নতুন করোনাভাইরাস আসলে কি?
প্রকাশিত : ১২:৩৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২০
চলতি মাসেই এক বছর পূর্ণ হচ্ছে বিশ্বকে থামিয়ে দেয়া করোনা ভাইরাসের। যার শুরুটা হয়েছিল এশিয়ার দেশ চীনের হুবেই প্রদেশে। দেশটিতে বর্তমানে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব।
ঘটনা এমন যেন চীন ও গোটা বিশ্ব আলাদা দুটি পৃথিবী। যে ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ১৭ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে। হানা দিয়েছে বিশ্বের পৌনে আট কোটি মানুষের দেহে। যার তাণ্ডব থামাতে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। যার শুরুটা হয়েছে ব্রিটেন দিয়ে।
কিন্তু সেই ব্রিটেনে সম্প্রতি করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে প্রকোপ দেখা দিয়েছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের। যার তাণ্ডব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে। এমতাবস্থায় জারি করা হয়েছে লকডাউন।
এমনকি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেই জানেন না, এটি আসলে কি ধরনের ভাইরাস? এর উপসর্গই বা কী রকম?
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদলানো নতুন কিছু নয়। চলমান করোনাভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ংকরভাবে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে।
গত মাসে দেখা গিয়েছিল, লাখ লাখ মিংক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আবার স্পেনে একটি নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, যা ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওই ভাইরাস মূল করোনা ভাইরাসের থেকে মারাত্মক নয়।
কিন্তু এবার যুক্তরাজ্যে গত সপ্তাহে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, তা আগের থেকে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে এই ভাইরাসে মানুষের অসুস্থতা আরো জটিল চেহারা নিচ্ছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ‘নতুন ধরনের করোনাভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতি করোনা বিস্তার লাভ করছে।’ খবর ডয়েচে ভেলের।
ভাইরাসটি যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। লন্ডনে নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসটির কবলে পড়েছেন।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রোববারই এক হাজার ১০০ জন নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রমেই তা আরও বাড়ছে। ভাইরাসটি প্রথম উৎপত্তি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এদিকে নতুন ভাইরাসকে আটকাতে প্রধানমন্ত্রী জনসন লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছেন। গত শনিবার তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।’
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধরনের ভাইরাসকে আটকানো কঠিন। কারণ, এই ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্যে এখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে। এখন আশি বছরের বেশি বয়সীদের এই প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে।’
এদিকে নতুন ধরণের এবং অধিক সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। স্থানীয় সময় গতরাত এগারোটা থেকে ফ্রান্স ৪৮ ঘন্টার জন্য ব্রিটেনের সাথে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
এর ফলে ব্রিটেনের ইংলিশ চ্যানেলের তীরবর্তী ডোভারের ফেরি ও টানেল দিয়ে পার হয়ে সকল গাড়ি ও ট্রাকের ফ্রান্সে ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে দু-প্রান্তেই অসংখ্য গাড়ি ও ট্রাক আটকা পড়েছে। এছাড়া জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক এবং কানাডা যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর নেতারা আজ এক বৈঠকে ব্রিটেনের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতও যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে শেয়ারবাজারে। তা ছাড়া ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামেও পতন ঘটেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’
এআই/এসএ/