন্য আদর্শ জায়গা এই নীল সাগর। মাছ শিকারের জন্য টিকিটের মূল্য এক হাজার টাকা। নির্দিষ্ট সময় ১৪ এপ্রিল থেকে নভেম্বরে অতিথি পাখি আসার আগ পর্যন্ত এ সুযোগ পান তারা।

বারুণী স্নান উৎসব দেখেতে যেতে পারেন নীলফামারীর নীল সাগরে। বৈশাখী পূর্নিমায় দিঘির পাড়ে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘বারুণী স্নান উৎসব’।

নীলফামারীর নীল আর  সাগরের সাগর থেকেই নীল সগর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নীল সাগর নামের বিশাল দিঘিটি নীলফামারীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান।

দিঘিটির জল ভাগের আয়তন প্রায় ৩৪ একর হলেও মোট আয়তন ৫৪ একর। জলের গভীরতা বেশিব ভাগ সময়ই সাত মিটার থেকে ১২ মিটার থাকে। দিঘিতে দুটি ঘাট রয়েছে । একটি ঘাট পূর্ব পাড়ে এবং অপর ঘাটটি রয়েছে পশ্চিম পাড়ে। ঘাট দুটিই ইটের তৈরি। দিঘির একপাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিব মন্দির, অপর পাশে মুসিলিম সম্প্রদায়ের মুসলিম দরবেশের আস্তানা ছিল।

দিঘির পাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পাড়গুলি সমতল ভুমি থেকে একটু উচু, পাড়ে রয়েছে পর্যটকদের বসার জন্য অনেকগুলি স্থান।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারী সদর থেকে বাসযোগে নীলসাগর যাওয়া যায়। নীলফামারীর গড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত নীলসাগর দিঘিটি । দিঘির পাড়ে পর্যটকদের থাকার জন্য রুম রয়েছে । রুম ভাড়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

যাদুঘর

প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন দেখতে যেতে পারেন নীলফামরী যাদুঘরে।

নীলফামারীতে একটি যাদুঘরও রয়েছে। সারা বছরই হাজারো মানুষের ভিড় করে যাদুঘরে । ব্রিটিশ ও ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন সেখানে যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারী ডিসি অফিসের পুরাতন ভবনে অবস্থিত যাদুঘরটিতে রিক্সা / অটোরিক্ষা যোগে যাওয়া যায়।

হরিশ্চন্দ্রের পাঠ

হরিশচন্দ্রের পাঠ বা রাজবাড়ীটি পাথর খণ্ডে পরিপূর্ণ প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের টিলা। চাড়াল কাটা নদীর তীরে প্রায় এক বিঘা জমির ওপর একটি উচু ঢিবি । ঢিবির ওপর পাঁচ খণ্ড বড় কার রংঙের পাথর রয়েছে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে ঢিবিটি মাটিতে ডুবে যায় আবার মাটির ওপরে উঠে আসে।  

যেভাবে যাবেন

হরিশচন্দ্রের পাঠ বা রাজবাড়ীটি নীলফামারীর জলঢাকা থানার খুটামার ইউনিয়নে অবস্থিত। নীলফামারী সদর থেকে সড়ক পথে খুটামারা হয়ে হরিশচন্দ্রের পাঠ বা রাজবাড়ীতে যাওয়া যায়।

ভিমের মায়ের চুলা

ভিমের মায়ের চুলা তিন দিকে উচু মাটির প্রাচীর বিষ্টেত স্থাপনা। প্রাচীরের তিনটি স্থান অপেক্ষাকৃত উচু। ভিমের মায়ের চুলার ভিতরের অংশ এবং বাহিরের অংশের তিন দিক পরিখা বেষ্টিত।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে ভিমের মায়ের চুলা। সড়ক পথে নীলফামারী থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ভিমের মায়ের চুলা দেখতে যাওয়া যায়।

নীল কুঠি

নীল কুঠি শব্দটার আমরা শুনেছি। নীল কুঠি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু কখনও নীল কুঠি দেখা হয়নি, তাহলে যেতে পারেন নীলফামারীর নীল কুঠিতে। ব্রিটিশ আমলে নীল কুঠিয়ালদের কুঠি হিসেবে ব্যবহৃত নীল কুঠিটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে নীলফামারী অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারী শহর থেকে সড়কপথে খুব সহজেই যাওয়া যায় নীল কুঠি দেখতে।

ধর্মপালের রাজবাড়ী

ধর্মপালের গড়ের কাছাকাছি একটি মজা জলাশয় রয়েছে, জলাশয়ের পাড় বাধানো ঘাট এবং কয়েক ফুট উচু ঢিবি রয়েছে, এই ঢিবির ভিতরের প্রাচীরে ইট দেখেই ধারনা করা হয় এটি ধর্মপালের রাজবাড়ি। গড় ধর্মপালের কাছাকাছি নদীর তীরে ধর্মপালের রাজ প্রাসাদ ছিল।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারী শহর থেকে সড়কপথে অল্প সময়ের মধ্যেই যাওয়া যায়  ধর্মপালের রাজবাড়ী।

কুন্দ পুকুর মাজার

 

এখানে মসজিদ,  হেফজখানা এবং একটি বড় পুকুর রয়েছে। এখানে প্রতিবছরই বার্ষিক ওরশ হয়। ওরশের তারিখ ৫ মাঘ। সারাদেশ থেকেই অসংখ্য দর্শক এখানে আসেন।

যেভাবে যাবেন

কুন্দুপুর মাজারটি জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে নীলফামরী সদর থেকে কুন্দুপুর ইউনিয়নে কুন্দুপুর মাজার অবস্থিত। নীলফামারী থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই কুন্দুপুকুর  মাজারে যাওয়া যায় ।

চিনি মসজিদ

শতশত দক্ষ কারিগরের পরিশ্রম আর শিল্পীর একনিষ্ঠ শ্রমের দ্বারাই ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চিনি মসজিদ। সুন্দর এ সমজিদটির গায়ে রয়েছে শংকর মর্মর পাথর। পাথরের সঙ্গে লাগানো হয়েছিল চীনা মাটির চুকড়ো যার ওজন প্রায় ২৫ টন। মসজিদের ২৭টি মিনারের মধ্যে পাঁচটি মিনার এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে।

যেভাবে যাবেন

নীলফামারী থেকে সজক পথে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে রিক্সা যোগে যাওয়া যায় চিনি মসজিদ। সৈয়দপুর থেকে সড়ক পথেও চিনি মসজিদ যাওয়া যায়।

 

এসএইচ/ এআর

 

 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি