ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪

‘নির্বাচিত হলে বেসিসের নিজস্ব ভবন তৈরি করব’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০৬, ২ মে ২০২৪

ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের সিইও লিয়াকত হোসাইন

ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের সিইও লিয়াকত হোসাইন

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে  প্রত্যেকটি বাণিজ্য সংগঠনেরই স্বতন্ত্র ও আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন, গুণগতমানসস্পন্ন ইন্টারনেট সেবা, অফিস আদালতের কাজ স্মার্টলি করতে কম্পিউটার, সফটওয়্যার অটোমেশন সিস্টেম। বিদেশি আয় বৃদ্ধিতে প্রয়োজন ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং। ডিজিটাল এ সময়ে ই-কমার্সতো রয়েছেই। মোদ্দাকথা, প্রত্যেকেটি খাতই  অন্যটার সঙ্গে যুক্ত। আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রস্তুত করতে পাঁচ সংগঠনকে একটা সম্মিলিত লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুসারে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবেই নিজের পরিকল্পনাগুলো বলছিলেন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের সিইও লিয়াকত হোসাইন। 

নিউজেন টেকনোলজি লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং লানার্স ক্যাফে, স্কুল অব লিডারশীপ ও জিপিএস ৭১-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা লিয়াকত। এছাড়াও বেসিস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এইচআর ডেভেলমেন্টের কো-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা আইটি উপ-কমিটির সদস্য, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি, ওরাকল ইউনিভার্সিটির পার্টটাইম সিনিয়র ট্রেইনার ও বেসিস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন স্টার্টআপের মেম্বার।

দীর্ঘ আলাপে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির সমসাময়িক হালচালসহ আসন্ন বেসিস নির্বাচনের নানান দিক। আলাপের কিছু অংশ পাঠকদের উদ্দেশে এখানে তুলে ধরা হলো।  

দেশের সফটওয়্যার খাতের  প্রকৃত অবস্থা কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  আমাদের দেশের মানুষ মেধাবী। তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের তরুণরা ভালো করছে।  তাদের প্রতিভা আছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আছে, আমাদের অবকাঠামো মোটামুটি  প্রস্তুত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনও যথাযথ পেশাদারিত্বে পৌঁছাতে পারিনি। সফটওয়্যার সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন ক্রেতা চাহিদা এবং বিক্রেতার সরবরাহকৃত সেবার মাঝে এখনও  বোঝাপড়ার সমস্যা রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত সফটওয়্যারগুলোর স্থানীয়ভাবে প্রচারের এবং ক্রেতাদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে আমাদেরদুর্বলতা আছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন দায় রয়েছে, তেমনি দেশীয় পণ্যে ব্যবহারের প্রতি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের রয়েছে অনাগ্রহ।  আবার যারা ভালো করছে বা বিশ্ববাজারে পণ্যসেবা সরবরাহ করছে তাদেরকেও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। শ ও বিশ্ব, দুই বাজারেই আমাদের যে খুব ভালো অবস্থান, তা নয়। তবে ভালো করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে নির্ধারিত ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে লিয়াকত হোসাইন বলেন, আমরা এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাত। সরকার এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে রফতানি আয় ২ বিলিয়নেরও কম। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এটাকে ৫ বিলিয়নে উন্নীত করা আমাদের স্বপ্ন। আর একটা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করলে উৎসাহ বাড়ে। এই খাতের ব্যাবসায়ীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করে তাদের মেধাকে কাজে লাগাবার যোগ্যতা ও অর্জন করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের সাথে সাথে তার সঠিক ব্যবস্থাপনাটা ও জরুরি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় বাকি মাত্র ১ বছর। এই সময়ে এটা বাস্তবায়ন করা একটু কঠিনই হবে তবে অসম্ভব নয়।  

বিদেশি সফটওয়্যারের আধিপত্য-  দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? এনিয়ে লিয়াকত হোসেনের মন্তব্য ছিলো,  আমাদের স্থানীয় সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী যেসব কোম্পানি রয়েছে, তাদের অনেকেরই কাজের মান আন্তর্জাতিক কোম্পানির চেয়ে কোন অংশে কম না। বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা আন্তর্জাতিক গুণগতমানসম্পন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিতে বিক্রি করেছে। একই সাথে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাইরের দেশ থেকে সফটওয়্যার আনছে। আমার মতে, যেসব সফটওয়্যার আমরা তৈরি করতে পারি না, যেমন, ডাটা বেইজড অটোমেশন, ব্যাংকিং সফটওয়্যার, এগুলো দেশের বাইরে থেকে আনতে পারি। তবে এর আনুপাতিক হারটা বেশি হওয়া ঠিক না। আমাদের আমদানির হার আর রফতানির হারের মধ্যকার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হবে। খুব বেশি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়া আমাদের দেশীয় শিল্পের জন্য অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

নেতৃত্বে আসলে বেসিসে কি ধরনের পরিবর্তন আনবেন? এ প্রশ্নে লিয়াকত হোসাইন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে টিমওয়ার্কে বিশ্বাসী। তাই সদস্যরা যদি মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে সংগঠনের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ দেন, তাহলে আমার প্রথম ইচ্ছা একটি সক্রিয় এবং সুশৃংখল কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা। কারণ একটি কমিটি তখনই তার সর্বোচ্চটা দিতে পারে, যখন প্রতিটি সদস্য কাজ করার বা মতামত দেবার সুযোগ পায়। 

দ্বিতীয়ত, ঢাকার আশপাশে কোথাও বেসিসের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ শুরু করার চেষ্টা করবো। তৃতীয়ত, বেসিসের সদস্যদের জন্য কল্যাণ তহবিল চালু করা। চতুর্থত, দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক আউটসোর্সিং করার সুযোগ তৈরি করা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রাতিষ্ঠানিক আউটসোর্সিং করার সুযোগ রয়েছে। যেটা আমাদের দেশে নেই। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক তবে  সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আউটসোর্সিং করার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে উঠেনি। আমি এ জায়গাটাতে কাজ করতে চাই। 

পঞ্চমত, সারাদেশের হাইটেক পার্কে সদস্যদের জন্য অফিস বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। 

ষষ্ঠত, বেসিস সদস্যদের জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভ সহজীকরণ করার চেষ্টা করবো। সফটওয়্যার সেবায় কর্পোরেট ভ্যাট ও করমুক্ত করার চেষ্টা করবো। সপ্তমত, নারী সদস্যদের জন্য বেসিস নারী উদ্যোক্তা ওয়ানস্টপ সলিউশন ডেস্ক চালু করবো। অষ্টমত, সদস্যদের এমপ্লয়ী ডাটাবেইজ তৈরি করবো।

যদি কার্যনির্বাহী পরিষদে না আসেন, তখনও কি এসব কাজ করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত মেয়াদে কার্যনির্বাহী পরিষদে না থেকেও আমি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার ভালবাসা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এটা করেছি। কার্যনির্বাহী পরিষদে থাকলেই যে ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করা যায়, এমনটা নয়। বাইরে থেকেও অনেক কাজ করা যায়। ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কাজ করার জন্য দরকার একটা সুন্দর মানসিকতার। যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা যদি কাজ করবার সুযোগ দেন আমি অবশ্যই আমার সেরাটুকুই করবো।

নির্বাচিত হলে বেসিসকে কোন স্তরে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে লিয়াকত হোসাইন জানান, বেসিস আজকে যে অবস্থানে এসেছে তা একদিনে আসেনি। অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত চেষ্টা, চিন্তা-ভাবনা, ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রমের ফসল আজকের এই অবস্থান। আমার বিশ্বাস, আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের অন্যতম সফটওয়্যার আউটসোর্সিং গন্তব্য। আর এর নেতৃত্বে থাকবে বেসিস। আমি একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে বেসিসকে একটা কার্যকর সম্মানজনক বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে দেখতে চাই।

/আআ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি