ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪

কে এই রবার্ট ক্লাইভ, তাকে নিয়ে কেন এতো বিতর্ক?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:১৪, ১৬ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৯:১৬, ১৬ জুন ২০২০

রবার্ট ক্লাইভ ও তার মূর্তি

রবার্ট ক্লাইভ ও তার মূর্তি

বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে লর্ড ক্লাইভের নাম। ক্লাইভ এ উপমহাদেশে আসেন কেবলই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক পুঁচকে এজেন্ট হিসেবে, ব্রিটিশ সরকারের কেউ হিসেবে না, কিন্তু চলে যাবার সময় ছিলেন একজন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার! তারই একক কৌশলে ডিভাইড-অ্যান্ড-রুল নীতিতে ভারতবর্ষই জয় করে নেয় ব্রিটিশরা। দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল একটা অংশ অর্থাৎ বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তান অঞ্চল 'অধিকার' করার জন্য তাকেই কৃতিত্ব দেয় ব্রিটিশরা। দাবার ঘুঁটির মতো একের পর এক চাল দিয়ে ভারতবর্ষের ধনীতম রাজ্য বাংলার দখল কীভাবে নিলেন ক্লাইভ, যে বাংলা তখন ব্রিটেনের চেয়েও ধনী ছিল? 

চলুন জেনে নেই, সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম নেয়া রবার্ট ক্লাইভের উত্থানের কাহিনী, কিন্তু পতন কি হয়েছিল তার? হলেও কীভাবে?

১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের শ্রোপশায়ার (Shropshire) কাউন্টির উত্তরাংশের মার্কেট ড্রাইটোন (Market Drayton) নামক শহরের ক্লাইভ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট। তার বাবার নাম ছিল রিচার্ড ক্লাইভ এবং মায়ের নাম রেবেকা গ্যাসকেল ক্লাইভ। রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন তার পিতামাতার ১৩টি সন্তানের মধ্যে (৭ কন্যা ও ৬ পুত্র) বড়। শৈশবে তিনি তার খালার কাছে প্রতিপালিত হন। রবার্টের ৯ বছর বয়সে তার খালার মৃত্যু হয়।

সম্রাট হেনরি চতুর্থ-এর আমলে ক্লাইভ পরিবারের একটি ছোট জমিদারি ছিল। তার বাবা তাকে প্রথমে মার্কেট ড্রাইটোন গ্রামার স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে, পরে তার বাবা তাকে লণ্ডনের মার্চেন্ট টেইলরস স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য বহিস্কৃত হলে তাকে হার্টফোর্ডশায়ারের একটি স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। এই স্কুল থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হন। স্কলারশিপ না পাওয়ায় তার পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এই সময় তিনি নিজের মতো করে লেখাপড়া করতে থাকেন।

রবার্টের বাবা তাকে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি-তে একটি লেখকের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। সেই চাকরি সূত্রে ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে তিনি জাহাজে করে ভারতে রওনা দেন। কিন্তু ওই জাহাজ মেরামতের জন্য ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও বন্দরে প্রায় ৯ মাস অবস্থান করে। এই সময় তিনি কিছুটা পর্তুগিজ ভাষা রপ্ত করতে সক্ষম হন। উল্লেখ্য, সেকালের ভারতে বিদেশী বণিকরা অল্পবিস্তর পর্তুগিজ ভাষা ব্যবহার করতো। ভারতে তার এই ভাষা বিশেষ কাজে লেগেছিল। জাহাজ মেরামত হওয়ার পর, উত্তমাশা অন্তরীপে তাদের জাহাজ কিছুদিন অবস্থান করে। অবশেষে তাদের জাহাজ যখন মাদ্রাজ উপকূলে পৌঁছায়, তখন তার কাছে খরচ করার মতো কোনো অর্থ ছিল না। ফলে জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে তিনি চড়া সুদে ঋণ নেন। ভারতে পৌঁছে তিনি প্রথমেই তেমন কাজ জোগাড় করতে পারেন নি। কথিত আছে, এই সময় তিনি দুই বার আত্মহত্যা করার চেষ্টাও করেছিলেন।

সে সময়ে বর্তমান চেন্নাই-এর কাছে মাদ্রাজপত্তম নামক ছোট্ট গ্রামে কোম্পানির সেন্ট জর্জ নামক একটি দুর্গ ছিল। ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে এই দুর্গে পৌঁছান। তিনি কোম্পানিতে লেখালেখির পাশাপাশি নানা ধরণের কাজে দুই বছর কাটান। 

ভারতে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফ্রেন্স ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানী এবং ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়ার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব ছিল। তারই জের ধরে, ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ নৌসেনারা ফরাসি নৌবহরের উপর আক্রমণ চালায়। এই অবস্থায় ফরাসি নৌসেনারা ফরাসি গভর্নর জেনারেল ডুপ্লেইক্স (Governor-General Dupleix)-এর কাছে অতিরিক্ত সৈন্যের জন্য আবেদন করে। এরপর ১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর লা বুরদনাইস  (La Bourdonnais) -এর নেতৃত্বে ফরাসি বাহিনী সেন্ট জর্জ দুর্গ আক্রমণ করে। কয়েকদিনের যুদ্ধের পর ব্রিটিশ বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ফরাসিরা বন্দী ইংরেজদের পণ্ডিচেরীতে স্থানান্তরিত করে। এই সময় ক্লাইভও ফরাসিদের হাতে বন্দী হন। লা বুরদনাইস ক্ষতিপূরণ নিয়ে মাদ্রাজ ইংরেজদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে। মাদ্রাজ আক্রমণের আগে, ডুপ্লেইক্স কর্ণাটকের নবাব আনওয়ার উদ্দিনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, দখলকৃত মাদ্রাজ তাঁর কাছে হস্তান্তর করবে। যুদ্ধ জয়ের পর, এ নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকলে, নবাব ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে ১০ হাজার সৈন্য পাঠান। যুদ্ধের প্রথমাবস্থায় ফরাসিরা পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত ফরাসি বাহিনী জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। ফলে ইংরেজ ও নবাবের সৈন্যদের বিরুদ্ধে জয়লাভের সূত্রে ডুপ্লেইক্স ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের স্বপ্ন দেখতে থাকে। ৯ নভেম্বর ডুপ্লেইক্স-এর অধীনস্থ সেনাদল মাদ্রাজে প্রবেশ করে। সে সময়ে পণ্ডিচেরীতে বন্দী ইংরেজদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই সাথে মাদ্রাজ থেকে সকল ইংরেজদের বহিস্কার করা হয়। অন্যান্য ইংরেজরা ফরাসিদের আনুগত্য মেনে নিলেও ক্লাইভ এবং কতিপয় ইংরেজ কর্মকর্তা তা মেনে নিতে পারেন নি। ফরাসিদের কাছে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি ছদ্মবেশে পণ্ডিচেরী থেকে পালিয়ে ইংরেজদের ফোর্ট ডেভিড-এ চলে যান। এ সময় এই দুর্গের অধিপতি ছিলেন মেজর স্ট্রিঙ্গার লরেন্স (Major Stringer Lawrence)। ক্লাইভের যুদ্ধপরায়ণ মনোবৃত্তিতে মেজর লরেন্স মুগ্ধ হন। ১৭৪৮-১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দক্ষিণ ভারত এবং হায়দ্রাবাদে স্থানীয় নবাব, ফরাসি এবং ইংরেজ বাহিনীর ভিতর ক্ষমতা দখলের যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তার অনেক ঘটনার সাথেই ক্লাইভ জড়িত ছিলেন না। এই সময় তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন। এই কারণে তাঁক বঙ্গদেশে পাঠানো হয়েছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়েছিল ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে। এরপরই ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। তাকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর প্রথম গভর্নর নিযুক্ত করা হয়েছিল ১৭৫৮ সালে। ইংরেজ ইতিহাসবিদ লরেন্স জোন্স তার “দ্য মেকিং এন্ড আনমেকিং অব ব্রিটিশ রাজ’ বইতে লিখেছেন, “বাংলা সেসময় ছিল ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ, ঘনবসতিপূর্ণ এবং উর্বর অঞ্চল। 

সেখানে কত লোক তখন বাস করতো সঠিক কোন তথ্য না থাকায়। ক্লাইভের মতে দেড় কোটি, কিন্তু যা আসলে এর থেকে অনেক কম অথবা অনেক বেশি ছিল। ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলার এক পঞ্চমাংশ মানুষ মারা যায় বলে ধারণা করা হয়। রবার্ট ক্লাইভ এবং তার উত্তরসুরী বৃটিশ শাসকদের শাসনের প্রত্যক্ষ ফল ছিল এই দুর্ভিক্ষ। ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যান ১৭৬০ সালে ৩৪ বছর বয়সে। ততদিনে তিনি ইংল্যান্ডের অন্যতম বিত্তশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্লাইভ ইংল্যান্ডে অবস্থান করেন এবং নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার কার্যক্রম চালিয়ে যান। এই বৎসরে নন-গ্র্যাডুয়েট ক্লাইভকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডিসিএল ডিগ্রি প্রদান করেন। ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি Knight of the Bath উপাধি পান।

তিনি এমপি নির্বাচিত হন শ্রুসবারি থেকে। মেয়রও হন পরবর্তীতে। তাকে ‘ব্যারন ক্লাইভ অব পলাশী’ উপাধি দেয়া হয় দুই বছর পর। ক্লাইভ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলার গভর্নর হয়ে আসেন ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর কোম্পানি বাৎসরিক ৫৩ লক্ষ টাকা বাৎসরিক বৃত্তি প্রদানের বিনিময়ে বাংলার নবাব নাজিম-উদ-দৌলাকে রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। তিনি পুলিশ ও বেসামরিক শাসনভার নবাবের হাতে অর্পণ করেন কিন্তু সামরিক শাসনভার কোম্পানির কাছে রাখেন। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন। আর এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। ক্লাইভের এই ব্যবস্থাকে ইতিহাসে দ্বৈতশাসন বলা হয়। 

১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কিছুদিনের জন্য তিনি প্যারিসে কাটান। এরপর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি বাগান এবং বাড়ি ক্রয় করেন। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে পার্লামেন্টে তদন্ত করার বিষয় উত্থাপিত হয়। ভারতে ক্লাইভ কিভাবে এত অর্থ উপার্জন করেন সে বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু পার্লামেন্টের ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়। এই বৎসরেই তিনি Order of the Bath-এ অর্থ লগ্নি করেন এবং শ্রোপশ্যায়ারে লর্ড লেফট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পান।

১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে (বাংলা ১১৭৬) বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি হয়। ফলে বাংলাদেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ইতিহাসে একে বলা হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এই মন্বন্তরে ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গদেশে বিপুল পরিমাণ লোক মৃত্যুবরণ করে। ফলে ক্লাইভ এবং কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে পার্লামেন্ট আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এ সময় পার্লামেন্টে হৈচৈ পড়ে যায় ভারতে ক্লাইভের অপশাসন, দুর্নীতি, লুন্ঠন নিয়ে। তদন্তও হয় তার বিরুদ্ধে। ভারতীয় নেতাদের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঘুষ নেয়ার জন্য তদন্তে তার সমালোচনা করা হয়, তিনি তাদের ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করেছিলেন। নানা অভিযোগে জর্জরিত; এরকম ঘৃণিত একজন ব্যক্তি কীভাবে ইংল্যান্ডে পুনর্বাসিত হলেন এবং হোয়াইটহলের মতো জায়গায় তার স্মারক মূর্তি বসানো হলে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ঐতিহাসিক উইলিয়ার ডালরিম্পল।

রবার্টের শেষ পরিনতি
১৭৬৭ সালে অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের ১০ বছর পর ক্লাইভ ইংল্যান্ড ফিরে যান। তিনি ভারত ছেড়ে চলে গেলেও রেখে যান অনেক কিছুই। যেমন- ঘুষ, দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, দুর্বৃত্তায়ন আর অপরাজনীতির এক জঘন্য ইতিহাস। তার দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, ১৭৭২ সালে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একরকম বাধ্য হয়েই তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেন। তার দুর্নীতির তথ্য একে একে বের হতে থাকে। তখন তিনি সম্পদের মায়া ছেড়ে দিলেন, আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে তিনি সব সম্পদের বিনিময়ে তদন্ত বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। সম্মান রক্ষার জন্য করুণ আর্তনাদ জানান। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। তদন্ত চলতে থাকে নিজস্ব গতিতে। 

দুই তথ্য ফাঁসকারী জানিয়েছিলেন, ক্লাইভের শাসনে তার অধীনে বাংলার ধ্বংস ও সম্পদ লুণ্ঠনের মাত্রা কেমন ছিল।   হোরেস ওয়ালপোলে লিখেন, “আমরা খুন করেছি, ক্ষমতাচ্যুত করেছি, লুণ্ঠন করেছি এবং দখল করেছি। ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বিধানের কারণে বাংলার দুর্ভিক্ষে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু’ সম্পর্কে আপনাদের কী ধারণা?”

তার পরই ক্লাইভ আত্মহত্যা করেন। কোনও সুইসাইড নোট লিখে যাননি ক্লাইভ। তবে তার আত্মহত্যার পিছনে বহুল প্রচারিত মতটিকেই উদ্ধৃত করে স্যামুয়েল জনসন লিখেছেন, “(ক্লাইভ) এমন সব অপরাধের মাধ্যমে তার ভাগ্য গড়ে তুলেছিলেন, যেগুলো সম্পর্কে তার চৈতন্য শেষমেশ তাকে নিজের গলা কাটতে বাধ্য করেছিল।”

তাকে সমাহিত করা হয়েছিল রাতের বেলা গোপনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তার কবরে পরিচিতিমূলক কোনও ফলক বা চিহ্নও রাখা হয়নি। ১৭৭৪ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ক্লাইভ যখন আত্মহত্যা করেন, তিনি তখন ইংল্যান্ডের অন্যতম ঘৃণ্য ব্যক্তিদের একজন। ব্যাপকভাবে নিন্দিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি।

১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ক্লাইভ। প্রচলিত আছে যে, আত্মহত্যার জন্য তিনি নিজের শরীরে ছুরি চালিয়ে দেন বা নিজেই নিজের গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেন বলে। যদিও তার পরিবার একথা অস্বীকার করেন। কেউ কেউ প্রচার করেন, অতিরিক্ত আফিম বা মাদক গ্রহণ অথবা হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু ঘটে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে।

এদিকে, বিশ্বজুড়ে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে একের পর এক দাস ব্যবসায়ী এবং কৃষ্ণাঙ্গ হত্যাকারীদের সঙ্গে জড়িতদের মূর্তি অপসারণ করা হচ্ছে। কোনো মূর্তি লেকে, কোনোটা নদীতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি আমেরিকা আবিষ্কারক ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মূর্তির শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র হোয়াইট হলের ডাউনিং স্ট্রিটের পেছনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা রবার্ট ক্লাইভের মূর্তিটিও সরানোর দাবি উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে ব্রিটেনের নামকরা লেখক-ইতিহাসবিদরাও এ দাবি জানাচ্ছেন। তাদের একজন উইলিয়াম ডালরিম্পল। 

ক্লাইভের মূর্তি অপসারণের পক্ষে গার্ডিয়ানে লেখা এক কলামে বেশ জোরালো ভাষায় তার যুক্তি তুলে ধরেছেন ডালরিম্পল। ব্রিটিশ সরকারের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কীভাবে ক্লাইভের মতো ব্যক্তির মূর্তি এখনও আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, ক্লাইভ এমন কোনো ব্যক্তি নন, যাকে আমাদের এ যুগে সম্মান জানানো উচিত। অ্যাডওয়ার্ড কোলস্টোনের (ব্রিস্টলের দাস ব্যবসায়ী) মূর্তি উপড়ে ফেলা হয়েছে। এখন সময় এসেছে ক্লাইভের মূর্তিটিও জাদুঘরে পাঠানোর। ব্রিটেনের যে অন্ধকার অতীত ইতিহাস, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা জানাতে কাজে লাগবে এটি। বর্ণবাদী এ ব্যক্তিকে ভারত ও ব্রিটেন উভয় দেশই ঘৃণা করে।

এসইউএ/এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি