ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

জাপানে বাংলাদেশিদের গবেষণা

বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে হিমাগার!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৫৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

বিদ্যুৎ শক্তির পরিবর্তে তাপ ও সৌরশক্তি ব্যবহার করে হিমাগারের পরিচালনার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন জপানে অধ্যয়নরত একদল বাংলাদেশি গবেষক। ইতিমধ্যেই আবিষ্কারটি ‘হাল্ট প্রাইজ জাপান ন্যাশনাল’ বিজয়ী হয়েছে। গবেষকদের প্রত্যাশা, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষকেরা কম খরচে হিমাগারের সুবিধা পেতে পারবেন।

গবেষক দলে রয়েছে— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এম এল পলাশ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র তাহমিদ হাসান রুপম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মাহবুবুল মুত্তাকিন। তারা সবাই জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিদ্যুৎ বরণ সাহার অধীনে গবেষণাটি করছেন। অধ্যাপক বিদ্যুৎ বরণ সাহা জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্বন–নিউট্রাল এনার্জি রিসার্চের মূখ্য গবেবষক।

গবেষকদের একজন আমিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যে সব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা হিমাগার সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয় তার চারটি প্রধান অংশ হচ্ছে – ইভ্যাপোরেটর, কম্প্রেসর, কনডেনসার ও এক্সপ্যানসন ভালভ। এই চারটি অংশের ভেতরে প্রবাহিত হয় রেফ্রিজারেন্ট ( এক ধরণের তরল পদার্থ)। চার অংশে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই তরল একবার বাষ্পে আবার তরলে পরণত হয়; প্রক্রিয়াটি অনবরত চলতে থাকে। প্রক্রিয়াটি চলার সময় সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় কম্প্রেসরে, যা পুরো হিমাগারে ব্যবহৃত বিদ্যুতের প্রায় ৯০ শতাংশ।

আমিরুল ইসলাম বলেন, তাদের গবেষণার ফল অনুযায়ী এই কম্প্রেসরের একটি বিকল্প তৈরি করা হবে। এটি ব্যাটারির সেলের মতো লোহা বা স্টিলের তৈরি বেড (প্রকোষ্ঠ) হতে পারে। এই বেডে সিলিকা জেল, অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, জিওলাইট, ওয়াক্কানাই সিলিসিয়া বালুর মতো পদার্থ ব্যবহার করা হবে। এই পদার্থগুলো তরল থেকে তৈরি হওয়া জলীয় বাষ্প শোষণ করবে। এরপর এই প্রকোষ্ঠকে ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হবে। তাপমাত্রার কারণে প্রকোষ্ঠের মধ্যে চাপের পরিবর্তন হবে। এক সময় জলীয়বাষ্পগুলো কনডেনসারে গিয়ে শীতল তরলে পরিণত হবে।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রকোষ্ঠটি (বিকল্প কম্প্রেসার) উত্তপ্ত করার জন্য যে তাপ শক্তি প্রয়োজন হবে তা গ্রামের ইট ভাটা, বেকারির চিমনী, বা সৌরশক্তি থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আর যেখানে এর কোনটিই সম্ভব না সেখানে মানুষের রান্নার চুলা থেকে বর্জ্য তাপ সংগ্রহ করেও কাজ চালানো যাবে ।

গবেষক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, স্বল্প খরচে কৃষকেরা যাতে হিমাগারের সুবিধা পেতে পারেন—এটি তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য। অধ্যাপক বিদ্যুৎ বরণ সাহার তত্বাবধানে তাদের গবেষণা দলটি বিদ্যুৎবিহীন কম্প্রেসর সুবিধা সংবলিত হিমাগারের ধারণাটি হাল্ট প্রাইজ জাপান ন্যাশনালে উপস্থাপন করে। ২৩টি দলের মধ্যে তাদের দলটি বিজয়ী হয়।

প্রসঙ্গত, হাল্ট প্রাইজ ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এর কর্ণধার। তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তা অনুসন্ধানে কাজ করে এই ফাউন্ডেশন। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরা তরুণ উদ্যোক্তা বাছাই করা হয়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এ বছরের বিষয় ছিল, ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে প্রাকৃতিক/কৃত্রিম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে এক কোটি মানুষের জীবনধারা কিভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব? এই প্রতিযোগীতার চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের জন্য জাপানের প্রতিনিধি খুঁজে বের করার দায়িত্ব ছিল হাল্ট প্রাইজ জাপান ন্যাশনালের বিচারক দলের।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি