ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনের চুড়ান্ত রুপ পায় ফেব্রুয়ারি মাসে

প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | আপডেট: ১৬:১৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

আজ পহেলা ফেব্র“য়ারি। শুরু হলো গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের মাস। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা চূড়ান্ত রূপ পায় বায়ান্নের এই মাসে। ২১ শে ফেব্র“য়ারি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর হাতে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেন রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অনেকে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় মায়ের ভাষা বাংলা। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে দেশভাগের বছর সাতচল্লিশেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সংগ্রাম শুরু রাজপথে। গনপরিষদেও ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের এমন প্রস্তাবে ছিল পূর্বপাকিস্তানের সদস্যদের সমর্থন, পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরোধীতা। আন্দোলনের মুখে মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের দাবি মানলেও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ এর মার্চে ঢাকায় এসে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার ঘোষণায় ফুঁসে উঠে ছাত্র-জনতা। জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীও বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার দাবি নাকচ করেন। তিনি খুন হলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে এই বাংলারই সন্তান খাজা নাজিমুদ্দিনও ১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারী ঢাকায় উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেন। ২৯ জানুয়ারী প্রতিবাদ সভার পর ৩০ জানুয়ারী ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘটের সময় ছাত্রসহ রাজনীতিকরা সিদ্ধান্ত নেন, ২১ শে ফেব্র“য়ারী প্রদেশব্যাপী হরতালের। পরের দিন মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়। কারাগার থেকে বার্তা পাঠিয়ে আন্দোলনকে আরো বেগবান করেন শেখ মুজিবুর রহমান। চলে গনসংযোগ, অর্থসংগ্রহ, পোষ্টার-ব্যানার লেখার কাজ। হরতালের আগের দিন বিকেলে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণার পরপরই মতদ্বৈততা তৈরি হয় রাজনীতিক ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে। রাজনীতিকরা ৫৪ সালের নির্বাচন বন্ধের ভয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরোধীতা করলেও ছাত্ররা রাতেই হলে গোপন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা মিছিল নিয়ে স্বারকলিপি দেবেন এ্যাসেম্বলিতে। ঐতিহাসিক ২১ শে ফেব্র“য়ারীর সকালেই আজকের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সেসময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্র-ছাত্রীরা জড়ো হতে থাকে। মায়ের ভাষা বাংলার জন্য নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজপথে নামার দৃপ্ত প্রত্যয়। একেকটি দলে ভাগ হয়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙ্গার এক পর্যায়ে লাঠিচার্জ শুরু হয়। তখন ছাত্র-জনতা নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে বানের স্রোতের মত এগিয়ে যায় জাতির গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির পথে। চলে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর গুলি, রক্তে লাল হয় রাজপথ। মা-মাটি-মায়ের ভাষার জন্য শহীদ রফিক, শফিক, জব্বার সালাম, বরকতসহ কয়েকজনের নাম জানা গেলেও অনেকের লাশ গুম করে পুলিশ। সহযোদ্ধাদের মৃত্যু ভাষা সংগ্রামীদের দাঁড় করিয়ে দেয় বিপ্লবের সামনে। ২২ শে ফেব্র“য়ারী সর্বস্তরের মানুষের ঠিকানা হয় ঐতিহাসিক আমতলা। ঐদিনও গুলিতে প্রাণ হারায় অনেক মানুষ। তাদের জীবন উৎসর্গের ফলে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় মায়ের ভাষা বাংলা। তারই ধারাবাকিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি