ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

তুচ্ছ মামলায় যত হেনস্থা!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২২:৫৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১

ছোট ছোট অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত আসামিকে আাদলতে হাজির করা হয়। বিকালে এসব আসামিকে ২শ’ থেকে হাজার টাকায় জরিমানা বা মুক্তি দিলেও টাউট দালালদের খপ্পরে পড়ে এদের মুক্তি মিলেনা। বরং তুচ্ছ মামলায় এসব আসামি বড় ধরণের হেনস্থার শিকার হোন। 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকা থেকে মো. রাসেল ও মো. আল-আমিন নামক দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (ডিএমপি এ্যাক্টের) অধীনে রাস্তার ওপর হৈ হুল্লুর, চিল্লাচিল্লি-চেচামেচি করে জনগণের পথ রদ, শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানো, ফুটপাতে কাঁচা বাজার বসানো। এসব ছোট ছোট ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর থানা থেকে ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের গারদ খনায় হাজির করা হয়। এভাবে রাজধানী থেকে প্রতিদিন শত শত আসামিকে হাজির করা হয় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। পরে বিকালে বসেই কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট এসব আসামিদের তাৎক্ষণিক অর্থদণ্ড বা একঘন্টা দাঁড় করে রাখাসহ বিভিন্ন দণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু এসব আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে আনার পর পরই বিভিন্ন দালাল শ্রেণী ও টাউট গারদ থানার সামনে ও ভেতরে অবস্থান নেয়। এসব আসামিও তাদের স্বনজদের সাথে যোগযোগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর আট দিনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এ কয়েকদিনে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (ডিএমপি এ্যাক্টের) অধীন প্রায় ৬৫০টি নিষ্পত্তি করেছে ঢাকার সিএমএম আদালত। সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নন, জি. আর শাখাসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি এ্যাক্টের অধীনে ৬৫০ জন আসামিকে ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে মামলা নিষ্পিত্তি করা হচ্ছে। এ আইনে সর্বোচ্চ ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার ব্রাক্ষণপাড়ার বাসিন্দা মো: রাসেল ও চাঁদপুরের বাসিন্দা মো. আল-আমিন ডিএমপি এ্যাক্টে আটক হন। তারপরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে তাদের আদালত জরিমানা করেন। জরিমানা দেয়ার পরে আদালত থেকে তারা মুক্তি পান। একইদিনে রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীচর থানার মো. ফারুক ও একই এলাকার বাসিন্দা মো. জহির আলী ওরফে শুভ গ্রেপ্তার হন। তাদের গ্রেপ্তারের পরে আদালতে ডিএমপি এ্যাক্টের মাধ্যমে হাজির করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের জরিমানা করে আদালত মামলা নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু এসব আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে তাঁদের জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে আসামিদের থেকে নাম্বার নিয়ে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে টাউটরা। এরপরেই তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় তাঁরা। ঢাকার অধস্তন আদালত অঙ্গনে এক শ্রেণির টাউট-দালালের ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে বিচারপ্রার্থীরা। ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে এসে আইনি সহায়তা নিতে গিয়ে টাউট-দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয় অনেকে। তাদের কারণে পেশাগতভাবে হয়রানির শিকার হন আইনজীবীরাও। 

জানা যায়, আসামির আত্মীয়স্বজনরা আইনজীবী নিয়োগ করার আগেই টাউট-দালালরা মামলার নাম্বার সংগ্রহ করে আসামির নাম-ঠিকানা লিখে ওকালতনামা (মামলা পরিচালনার সম্মতিপত্র) স্বাক্ষরের জন্য পাঠায়। এ সময় অনেক আসামি কিছু না বুঝে সেই ওকালতনামায় স্বাক্ষর করে দেয়। অন্যদিকে আসামির স্বজনদের নিয়োজিত আইনজীবীও ওকালতনামা স্বাক্ষরের জন্য গারদে পাঠান। সেখানেও আসামি স্বাক্ষর করেন। এরপর আদালতে শুনানি করতে গেলে দেখা যায় আসামির স্বাক্ষরিত ভিন্ন ভিন্ন আইনজীবীর দুটি ওকালতনামা। তখন বিপাকে পড়েন বিচারক। এ কারণে মামলায় একাধিক ওকালতনামা থাকায় বিচারক জামিন বা রিমান্ড শুনানি করতে চান না। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক তা নিষ্পত্তি করার জন্য ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে পাঠিয়ে দেন। ফলে আসামিদের জামিন বা রিমান্ড শুনানি করতে অনেক সময় লেগে যায়। এ সময় আসামিরা অযথা কারাগারে বিনাবিচারে আটকে থাকে। 

তারা আরও জানান, মামলার অভিযোগ যত বড় হোক না কেন, দুয়েকদিনের মধ্যে জামিন করিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে ও শতভাগ নিশ্চয়তার আশ্বাস দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর রাখে দালালরা। এরপরই শুরু হয় আসল প্রতারণা। এক সময় বছর ঘুরে এলেও আসামির জামিন আর মেলে না। অনেক সময় আইনজীবী নামধারী টাউটদের সঙ্গে বিচারপ্রার্থীর স্বজনদের হাতাহাতির মতো ঘটনাও আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেছে। একশ্রেণির টাউট-দালাল কালো কোট-টাই পরে আইনজীবী সেজে আদালতপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা করে আসছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির টাউট-দালাল উচ্ছেদ কমিটির সদস্য সচিব একেএম সালাউদ্দিন জানান, বর্তমানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে আহ্বায়ক করে সমিতির ২৩ সদস্যের টাউট-দালাল উচ্ছেদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা কয়েকশ’ টাউট-দালালকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। আটকদের মধ্যে প্রায় চারজনকে প্রতারণার অভিযোগে নিয়মিত মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করেছি। পাশাপাশি এক থেকে দুশ’ জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।
  
আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি