ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

গাছ লাগানোর এখনই সময়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪১, ২৯ জুন ২০২১

অনেক দিন ধরে ভাবছেন, বাড়ির সামনে গাছ লাগালে কেমন হয়! আবার একটা ছাদবাগানও করার ইচ্ছা। তেমন ইচ্ছা থাকলে এখনই চারা সংগ্রহ করে রোপণ করুন। কারণ জুন-জুলাই মাস হচ্ছে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে। বাগান তৈরির আগে তাই প্রথমেই মানসম্মত চারা সংগ্রহ করুন।

ভালো চারা ও সংগ্রহের স্থান
চারা রোপণের আগে আদর্শ ও মানসম্মত চারা নির্বাচন করা জরুরি। যাঁরা নার্সারি করেন তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে চারা সংগ্রহ করুন। আদর্শ চারার বৈশিষ্ট্য হলো কাণ্ড মোটা, খাটো এবং মূলের বৃদ্ধি সুষম হতে হবে। তা ছাড়া সঠিক বয়সের এবং রোগমুক্ত, সতেজ ও সুস্থ-সবল চারা সংগ্রহ করতে হবে। বিশ্বস্ত সরকারি বা বেসরকারি নার্সারি থেকে চারা কিনতে হবে। ঢাকায় দুই শ’ মতো নার্সারি রয়েছে। তবে রাজধানীর আগারগাঁও নার্সারি মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিস থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৪০টি নার্সারি আছে। ফুল, ফল, সৌন্দর্যবর্ধনকারী লতা-গুল্ম, ওষধি বৃক্ষ, বনসাইসহ এখানে পাওয়া যায় টব, কীটনাশক, জৈব সার, মাটি, উপকরণসহ গাছের পরিচর্যাবিষয়ক বই।

চারা রোপণের স্থান
আলো-বাতাস যেখানে কম পড়ে সেখানে ভালো মানের চারা লাগালেও অনেক সময় ভালো ফলন পাওয়া যায় না। তাই রোপণের সঠিক স্থান বাছাই চারার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির দক্ষিণ পাশে কম ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। যাতে করে দক্ষিণের বাতাস ঘরে আসতে পারে। সুপারি, নারকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদিগাছের চারা লাগানো যেতে পারে। আবার মাঝারি ও উঁচু ঝোপালো গাছ বাড়ির পূর্ব-পশ্চিমে লাগাতে হবে। এতে সকাল-সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় আলো থাকবে। আম্রপালি, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন গাছ লাগানো যায়। তবে বসতবাড়ির উত্তর পাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরীতকী, আকাশমণি, বাঁশ ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

রোপণ পদ্ধতি
চারাকলম লাগানোরও বেশ কিছু নিয়ম আছে যেমন- মাটির মধ্যে কতটুকু পুঁতবেন, লাগানোর সময় কোনো ডাল-পাতা ছেঁটে দেবেন কি না অথবা নার্সারি থেকে কিনে এনেই চারাটি লাগাবেন কি না ইত্যাদি। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চারাকলম লাগালে ওগুলো ভালো থাকে। যেমন- কলম করে সাথে সাথেই বাগানে রোপণ করা চলবে না। তা করলে গাছ রোপণজনিত আঘাতে মরে যেতে পারে এবং কলমের জোড়া খুলে যেতে পারে। সে জন্য কলম করার অন্তত কয়েক মাস পরে তা রোপণ করা ভালো। রোপণ করার আগে চাষ ও মই দিয়ে বাগানের মাটি সমতল করে নেয়া উচিত।

রোপণের আগে অবশ্যই দূরত্ব ঠিক করে নকশা করে নেয়া উচিত। গ্রীষ্মেই এ কাজ করে ফেলতে হবে। রোপণের অন্তত ১৫ দিন আগে গর্ত তৈরি করে সার মাটি ভরে রাখতে হবে। গর্ত প্রতি ৫-১০ কেজি গোবর সার, ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০-২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫-১৫০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

রোপণের কয়েক দিন আগে চারা বা কলম সংগ্রহ করে হার্ডেনিং করতে হবে। এ জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় কয়েক দিন চারাকলম শুইয়ে রেখে পাতা ঝরাতে হবে। মাঝে মাঝে গোড়ার মাটির বলে ও গাছে হালকা পানির ছিটা দিতে হবে। এতে গাছের রোপণোত্তর মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।

লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চারাকলমের গোড়ার মাটির বলটি ভেঙে না যায়।  মাটির টবে বা পলিব্যাগে চারাকলম থাকলে কিছুটা পানি দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হবে। এরপর টব মাটিতে কাত করে গড়িয়ে এবং পলিব্যাগ গড়িয়ে বা দুই হাতের তালু দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেপে নরম করে নিতে হয়। টব বা পলিব্যাগের চারাকলমের গোড়ায় হাত দিয়ে চেপে ধরে সম্পূর্ণ চারা বা কলমটি উল্টো করে ধরে টব বা পলিব্যাগ ওপরের দিকে টান দিলে বা টবটির কিনারা শক্ত কোনো জায়গায় ধীরে ধীরে টোকা দিলে মাটির বলটি বেরিয়ে আসে এবং সেটি গর্তে স্খাপন করতে হয়। অবশ্য পলিব্যাগের চারাকলমের ক্ষেত্রে চাকু বা ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগের এক দিক কেটে অথবা মাটির টবটির চার দিক আস্তে আস্তে ভেঙে দিয়ে মাটির সম্পূর্ণ বলটি বের করে এনেও গর্তে বসানো যায়।

গর্তে বসানোর সময় চারাকলমের গোড়া টবে বা পলিব্যাগে যে পর্যন্ত গোড়ায় মাটি ছিল বা বাইরে ছিল সে পর্যন্তই বাইরে রাখতে হয়। এর বেশি পুঁতে দেয়া বা ওপরে রাখা কোনোটাই ঠিক নয়।

রোপণের সময় অতিরিক্ত পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। তবে এটি সতর্কতার সাথে করতে হয়, যেন চারাকলমের গাছটি আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। চারা কলম রোপণের পর গোড়ার মাটি কিছুটা চেপে দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিতে হয়।

চারাকলম যদি বড় হয় তবে এটিকে সোজা ও শক্ত রাখার জন্য গাছ থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে একটি খুঁটি পুঁতে একটু কাত করে সুতলী দিয়ে হালকাভাবে বেঁধে দিতে হয়। শক্ত করে বাঁধলে অনেক সময় চারাকলমের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ঝড়ো বাতাসে উপড়ে যাওয়া থেকে চারাকলমকে এই খুঁটি রক্ষা করে।

চারাকলমের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে বেড়া বা খাঁচার ব্যবস্থা করতে হয়। নতুন কুঁড়ি বা পাতা না আসা পর্যন্ত গাছে উপরি সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সময়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়।

ছাদবাগান
অনেকে বাসার ছাদ এমনভাবে তৈরি করে নেন, যেন বাগান করতে সুবিধা হয়। নিজের বাসা হলে তো নিজের ইচ্ছামতো সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পানি দেওয়া ও ভালো নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি