পদত্যাগ করাতে হাসিনার পা ধরে ছিলেন রেহানা : তাজুল ইসলাম
প্রকাশিত : ১৭:১৩, ২৫ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রোববার (২৫ মে) এক চাঞ্চল্যকর তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। প্রতিবেদনে তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক সংকটের চূড়ান্ত পর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে রাজি করাতে তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়। এমনকি শেখ হাসিনার পা পর্যন্ত ধরেন শেখ রেহানা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘শেষ মুহূর্তেও বলপ্রয়োগ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা। ৪ আগস্ট সকালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের গণভবনে ডেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। তবে বাস্তবতা অনুধাবন না করেই তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর পর, বিশেষ করে শেখ রেহানার অনুরোধ এবং বিদেশে থাকা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফোনালাপের পরই তিনি পদত্যাগে সম্মত হন। এরপর দ্রুত পদত্যাগ করে গোপনে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।
প্রসিকিউশনের দাখিল করা তদন্ত নথিতে বলা হয়, ওইদিন সকালে আন্দোলনকারীরা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানকে গণভবনে ডেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে বলপ্রয়োগ করেও আন্দোলন থামানো সম্ভব নয়। এরপর সেনা কর্মকর্তারা শেখ রেহানাকে আলাদা কক্ষে নিয়ে গিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং তাকে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে বলেন।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনা পদত্যাগের আগে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রেকর্ড করতে চাইলেও তখনই গোয়েন্দা রিপোর্ট আসে, শাহবাগ ও উত্তরা থেকে বিশাল মিছিল গণভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তাকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে গণভবন ত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।
দ্রুততার সঙ্গে তেজগাঁও হেলিপ্যাডে গিয়ে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ওঠেন। পরে বঙ্গভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বেলা আড়াইটায় ভারত সীমান্ত অভিমুখে দেশ ত্যাগ করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শেখ হাসিনার হেলিকপ্টার ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর যুক্তরাজ্য যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে চার দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নানা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা ক্ষমতায় থাকা এই নেত্রীর শেষ অধ্যায় রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলন, জনবিক্ষোভ ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্য দিয়ে রচিত হয়।
এসএস//
আরও পড়ুন