ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

করোনা: মিলল না কবরের জায়গা, নদীর তীরে দাফন

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:১৪, ২ জুন ২০২০

নওগাঁর বদলগাছীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান নাসিমা বেগম (২৫) নামের এক নারী পোশাক শ্রমিক। তবে লাশ দাফনে বাধা দেয়াসহ কবরের জায়গাটুকুও কেউ দেয়নি। শেষে সোমবার (১ জুন) দুপুরে পুলিশের সহযোগিতায় নদীর তীরে সরকারি জায়গায় তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। 

মৃত নাসিমা বেগম উপজেলার বিলাশবাড়ি ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের মাসুদ আলীর মেয়ে।

জানা গেছে, নাসিমা বেগম দীর্ঘদিন থেকে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপর জ্বর ও সর্দি নিয়ে গত ২৩ মে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে ৩১ মে দুপুরে  তাকে বগুডা শহীদ জিযাউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকলে ওইদিন  রাতে ৯টার বগুডার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয। 

পরে সেখানে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই নারী। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায নিহতের মরদেহ গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয় গ্রামবাসী। এরপর রাত ৩টার দিকে লাশ গ্রামে নিয়ে আসলে গ্রামবাসী বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় লাশ গ্রামে প্রবেশ করলেও কবর দেওযার কোন জায়গা দেয়া হয়নি। 

এরপর বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় পুলিশ সদস্য ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সোমবার দুপুরের দিকে তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে বাঁধের পাশে নিহতের দাফন সম্পন্ন করেন।  জানাজায় ইমামতি করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম আইয়ুব আলী।

এসআই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে গ্রামবাসীরা বাধা দিয়েছিল। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রামে কোন কবরস্থান নেই। এমনকি নিহতের বাবার বাড়িভিটা ছাড়া কোন জমি নেই। নিহতের মামার জায়গা থাকলেও তারা দেননি। এমনকি গ্রামবাসীর থেকে জায়গা কিনে নেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এলাকাবাসী রাজি হননি। এরপর বিকল্প জায়গা হিসেবে সরকারি জমিতে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কবর খুঁড়তে যে কোদাল ও সরঞ্জাম দরকার গ্রামবাসীরা তা দিয়েও আমাদের কোন রকম সহযোগিতা করেননি। পরে পুলিশ সদস্যরাই কবর খুঁড়ে লাশটি দাফন করা হয়।’ 

বিলাশবাডী ইউনিয়ন পরিষদ চেযারম্যান ছাইদুর ইসলাম কেটু বলেন, ‘ওই তরুণী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানার পর গ্রামবাসী লাশ দাফনে বাধা দেয় এবং কবরস্থানে লাশ দাফনের জায়গায় দেয়া হয়নি। এমনকি নিহতের আত্মীয়-স্বজনরাও না। রাতেই নিহতের আত্মীয-স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। নিহতের স্বজনরা তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করতে দেয়নি। পরে রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায দাফন করেছে পুলিশ।’

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির বলেন, ‘ওই নারী দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় থাকতেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর ফলাফল জানা যাবে। তবে নিহতের পারিবারিক এবং সরকারি কোন কবরস্থান না থাকায় পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনের মাধ্যমে সরকারি জায়গায় যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।’

এআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি