ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ইজতেমা নিয়ে আদালতে আসাটা লজ্জার’

প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

নিজেরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্বীনের প্রচার না করে মারামারির পর বিশ্ব ইজতেমা পালনে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করাকে ‘লজ্জার’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মো. নুরুল আমিন।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত রিটকারী পক্ষের উদ্দেশে বলেন,‘আপনারা নিজেরা দুই ভাগে বিভক্ত হলে দ্বীনের প্রচার করবেন কীভাবে? নিজেদের মধ্যে মারামারি করবেন, আবার ইজতেমা পালনের জন্য আদালতে রিট দায়ের করবেন, এটা লজ্জার। আগে নিজেরা সংশোধন হন, সুস্থ হন এবং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ নিরসন করুন। তারপরই আপনাদের আবেদন শুনবো।

এরপর রিটকারীর আইনজীবী শাহ মো.নুরুল আমিন আদালতকে বলেন,‘দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা চলছে। তবে দ্বন্দ্ব নিরসন সম্ভব না হলে সরকার দুই পক্ষকে আলাদা-আলাদাভাবে ইজতেমা পালনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাই পালন করা হবে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু আদালতকে জানান, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরি সভার তারিখ নির্ধারণ রয়েছে। ইজতেমার বিষয়ে সেখান থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে।’

রাষ্ট্রপক্ষের এই শুনানির পর মামলাটির পরবর্তী শুনানি ও শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী ২৭ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউনুস মোল্লা। রিট আবেদনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিন জনকে বিবাদী করা হয়।

রিট আবেদনে বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল চাওয়া হয়। একইসঙ্গে ১৮ সেপ্টেম্বরের পরিপত্র স্থগিত করে একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জারি করা পৃথক আরেকটি পরিপত্র কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের দুইটি গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধ মিটিয়ে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ সিদ্ধান্তের কথা জানার পর গত ১৭ জানুয়ারি দেওবন্দ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সেখানে তাবলিগ জামাত নিয়ে সব ধরনের সভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্র জারি করা হয়। উপসচিব দেলোয়ারা বেগম স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে উভয় গ্রুপের জন্য পাঁচ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তের আলোকে জারি করা আরেক পরিপত্রে বলা হয়, সমগ্র বিশ্বে তাবলিগের কার্যক্রম একটি অরাজনৈতিক, অহিংস, শান্তিপূর্ণ ও সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত। মুসলমান জনসাধারণ তাদের আত্মশুদ্ধি ও ইসলামের দাওয়াতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। এ কার্যক্রমে বাংলদেশ একটি অগ্রসরমান দেশ বিধায় দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম জামাত ‘বিশ্ব ইজতেমা’ প্রতিবছর গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে সংগঠনের দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রায়শই বিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করা হলো। নির্দেশনায় বলা হয়।


অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। শুরুতেই রিটকারীর আইনজীবী শাহ মো. নুরুল আমিন আদালতের সামনে মামলার বিবরণীর ওপর শুনানি করেন।

 

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি