ঢাকা, মঙ্গলবার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

জামানত প্রথা বাতিলের প্রস্তাব কোরিয় প্রবাসীদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

কোরিয়ায় ফিরতে চান ছুটিতে আসা প্রবাসীরা

কোরিয়ায় ফিরতে চান ছুটিতে আসা প্রবাসীরা

একদিকে করোনাকালে অর্থনৈতিক মন্দা, অন্যদিকে এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) ইস্যু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন যাপন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তার উপর অনেক কর্মী দেশে আসার পর এখনও কোরিয়ায় যেতে পারেনি। এর মধ্যে এতো জামানত তাদের জন্য সঙ্কট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

তবে এই জামানত প্রথা বাতিল করে টাকার পরিমাণ কমিয়ে কিস্তির মাধ্যমে বীমা পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দিয়েছে ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়া। কোরিয়ার কর্মীদের জন্য বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ জামানত ধার্য করেছে তা করোনার মন্দাকালে কর্মীদের জন্য বোঝা বলে মনে করছে সংগঠনটি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামানত ইস্যু নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস  কর্তৃপক্ষ তাদের ফেসবুক পেজ এ একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে- ‘২০১২ সাল হতেই জামানত প্রক্রিয়াটি প্রচলিত রয়েছে। যা দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং এইচআরডি কোরিয়ার নিকট প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমান নির্দেশিকাটি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রম আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এই নির্দেশিকাটির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- ইপিএস কর্মীরা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে যাতে সহজে এবং স্বল্পতম সময়ে তাদের জামানত ফেরত পেতে পারেন। 

তাছাড়া, বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনামও তাদের দক্ষিণ কোরিয়াগামী গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিকট হতে জামানত গ্রহণ করে থাকে। জামানত বিষয়ক নির্দেশিকাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার কর্তৃক স্বীকৃত এবং বৈধ কারণে কোনও কর্মী কর্মস্থল পরিবর্তন করলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে না এবং বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পর, তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার জামানত ফেরত প্রদান করা হবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অন্যতম মার্কেট। অথচ সময়ের পরিক্রমায় বাজারটি সংকোচনের চেইনে আটকে আছে। কুয়েত, সৌদি আরব, জর্ডান, দুবাই ও ইরাকের মতো ক্ষীণ হয়ে আসছে লোভনীয় এই শ্রমবাজারটি। সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজার থেকে গতবছরেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে ১২তম দেশ। 

অথচ কেন এবং কি কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে তার সঠিক অনুসন্ধান করা হচ্ছে না। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে জামানত নিয়ে। অন্যান্য দেশ যেখানে তাদের কর্মীদের নানা উৎসাহ দিচ্ছেন, নানা ইনসেনটিভ দিচ্ছেন, করোনাকালে কর্মীদের দুঃসময়ের খবরাখবর নিচ্ছেন সে সময় বাংলাদেশের কর্মীরা জামানত নিয়ে টেনশনে দিন কাটাচ্ছেন।

অথচ দক্ষিণ কোরিয়া ইপিএস কর্মীরা দেশের সম্পদ। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো সকলের মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এমনিতে ইপিএস কর্মীরা নানাবিধ সমস্যায় রয়েছেন, একই সাথে নানান মহলের অপপ্রচারের শিকার। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও মন্দা। এ অবস্থায় বোয়েসেলের জামানত ইস্যুটি বারবার সামনে আসছে। বিশেষ করে দেশে আটকে পড়া ইপিএস কর্মীরা নানান কারণে ক্ষুব্ধ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোরিয়াতে ইপিএস ভিত্তিক তিনটি সংগঠন আছে। ইপিএস বাংলা কমিউনিটি, ইপিএস কোরিয়া বাংলা কমিউনিটি, ইপিএস স্পোটর্স এন্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। জামানত নিয়ে এ তিনটি সংগঠন অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতারা দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের সাথে মতবিনিময় করেন, মতবিনিময় কালে তারা কিছু প্রস্তাব পেশ করেন। 

প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-
ক) যে কোনও আইন প্রণয়ণের তিন থেকে চার মাস আগে তা ঘোষণা দেওয়া এবং প্রবাসীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা।
খ) জামানতপ্রথা বিলুপ্ত করে বিমাপ্রথা চালু করা। যদি তা সম্ভব না হয়, জামানতের টাকার পরিমাণ কমানো এবং ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। 
গ) রসিদ প্রদান করা। জামানত বা বিমার প্রিমিয়ামের (যদি বিমা সম্ভব হয়) রসিদসহ সব ধরনের কাগজ জামানতকারীর বা বিমাকারীর কাছেও এক কপি করে দেওয়া। জামানত বা বিমার টাকা কোথায় জমা আছে, সেটা প্রদানকারীর যেন সব সময় বোয়েসেল অ্যাপসের মাধ্যমে দেখতে পায়, সেটা নিশ্চিত করা।

ঘ) কোনও কোনও শর্ত ভঙ্গ করলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না, সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা। 
ঙ) কোম্পানি পরিবর্তন যেহেতু বৈধ আছে, তাই কোম্পানি পরিবর্তনের দোহাই দেখিয়ে জামানত বা বিমার টাকা বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। 
চ) ফেরতের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে, তা জামানতপত্রে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা ও ওয়েবসাইটে এর কপি আপলোড করা। 
ছ) ফেরতের সময় লভ্যাংশসহ ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা। 
জ) ই-৯ ভিসা নিয়ে বৈধভাবে যে কোনও সময় একেবারে ফেরত গেলে টাকা ফেরত প্রদান করা। এ ছাড়া কোরিয়ায় কেউ যদি ভিসা পরিবর্তন করে, তবে ভিসা পরিবর্তনের প্রমাণ দেখিয়ে আবেদন করলে তার জামানত ফিরিয়ে দেওয়া। 
ঝ)কর্মরত অবস্থায় কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার পরিবারের কাছে জামানতের টাকা পৌঁছে দেওয়া। 
ঞ)যদি শর্ত ভঙ্গ না হয়, তবে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণ জামানত ফিরিয়ে দেওয়া। আবেদন করার পদ্ধতি সরাসরি বোয়েসেলে না গিয়ে ফ্যাক্স কিংবা ই-অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে করা।

এরই মাঝে কিছু সংখ্যক প্রস্তাব বোয়েসেল মানলেও অনেক আইন রয়েছে যা ইপিএস পলিসির সাথে অসামঞ্জস্য। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, অন্য ১৫টি দেশের সেন্ডিং এজেন্সিতে জামানত সিস্টেম চালু নাই, শুধু বোয়েসেল ব্যতিক্রম। 

আর এই জামানত প্রথা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি