ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিবর্ণ সমাজে শিশুরাও আজ ভয়ঙ্কর!

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৯:৩৪, ৮ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৯:৫৪, ৮ জুন ২০২০

শিশু ফাহিম

শিশু ফাহিম

কিছু একটা খাওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে বাবা ও মায়ের কাছে ৫টা টাকা বায়না ধরে সাত বছরের শিশু ফাহিম। কিন্তু তারা সে সামান্য বায়না পূরণ করতে পারেনা বাবা-মা কেউই। উপরন্তু শিশুটিকে চড়-থাপ্পর মেরে শাসায় এবং দূরে সরিয়ে দেন তারা। আর এতেই ঘটে যায় হিতে বিপরীত।

বায়নার টাকাটা না পেয়ে এবং উল্টো মার খেয়ে খেপে যায় সাত বছরের শিশুটি। ক্ষিপ্ত হয়ে সে সামনে পাওয়া তরকারি কাটার হাসুয়া দিয়েই আঘাত করে মায়ের বুকে। অবুঝ শিশু ফাহিমের হাসুয়ার কোপে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মা ফাতেমা (২৫)। আর মাকে রক্তাক্ত দেখে পার্শ্ববর্তী ফুপুর বাড়িতে ছুটে পালিয়ে যায় শিশুটি। সোমবার (৮ জুন) সকাল ৮টার দিকে রাজশাহীর দামকুড়া থানার বেড়পাড়া পূর্বপাড়ায় ঘটে এমনই এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। 

পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে এবং তাকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বর্নানা দেয় সে। শিশুটির বর্ননানুযায়ী দামকুড়া থানার ওসি মাজহুরুল ইসলাম জানান, সকালে শিশু ফাহিম বাবা এবং মা দুজনের কাছেই পাঁচটা টাকা চায়। কিন্তু তারা কেউই টাকা দেয়নি। উল্টো তাকে চড় থাপ্পর দিয়ে শাসন করে। এ সময় সে ক্ষিপ্ত হয়ে তরকারি কাটার হাসুয়া দিয়ে মায়ের বুকে আঘাত করে। এতে মায়ের বুক থেকে রক্ত বের হতে দেখে সে ভয় পেয়ে ফুপুর বাড়ি চলে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মা ফাতেমার মৃত্যু হয়। 

ওসি আরো জানান, শিশু ফাহিমকে আমরা কোলে নিয়ে আদর করেই ঘটনা জানতে চেয়েছি। সে সাবলীলভাবেই ঘটনার বর্ননা দিয়েছে। সে বলেছে যে, "এখন তো মা মরে গেছে, কি করবো বুঝতে পারছি না।" পুলিশও ঘটনার বর্ণনা শুনে হতবাক। শিশুটিকে গ্রেফতার করা হবে না। তবে, কি পদক্ষেপ নেয়া হবে তা ভাবা হচ্ছে।

এদিকে, ঘটনাটি বেশ আলোড়ন তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ঘটনার মূল বিবরণ ও শিশুটির ছবি প্রকাশ করে অনেকেই লিখছেন- ‘ভয়ংকর শিশু’ শিরোনামে। আবার অনেকেই অবিহিত করছেন ‘বিপজ্জনক’ শব্দ ব্যবহার করে। কেউ কেউ আবার শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন। 

কেউ লিখছেন, ওর চোখে তো এখনো আগুন! কোনো সিনেমাতেও হয়তো ছোট বয়সে ক্রাইমের সিন দেখা যায়। কিন্তু সেটা তো কোনো প্রতিবাদে করে। কিন্তু এটা কী?? আবার কেউ বলছেন, তাকে শিশু শোধনাগারে নেয়া উচিৎ। কিন্তু পুলিশ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায়।

আসলে, এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা বর্তমান গোটা সমাজেরই একটা আংশিক চিত্র মাত্র। আমাদের পুরো সমাজটাই এখন এমন হয়ে গেছে। পুরোটা বিষাক্ত না হলেও অনেকটাই ছেয়ে গেছে। লাজ-লজ্জা, আদব-কায়দা, ইজ্জত-সম্মান, আদর-স্নেহ, নীতি-নৈতিকতা লোপ পেয়েছে। সামাজিক ভালোবাসার পরিবর্তে গোটা পরিবেশ যেন হয়ে গেছে স্বার্থপরতা ও পরমত অসহিষ্ণু। বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। যার কারণে ঘটছে এমন সব ভয়ঙ্কর ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। 

তবে এই অবস্থার পরিবর্তনও ঘটাতে আমাদেরকেই, যুব সমাজকেই। এই অধঃপতিত সমাজকে সামগ্রিক ও যৌথ প্রচেষ্টায় জাগিয়ে তুলতে হবে এক অপার নিস্বার্থ, পরমতসহিষ্ণু, নীতি-নৈতিকতাপূর্ণ, সামাজিক ভালোবাসাময় এক সাবলীল সমাজে। যেখানে থাকবে না কোনও স্বার্থপরতা ও পরমত অসহিষ্ণু, থাকবে না কোনও হানা-হানি, মারামারি। থাকবে না উচু-নিচু, সাদা-কালো, ধনী-গরিব ভেদাভেদ। থাকবে শুধু অনাবিল শান্তি, বিরাজ করবে সুখময় পরিবেশ।

চলমান করোনাকালের অস্থিরতা ও সংকটকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যৌথভাবে মোকাবেলা করে ফিরিয়ে আনতে হবে সেই অনাবিল সম্ভাবনাময় পরিবেশ। আর সেটা অসম্ভব কিছুই নয়। কেননা, আমরা জাতি হিসেবে বীরের জাতি। বায়ান্ন থেকে শুরু করে একাত্তর এবং পরবর্তী নানা দুর্যোগেও তার বহু প্রমাণ মিলেছে। কোনও বিপদ ও দুর্যোগে এ জাতি পিছু হটে না, বরং লড়াই করেই টিকে থাকে এবং আছে। 

সুতরাং নিজেদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করে নীতি-নৈতিকতা, প্রভু ও তার সৃষ্টিপ্রেমের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে, অসহায়ের সহায় হয়ে, মনের যত কায়ক্লেশ দূর করে মানবতার মহান দৃষ্টান্তের সমাবেশ ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এক অনাবিল আনন্দমত সুখী সমাজ। তবেই অর্জিত হবে মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য।

লেখক- সাংবাদিক।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি