ঢাকা, শুক্রবার   ০৬ জুন ২০২৫

দেশের গণমাধ্যম প্রেস স্বাধীনতার অপব্যবহার করছে : প্রেস সচিব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:০৮, ৫ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেস স্বাধীনতার অপব্যবহার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) নিজের ভেরিফাইড পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেস স্বাধীনতার অপব্যবহার। দেশের প্রখ্যাত কিছু পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল প্রায়ই গুরুতর ভুল তথ্য প্রকাশ করে, অথচ বেশিরভাগ সময়েই এসব ভুলের কোনো সংশোধনী প্রকাশ করা হয় না। অনেকে সংশোধন করতে বাধ্য হয় শুধুমাত্র সরাসরি চাপের মুখে পড়লে, তাও ন্যূনতম মাত্রায়।

গতকালের আলোচিত মুক্তিযুদ্ধার পরিচয়ের বিষয় নিয়ে তিনি লিখেন, ‘গতকাল সকালে শেখ মুজিবুর রহমান এবং চারজন মুক্তিযোদ্ধার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূমিকা নিয়ে একটি ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বহু সংবাদমাধ্যম ভুল সংবাদ প্রকাশ করে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করেছি ভুল তথ্য সংশোধন করে দিতে, অথচ অধিকাংশ মিডিয়া দীর্ঘ সময় পরও সেই ভুল রিপোর্ট সরায়নি। কিছু সংবাদমাধ্যম আবার দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করেনি। এতে ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বহু জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠে যায়।

এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘একইদিন রাতে দেশের অন্যতম একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম মানবিক করিডোর ইস্যুতে একটি ভয়াবহ অনুবাদ ভুল করে। আমরা বারবার বলার পরও যে এমন কোনো প্রস্তাব বা ঘোষণা ছিল না, তারা ভুলভাবে একটি শীর্ষস্থানীয় জাতিসংঘ কূটনীতিকের বক্তব্য উপস্থাপন করে। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। নামী-দামী রাজনীতিবিদরাও ভুল অনুবাদের উপর ভিত্তি করে সরকারের কাছে জবাব চাইতে শুরু করেন। পরে পত্রিকাটি নিরবে প্রতিবেদন থেকে ভুল অংশ মুছে দেয়, কিন্তু সংশোধনের কথা জানায়নি, ফলে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা বিভ্রান্তই থেকে যান। এমনকি আমাকে মধ্যরাতে ডয়চে ভেলে বাংলাকে ফোন করে বলাতে হয়েছে তারা যেন ভুল সংশোধন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতিদিনই সামাজিক ও প্রচারমাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া খবর মোকাবেলা করতে হয়। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে, কেবল এ বিষয়টি সামাল দিতে অন্তত ২০০ জনের একটি দল প্রয়োজন। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো- প্রভাবশালী মানুষ, বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরাও যাচাই না করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেন, যার কোনো জবাবদিহিতা নেই। ভুয়া খবরের বাস্তব পরিণতি রয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার পেছনেও ভুল তথ্য ও গুজবের ভূমিকা ছিল, যা এখনো আমাদের জন্য বড় মানবিক ও পররাষ্ট্রনীতি সংকট। গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি বৈধ সরকারের বিরুদ্ধেও সহিংসতা উসকে দিতে পারে।’

শফিকুল আলম আরও লেখেন, ‘একজন গবেষক একবার বলেছিলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যার পেছনেও ডাল-ভাত কর্মসূচি নিয়ে ছড়ানো বিভ্রান্তি ভূমিকা রেখেছিল। বিশ্বজুড়েই ভুল তথ্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা হত্যাকাণ্ডের কারণ হয়েছে- ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও।’

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোতে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য গণমাধ্যমকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। উদাহরণ হিসেবে, ফক্স নিউজ মিথ্যা তথ্য প্রচারের দায়ে ৭৮৭.৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিল। ব্রিটেনে নিয়মিতভাবে সংবাদপত্রগুলো মানহানির মামলায় জরিমানা গুণছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক টিভি উপস্থাপক ও বিশ্লেষক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাদের ব্যস্ত সময়সূচির কারণে অনেক সময় খবর যাচাই করার সুযোগ থাকে না, আবার শাস্তি না থাকার কারণে সত্য যাচাইয়ের তাগিদও থাকে না। যখন মিথ্যা বলার কোনো শাস্তি থাকে না, তখন কেউই আর সত্য যাচাইয়ে সময় ব্যয় করতে চায় না।’

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি