ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এমপি ইসরাফিল আলমের বর্ণাঢ্য জীবন

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:৪৭, ২৭ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ২১:৫২, ২৭ জুলাই ২০২০

টানা তিনদিন লাইফসাপোর্টে থাকার পর অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যাসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সোমবার বাদ আছর দুই দফা নামাজে জানাযা শেষে নিজ জন্মভূমি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঝিনাগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মা’র কবরের পাশেই তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

এদিকে, তার মৃত্যুতে নির্বাচনী এলাকা রাণীনগর-আত্রাইসহ জেলা সদরেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয় নেতার মুখখানা এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকেই গ্রামের বাড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। সকলের চোখেমুখে ছিল শোকের ছায়া।

ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে বিকেল ৩টার দিকে তাঁর লাশ নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় আনা হয়। সেখান থেকে লাশবাহী গাড়ীযোগে জন্মভূমি ঝিনাগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তাঁর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিকেলে বাদ আছর ঝিনা ঈদগাহ ময়দানে দুই দফায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজায় নওগাঁ জেলা সদর আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল, সাবেক এমপি আব্দুল মালেক, জেলা প্রসাশক হারুন অর-রশিদ, পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান, রাণীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, আত্রাই উপজেলা চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ এলাকার দলীয় নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রসাশন এবং সর্বস্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। 

এসময় বক্তারা বলেন, সদা হাস্যোজ্জল এ ব্যক্তিটি সব সময় গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা লালন করতেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে ছিলেন নিবেদিত। সন্ত্রাসের জনপদকে সন্ত্রাসমুক্ত ও মাদকমুক্ত করতে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি অত্যন্ত বিদ্যানুরাগী ছিলেন। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য  নিয়মিত কোর্স করে অনেক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে টক শো-তে অংশগ্রহণ করে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহী ছিলেন তিনি। অসময়ে উনার চলে যাওয়ায় দেশের বিশেষকরে নওগাঁর অপূরণীয় ক্ষতি হলো। 

তার মৃত্যুতে নওগাঁ জেলা, রাণীনগর, আত্রাই উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন, বিএনপি, নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব, রাণীনগর প্রেসক্লাব ও সান্তাহার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুস, কিডনি এবং ডায়াবেটিসজনিত নানা রোগে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন এমপি ইসরাফিল আলম। এরমধ্যে তার মা এসেদা রহমান মারা যাওয়ায় তিনি আরো ভেঙ্গে পড়েন। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তার শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ১৪ জুলাই তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৫ জুলাই করোনার ফলাফলে তার নেগেটিভ আসে। 

বাসায় আনার পর ১৭ জুলাই আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জুলাই রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই তাকে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়। তিনদিন লাইফসাপোর্টে থাকার পর সোমবার (২৭ জুলাই) সকালে মারা যান তিনি। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এমপি ইসরাফিল আলম তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকুরী করার সময় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ইসরাফিল আলম আওয়ামী লীগের মনোয়নয়ন নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি জোটের মন্ত্রী আলমগীর কবীর-এর কাছে পরাজিত হন। এই সময় রাণীনগর-আত্রাই এলাকা ছিল রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত। 

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন শ্রমিক নেতা মো: ইসরাফিল আলম। চাকুরী ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। নির্বাচিত হবার পর থেকে শক্তহাতে সর্বহারা ও জেএমবি দমন করেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে আবারও বিএনপি জোটের প্রাথী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ৩য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসরাফিল আলম। 

এছাড়া তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনাগ্রামে ১৯৬৬ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আজিজুর রহমান ছিলেন এলাকার কৃষক আন্দোলনের নেতা।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি