ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

‘আসুন এবং বিনিয়োগ করুন, আমরা প্রস্তুত’

মনির হোসেন, জেনেভা থেকে

প্রকাশিত : ২০:৪১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২১:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘গত ১০ বছরে অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ঈর্ষণীয়। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে তার স্বীকৃতি মিলেছে। একদিকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, অপরদিকে বাড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্য। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্যিক অংশিদারিত্ব রয়েছে। আর এই অংশীদারিত্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে চীন ও ভারতের বাজার ধরতে পারবেন।’

সুইজারল্যান্ডের অন্যতম শহর জেনেভায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তিন দিনব্যাপী রোড শো’র সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশটির বিনিয়োগকারী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা পাঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গ্যাব্রিজেসুস। প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন। 

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও অনিবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন; সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেইজ অব বেঙ্গল টাইগার’।

অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ৬৫ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- সুইজারল্যান্ডের মার্কুজ স্কিলটার, সিলভান স্টিটলার, এলেক্জান্ডার ক্লিংকম্যান, বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন এবং বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বপ্ন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমাদের স্বপ্ন বৈষম্যমুক্ত সমাজ। এ কারণে বেসরকারি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে সরকার। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অত্যন্ত উচ্চ। 

তার মতে, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে শ্রমশক্তি বিশাল। এই শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে আমরা গবেষণা জোর দিয়েছি। 

মন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদন বিস্ময়করভাবে বাড়ছে। ইতিমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। চীন-ভারত থাইল্যান্ডের মতো দেশে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসুন এবং বিনিয়োগ করুন। আমরা প্রস্তুত।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার কারণে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। করোনার পরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। এগুলো হলো- সরকারি ব্যয় বাড়ানো, ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং বাজারের টাকার প্রবাহ বাড়ানোর। ইতিমধ্যে ২৮টি স্টিমুলাস বা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে ২২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এই সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য একটাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। 

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের অর্থনৈতিক সামাজিক খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের অগ্রগতিতে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত গণতন্ত্রের আগে, দ্বিতীয়ত অস্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং সবশেষে পলিসির ধারাবাহিকতা। সেখানে আমরা দেখেছি পলিসি যখন ধারাবাহিক ছিল, তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। 

একটি তুলনামূলক চিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে সালে আমাদের দারিদ্রতার হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা বর্তমানে চার শতাংশে নেমে এসেছে। অতিদরিদ্রের হার ২৫% থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু ৬৭ শতাংশ থেকে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে ১.৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার ৫০% থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। শিক্ষার হার, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ। এসব বিবেচনায় আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগের জন্য উত্তম জায়গা বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিটি সূচকে প্রতিবেশীদের এবং প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে আমরা। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক সক্ষমতার প্রমাণ দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশের মানব সম্পদ। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের যথেষ্ট শ্রম শক্তি রয়েছে। এই শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। 

দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। যেসব পণ্য উৎপাদন করবেন বাংলাদেশে তার বড় একটি বাজার রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে চীন ও ভারতের মতো দেশে রপ্তানি করা যায়। বিনিয়োগ করে বিনিয়োগের মুনাফা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে উচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়।

আরিফ খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রতিবেশী এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের পরে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয়। সবজি উৎপাদন ও রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছি আমরা। আমাদের রেমিট্যান্স ২৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ইতিবাচক। মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল। আমাদের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। এর ৯৫ ভাগই তৈরি পোশাক। 

তিনি বলেন, আমরা এক মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের ছিল। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ন কুমার ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোহাম্মদ নকিব উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক সাদ ওমর ফাহিম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি