ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির তদন্ত নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১৫, ৩০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৩:২৩, ৩১ মে ২০১৮

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করেছেন হাইকোর্ট। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় হাইকোর্ট ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আড়াই বছরেও আলোচিত এ মামলার চার্জশিট জমা না দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তাদের সমালোচনাও করেন আদালত। বৃহস্পতিবার এ মামলার আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।   

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার আটজন তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বুধবার ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম। এর আগে গত ২৩ মে এ-সংক্রান্ত ৫৬টি মামলার আটজন তদন্ত কর্মকর্তা ও দুই তদারকি কর্মকর্তাকে আদালতে তলব করা হয়। তাদের মধ্যে আটজন বুধবার মামলার নথিপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হন।

আলোচিত এ দুর্নীতির মামলায় এদিন দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ মামুন মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আসামি ফজলুস সোবহানের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় তিনি দাবি করেন, বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।

এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কিছু বলতে চাইলে আদালত তার উদ্দেশে বলেন, এ ধরনের মামলার তদন্তে আড়াই বছর সময় নিলেন কেন? বোর্ডের অনুমোদন ছিল না, তাহলে কেন বোর্ডের একটা লোকও এলো না। বোর্ড তো গোটা ব্যাংকের জিম্মাদার।

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, `সবকিছু আমাদের যাচাই-বাছাই করে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর তদন্ত করতে হয়। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই।` 

তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আদালত বলেন, `এসব কথাবার্তা বলে কেন সময় নষ্ট করছেন। আমাদের এত পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনার কী হয়েছে?`

এ সময় বেঞ্চের একজন কনিষ্ঠ বিচারক দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, `একজন কৃষকের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার মামলা হলে তাকে কোমরে রশি বেঁধে আনা হতো। বেসিক ব্যাংকের ঋণ দুর্নীতির ঘটনায় জড়িতদের আনা হচ্ছে না। আপনাদের এ নির্লিপ্ততার কারণে মনে হচ্ছে, আপনাদের সঙ্গে তাদের ইন্টারনাল যোগাযোগ আছে।`

শুনানি শেষে বেরিয়ে এ প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হওয়ায় ব্যাখ্যা জানতে সংশ্লিষ্টদের আদালতে তলব করা হয়েছিল।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৫ সালে ১৫৬ জনকে আসামি করে মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। মামলার আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬ জন। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন ঋণগ্রহীতা ও সার্ভের দায়িত্বে থাকা ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ঋণের কাগজপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়াই জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া এবং অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে। ২০১০ সাল থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় মোট দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

তবে আসামি তালিকায় বাচ্চু ও তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গত বছর এ-সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি