ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

টেলিফোন করলেই পৌঁছে যায় ইয়াবা

প্রকাশিত : ১৭:৪৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসায় নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে। শহর ঘরে ঘরে এখন ইয়াবা পৌছে যাচ্ছেন টেলিফোনের মাধ্যমে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতই তৎপর হচ্ছে তারাও ব্যবসা নিরাপদ করতে নিত্যনতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে।

এই অবস্থায় হিরোইন, ফেন্সিডিল হটিয়ে এখন জায়গা করে নিয়েছে ইয়ারার মতো মাদক বাংলাদেশে মাদক বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ও মাদকের অপব্যবহার বিরোধী তথ্য অভিযান বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে।

এর মাধ্যমে মাদক বিক্রি করা বা এ কাজে সহযোগিতা কতটা দণ্ডনীয় অপরাধ, কতজন শাস্তি পাচ্ছে, কতগুলো মামলা বিচারাধীন আছে, এসব তথ্য জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হবে। কিন্তুই বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, বাংলাদেশে এখন পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার মতো মাদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন মাদকসেবী বলছিলেন, ``ঢাকায় এখন সর্বত্রই মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাওয়া যায়। এক সময় এটি বিশেষ বিশেষ স্পটে পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সব এলাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। গ্রামে গঞ্জেও এটি ছড়িয়ে পড়েছে।

তার সঙ্গে যখন টেলিফোনে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি ঢাকার একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি ইয়াবা খেতেন। তবে তিনমাস নিরাময় কেন্দ্রে থেকে এখন অনেকটাই সুস্থ।

তিনি বলছেন, ``এ জন্য এমনকি আপনার যাওয়ারও দরকার নেই। এখন টেলিফোন করলেই আপনার কাছে এসে ইয়াবা দিয়ে যাবে। এখন এটা ঘরে থেকে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। কারণ এখন অনেকে পাড়া মহল্লায় ইয়াবার ব্যবসা করছে। যারা নেশা করে, তারাও টাকার জন্য যেমন নেশার পাশাপাশি বিক্রিতে নেমে পড়েছে, তেমনি অনেকে শুধুমাত্র বেচাবিক্রি করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুব একটা কিছু বলে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তির অভিযোগ, এমনটি প্রশাসনের লোকজন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের লোকজনও এর সাথে সরাসরি জড়িত থাকতে পারে, না হলে এত সহজে সবার সামনে ইয়াবা বিক্রি হয়, সবাই জানে কে বিক্রি করছে, কিন্তু বিক্রেতাদের কেউ ধরে না। কারণ এদের ব্যবসার ভাগ চলে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের পকেটেও। আবার কেউ কিনলে হয়তো তাকে আটকে টাকা আদায় করা হয়। তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তার পিতা এ সময় সঙ্গেই ছিলেন। তিনি জানালেন, ছেলে মাদকাসক্ত হয়েছে টের পাওয়ার পর থেকেই তারা ভোগান্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলছেন, পিতার কাছে সবচেয়ে কষ্টের হচ্ছে তার কাঁধে ছেলের মৃতদেহ। কিন্তু ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে সেই কষ্ট মনে হয় তার চেয়েও বেশি।

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মিয়ানমার থেকেই ইয়াবা বাংলাদেশে আসে, কিন্তু সেই দেশটির সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় সরকারিভাবে কয়েকটি নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও, বেসরকারিভাবে অনেক ক্লিনিক তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন এসব ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মুক্তি ক্লিনিক নামের একটি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ড. আলী আশকার কোরেশী বলছেন, ``একসময় আমাদের এখানে হিরোইন বা ফেন্সিডিল আসক্তরাই চিকিৎসা নিতে বেশী আসতো। কিন্তু এখন আমাদের এখানে যেসব রোগী আসে, তাদের বেশিরভাগই তরুণ আর প্রায় সবাই ইয়াবা আসক্ত। সুস্থ হতে অন্তত তিনমাসের চিকিৎসার পরেও, দীর্ঘদিন তাদের নজরদারিতে থাকতে হয়।`` বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১১ সালে মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৩৯৫টি, আসামি ছিল ৪৭ হাজার ৪০৩ জন। ২০১৭ সালে মামলার সংখ্যা ১ লাখ ছয় হাজার ৫৩৬ জন, আসামি এক লাখ ৩২ হাজার ৮৮৩ জন।

তারা বলছেন, ইয়াবা পরিবহনে সুবিধাজনক, দামও কম আর মিয়ানমার থেকে প্রচুর যোগান আসছে, এসব কারণে এই মাদকটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ, র‍্যাব অভিযান চালালেও, এটি দমনে সরকারের বিশেষায়িত একটি সংস্থাও রয়েছে।

দেশজুড়ে মাদকের এই বিস্তার স্বীকার করে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক তৌফিক আহমেদ  বলছেন, ``এটা ঠিক, এখন ইয়াবা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণে এটি আসছে আর লাভের আশায় অনেক বেকার যুবকরা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

তবে মাদকদ্রব্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলছেন, ``সীমিত লোকবল নিয়ে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে সবসময়েই অভিযান চালাচ্ছি। অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছে, অনেক মাদক উদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের মুল কারখানাগুলো ধ্বংস করতে না পারায় ইয়াবার মতো মাদক পুরোপুরি দমন করা যাচ্ছে না তিনি জানান, কয়েকবার মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কথা হয়েছে, কিন্তু তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এজন্য লোকবল বাড়ানো আর আইনে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

টিআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি