ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

বুনো কুকুর সংরক্ষণে অভিনব প্রকল্প

প্রকাশিত : ১৫:১২, ১৬ মার্চ ২০১৯

আফ্রিকার হিংস্র পশুদের মধ্যে বুনো কুকুর বেশ রহস্যজনক এক প্রাণী৷ সেই প্রজাতির অনেক আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের কথা অনেকেই জানে না৷ তাদের সংরক্ষণের এক বিশাল উদ্যোগ চলছে৷

আবহাওয়া ধীরে ধীরে একটু শীতল হলে জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ পূর্বে বুশল্যান্ড এলাকায় আবার জীবনের ছন্দ ফিরে আসে৷ দিনের বেলা উচ্চ তাপমাত্রা এড়াতে বুনো কুকুর ছায়ায় পড়ে ঘুমায়৷ বিকালের দিকে গোটা দল একত্রিত হয় ও তারপর সন্ধ্যায় শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে৷

এমন মোক্ষম সময় বেছে নিয়ে জেসিকা ওয়াটারমায়ার কুকুরদের দেখতে যান৷ প্রায় ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সাভে উপত্যাকায় আফ্রিকার বুনো কুকুরদের সুরক্ষার লক্ষ্যে এক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি৷ নিজের পেশাগত জীবন জুড়ে তিনি এই প্রাণীদের নিয়েই চর্চা করেছেন৷

জেসিকা বলেন, ‘এদেরকে আমরা ‘ফেস্টিভ প্যাক’ নামে ডাকি৷ কারণ তাদের শরীরে অত্যন্ত সুন্দর, স্বতন্ত্র ও রঙিন চিহ্ন রয়েছে৷ গোটা অভয়ারণ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কুকুরের পাল৷ বর্তমানে তাদের সংখ্যা ১১৷ শুরুতে ১২টি ছিল৷ তাদের ১৪টি শাবক ছিল, এখন মাত্র সাতটি অক্ষত রয়েছে৷ তারা দল হিসেবে বেশ সংগঠিত৷ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে কাজ করা সত্যি খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা৷’

আফ্রিকা মহাদেশে যে সব মাংসাশী প্রাণী হুমকির মধ্যে পড়েছে, বুনো কুকুর তাদের মধ্যে পড়ে৷ গোটা মহাদেশে বড়জোর ৭ হাজার প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে৷ সাভে উপত্যকা এই শিকারি প্রাণীদের জন্য অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল৷ টিকে থাকার জন্য তাদের অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়৷ ইম্পালা অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণই তাদের প্রধান খাদ্য৷

জেসিকা ওয়াটারমায়ার বলেন, ‘এগুলো আসলে খুব সামাজিক প্রাণী৷ তারা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে, পরস্পরের দেখাশোনা করে, শাবকের যত্ন নেয়৷ সিংহের মতো সামাজিক মাংসাশী প্রাণীর তুলনায় তারা খুবই অন্য রকম৷ বুনো কুকুররা শিকার করার পর সবার আগে শাবকদের খেতে দেয়৷ কেউ আহত হলে তার দেখাশোনা করে৷ তারা আহত কুকুরের কাছে মাংস নিয়ে যায়৷’

সাভে অভয়ারণ্য একাধিক বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে৷ বড় মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত শিকারের মাধ্যমে আয় হয়৷ সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়৷ চাষের কাজের জন্য সেখানে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি৷

অভয়ারণ্যের বাইরে অনেক এলাকায় ঝোপ কার্যত লোপ পেয়েছে৷ জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষবাস ও পশুপালনের জন্য জমির ব্যবহারও বাড়ছে৷ মানুষ ও বন্য প্রাণীর মধ্যে সংঘাতও বাড়ছে৷ কুকুরের পাল এর মধ্যে শিকার শুরু করে দিয়েছে৷ বিশাল আকারের কারণে গ্নু অ্যান্টিলোপ সামলাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়৷ তবে এ ক্ষেত্রে তরুণ শাবকদের শিকার শেখাতে এই প্রাণী কাজে লাগছে বটে৷

বুনো কুকুরদের জন্য বিপদের মাত্রা কতটা বেশি, পরের দিন তা বোঝা গেল৷ রেঞ্জার কাইন কোডদেভু টহল দেওয়ার সময় এক সহকর্মীর পাঠানো বেতার বার্তা পেলেন৷ একটি বুনো কুকুরের দেহ পাওয়া গেছে৷ রেঞ্জার ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারলেন যে পরিস্থিতি আসলে আরও উদ্বেগজনক৷

জেসিকা মনে করিয়ে দেন, ‘একমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই এই কুকুর পাওয়া যায়৷ পশু সংরক্ষণ আফ্রিকায় সফল হচ্ছে৷ তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রজাতির সংরক্ষণ আমাদের কর্তব্য৷ জিনগতভাবে তারা সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি৷ একবার তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না৷’

শাবকগুলো বড় হওয়া পর্যন্ত পালের বাকি কুকুরগুলো একসঙ্গেই থাকবে৷ বছরে একবার বুনো কুকুর বাচ্চার জন্ম দেয়৷ সৌভাগ্যবশত পালের প্রধান মাদি কুকুর প্রাণে বেঁচে গেছে৷ তা না হলে এই পাল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তো৷ কিন্তু তার স্থায়ী সঙ্গী বেঁচে না থাকায় চলতি বছর বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি