ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুরো নয়তলা ভবনই ছিল সম্রাটের দখলে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২৮, ৬ অক্টোবর ২০১৯

ক্যাসিনোকাণ্ডে র‌্যাবের হাতে সম্রাটের আটক হওয়ার পর রাজধানীর কাকরাইলস্থ নয় তলা ভূইয়া ট্রেড সেন্টার নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। যেখানে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অফিস ছাড়া আর কিছুই নেই। নির্মাণাধীন ওই ভবনের চতুর্থ তলাজুড়েই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সম্রাটের অফিস। 

রোববার সন্ধ্যায় র‍্যাবের অভিযানের সময় দেখা যায়, ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ছোট ছোট কার্যালয়। এছাড়াও ছিল সম্রাট ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছবির ছড়াছড়ি। আর ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষে পাওয়া যায় একটি বিশেষ ধরনের চেয়ার। অনেকটা রাজিকীয় সে চেয়ার সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলেই জানিয়েছে র‍্যাব।

অন্যদিকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলার দক্ষিণের অংশটি নির্মাণাধীন। যেখানের ফ্লাটগুলোতে এখনও কোনও কাজই করা হয়নি। বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর আবর্জনা পড়ে রয়েছে সেখানে।

এছাড়া ভবনের ছাদের দক্ষিণ দিকে তৈরি করা হয়েছে একটি মনোরম বাগান। যে বাগানটি সম্রাটই তৈরি করেছিলেন বলে জানা গেছে। যেখানে রয়েছে কলাগাছসহ বিভিন্ন ছোট ছোট গাছ। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি কৃত্রিম পাহাড়ি ঝর্ণাও।

ছাদের উত্তর পাশে দৃশ্যমান দারুণ একটি কক্ষ। যে কক্ষে রয়েছে একটি বেড, এটাচড বাথরুম। তার পাশে আরেকটি কক্ষে রাখা হয়েছে একটি টেবিল। বাগানের পূর্বপাশে একটি বড় হল রুমও দেখতে পাওয়া যায়।

রাজিকীয় ওই ছাদে ওঠার সিঁড়িটাও কিন্তু একটু ভিন্ন। ভবনের পশ্চিম কোণে একটি সরু সাইজের সিঁড়ি দিয়ে ওই ছাদে উঠতে হয়। ছাদের এই পুরো আয়োজনকে ‘সম্রাটের বাংলো’ বলেই অভিহিত করেন অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব সদস্যরা। 

তবে কেবল ছাদই নয়, পুরো নয়তলা ভবনটাই ছিল সম্রাটের দখলে। সেখানে অন্য কারও বসবাস বা কারও অফিস করার জো ছিল না বলেই জানা গেছে। দিনের একটি বড় সময় এই অফিসে কাটাতেন সম্রাট। সেখানে তার অনুসারী যুবলীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

এদিকে, আশরাফ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি নয় তলা ওই ভবনটির মালিক বলেই সাংবাদিকদের জানান রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম। তবে তার সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য দিতে পারেননি ওসি মাইনুল। 

ওসি জানাতে না পারলেও নয়তলা ভবন সম্পর্কে জানা যায় সম্রাটের স্ত্রী শারমিন চৌধুরী বক্তব্য থেকে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, যে ফ্লোরে সম্রাটের অফিস সেটিই শুধু তার। কিন্তু ওই ভবনে ঢুকতে কড়া চেকের মধ্যে পড়তে হয় বলেই সেখানে আর কেউ উঠতে সাহস করেনি।

এদিকে, রোববার ভোর রাতে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারের পর দুপুরে সম্রাটকে নিয়ে ওই কার্যালয়ে অভিযানে যায় র‌্যাব। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই কার্যালয় থেকে সম্রাটকে নিয়ে বের হন র‌্যাব সদস্যরা। এসময় সম্রাটের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

এছাড়াও দুটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও দুটি লাঠি পাওয়া গেছে সেখানে। সেগুলো নির্যাতন করার কাজে ব্যবহার করা হত বলে ধারণা র‌্যাব কর্মকর্তাদের। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র‌্যাবের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, অভিযানের সময় সম্রাটের বিরুদ্ধে ‘তিন ধরনের অপরাধের আলামত’ পেয়েছেন তারা। এর একটি বন্যপ্রাণী আইনে, বাকি দুটি মাদক ও অস্ত্র আইনে।

ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া মাদক ও অস্ত্র পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে আরও দুটো মামলা করা হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি